Advertisement
E-Paper

কাশ্মীর দখল স্বপ্নই থাকবে, নওয়াজের জবাবে সুষমা

কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ করার জন্য অপেক্ষা করছেন বলে গত কাল জানিয়েছিলেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। আজ বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়ে দিলেন, শরিফের স্বপ্ন কোনও দিনই পূরণ হবে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৬ ০৩:২৩
কমেছে গোলমাল। তবু বিক্ষিপ্ত কিছু প্রতিবাদ চলছেই। শনিবার শ্রীনগরে। ছবি: রয়টার্স।

কমেছে গোলমাল। তবু বিক্ষিপ্ত কিছু প্রতিবাদ চলছেই। শনিবার শ্রীনগরে। ছবি: রয়টার্স।

কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ করার জন্য অপেক্ষা করছেন বলে গত কাল জানিয়েছিলেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। আজ বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়ে দিলেন, শরিফের স্বপ্ন কোনও দিনই পূরণ হবে না।

জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পরে অশান্ত উপত্যকায় ক্রমাগতই উস্কানি দিয়ে চলেছে পাকিস্তান। বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জেরও দ্বারস্থ হয়েছিল তারা। গত কাল পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে এক সভায় চরম উস্কানি দিয়ে শরিফ বলেন, ‘‘কাশ্মীর এক দিন পাকিস্তানের অংশ হবে। আমরা সেদিনের জন্য অপেক্ষা করছি।’’

এর পরে ভারতের তরফ থেকে শীর্ষ স্তরে জবাব দেওয়ার জন্য চাপ বাড়ছিল। সরকারি সূত্রে খবর, সরকারের অন্দরে আলোচনার পরে স্থির হয় বিদেশমন্ত্রীই জবাব দেবেন। আফগানিস্তানে উদ্ধার হওয়া জুডিথ ডিসুজার সঙ্গে দেখা করার পরেই সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন সুষমা। কিন্তু সকলকে অবাক করে মুখ খোলেন পাকিস্তান নিয়ে।

বিদেশমন্ত্রী সাফ বলেন, ‘‘ভারতবাসীর পক্ষ থেকে জানাতে চাই পাক প্রধানমন্ত্রীর কাশ্মীর দখলের স্বপ্ন জগৎ সংসারের অন্তিম দিন (কেয়ামাৎ) পূরণ হবে না। কাশ্মীর ভারতের অংশ। ভারতেই থাকবে। ’’

গত কয়েক দিনে বার বার কাশ্মীরিদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেছে পাকিস্তান। সেই প্রসঙ্গ টেনে সুষমা জানান, শরিফ কাশ্মীরিদের পাশে থাকার কথা বলছেন। কিন্তু তাঁর শুভেচ্ছা নয়, পাকিস্তানের পাঠানো জঙ্গি-অস্ত্রশস্ত্র উপত্যকাকে অশান্ত করে রেখেছে। তাঁর কথায়, ‘‘শরিফকে জানাতে চাই আপনারা কোনও দিনই ভূস্বর্গকে জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করতে পারবেন না।’’ সুষমার বক্তব্য, ‘‘বুরহান ওয়ানি হিজবুল জঙ্গি। তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নেতা, জওয়ানদের খুন করার অভিযোগ রয়েছে। আর এক জঙ্গি নেতা হাফিজ সইদের পাশে দাঁড়িয়ে শরিফ বুরহানকে স্বাধীনতা সংগ্রামী বলছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক।’’

পাকিস্তানকে কটাক্ষ করে বিদেশমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘যে দেশ নিজের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ট্যাঙ্ক, বোমারু বিমান ব্যবহার করে তারা ভারতের বাহিনীর আচরণ নিয়ে কথা বলছে। কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনী অত্যন্ত সংযমের সঙ্গে কাজ করছে।’’

গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ তুলনামূলক ভাবে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে কাশ্মীর। তবে দিল্লির প্রতি কাশ্মীরি জনমানসের একাংশ যে এখনও গভীর ভাবে বিরূপ তা আজ হাতেনাতে টের পেয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। রাজনৈতিক দল ও সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করে উপত্যকার পরিস্থিতি জানতে এ দিনই কাশ্মীরে এসেছেন তিনি। কিন্তু রাজনাথের সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকার করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি, বাহিনীর হাতে যখন সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছেন তখন কথা বলে কোনও লাভ নেই। কাশ্মীর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা সিরাজ আহমেদের কথায়, ‘‘ব্যবসা পরেও হতে পারে। কাশ্মীর এখন পুরোপুরি ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে। ২০১০ সালেও আমরা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। কোনও লাভ হয়নি।’’

আজ নেহরু গেস্ট হাউসে রাজনাথকে উপত্যকার সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা জানান আমলা ও পুলিশ অফিসাররা। তার পরে বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু ব্যবসায়ীদের বড় অংশই আসতে অস্বীকার করেন। আসেননি কংগ্রেস নেতারাও। সরকারি সূত্রে খবর, জম্মু-কাশ্মীর ওয়াকফ বোর্ডের ইমাম ও হাউসবোট মালিকদের একাংশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের মুখ ঢেকে অ্যাম্বুল্যান্সে চড়িয়ে নেহরু গেস্ট হাউসে আনা হয়। ধারেকাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি সাংবাদিকদের। পরে রাজ্যপাল এন এন ভোরা, সংখ্যালঘু কাশ্মীরি পণ্ডিত ও শিখ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আগামিকাল তাঁর সঙ্গে ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা।

তবে কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকায় নিজেদের অসন্তোষ এ দিনও গোপন করেননি ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা। তাঁর মতে, প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীর সামলাতে কোনও বড় উদ্যোগ শুরু করলে তাতে সাময়িক ভাবে উপত্যকায় পারদ নামতে পারে। কিন্তু সেই উদ্যোগ পরে ঠিক মতো কার্যকর হওয়া প্রয়োজন। ওমরের কথায়, ‘‘প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদম্বরম বলেছেন কেন্দ্র কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমি ওঁর সঙ্গে একমত।’’ ওমরের মতে, কিছু বিশেষ শর্তের ভিত্তিতে জম্মু-কাশ্মীর ভারতে যোগ দিয়েছিল। স্থির হয়েছিল মুদ্রা, যোগাযোগ, প্রতিরক্ষা, বিদেশনীতি স্থির করবে দিল্লি। বাকি সব বিষয় থাকবে রাজ্যের হাতে। সে সব শর্তপূরণ হয়নি।

বরং স্বশাসনের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে দিল্লি।

ওমরের কথাই আম কাশ্মীরির মনের কথা কিনা, সেটাই বুঝতে চাইছেন রাজনাথ।

Sushma Swaraj Kashmir
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy