Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

এমন মিছিল কবে হবে, প্রশ্ন রাজ্যে রাজ্যে

মহারাষ্ট্রে কৃষক সভার আয়োজনে ‘লং মার্চ’ শুধু রাজ্যের বিজেপি সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করিয়েই সাফল্য পায়নি। নাসিক থেকে মুম্বই পর্যন্ত প্রায় দু’শো কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পাড়ি দেওয়ার পথে কোথাও এক টুকরো অশান্তি ছড়ায়নি।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৮ ০৩:১৯
Share: Save:

পূর্বের ত্রিপুরা হতাশার গভীর অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিল। দশ দিনের মধ্যে পশ্চিমের মহারাষ্ট্র থেকে নতুন আলোর সন্ধান পেল সিপিএম! সঙ্গে সঙ্গেই তৈরি হল প্রত্যাশার চাপ!

মহারাষ্ট্রে কৃষক সভার আয়োজনে ‘লং মার্চ’ শুধু রাজ্যের বিজেপি সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করিয়েই সাফল্য পায়নি। নাসিক থেকে মুম্বই পর্যন্ত প্রায় দু’শো কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পাড়ি দেওয়ার পথে কোথাও এক টুকরো অশান্তি ছড়ায়নি। পরীক্ষার্থীদের অসুবিধে হবে বলে দীর্ঘ পথের ক্লান্তি নিয়েও রাতে আবার বাড়তি রাস্তা অতিক্রম করেছে কৃষক জনতা! মিছিলকারীদের মধ্যে কেউ কেউ মাথায় বয়ে বেড়িয়েছেন সৌর প্যানেল। যা থেকে প্রয়োজন মতো জ্বালানো হয়েছে আলো, চার্জ হয়েছে মোবাইল। মিছিল শেষে কৃষকদের ফিরে যাওয়ার জন্য মঙ্গলবার দু’টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিল রেল। কিন্তু কৃষকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, নিখরচার পরিষেবা চাই না। মিছিলের এই মনোভাবকেই কুর্নিশ জানিয়েছেন প্রায় সব দলের নেতা।

‘জয় কিসান আন্দোলনে’র নেতা যোগেন্দ্র যাদব বলেছেন, ‘‘কৃষক সভার লং মার্চ নৈতিকতার নতুন মাপকাঠি তৈরি করেছে। এই আন্দোলনের বিশেষত্ব সেখানেই।’’ বামপন্থী আদর্শ থেকে কয়েক আলোকবর্ষ দূরে থাকা শিবসেনার নেতা আদিত্য ঠাকরে মেনে নিয়েছেন, ‘‘ওঁদের সঙ্গে লাল পতাকা ছিল ঠিকই। কিন্তু পতাকার রং আমরা দেখিনি। রক্ত-মাংসের কিছু মানুষ তাঁদের কঠোর পরিশ্রমের জীবনের সঙ্গে যুক্ত দাবি আদায়ের জন্য এমন সুশৃঙ্খল ভাবে হেঁটে আসছেন, এটা অভাবনীয়!’’ বাইরের দলগুলির প্রশংসা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাম শিবিরের মধ্যে দাবি উঠতে শুরু করেছে, অন্যান্য রাজ্যেও এমন গণ-আন্দোলন করে দেখানোর।

আরও পড়ুন: আর সব রাজ্য পথে নামলে! ভাবনা মোদীর

কৃষক সভার পরবর্তী লক্ষ্য, যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে ‘প্রতিরোধ যাত্রা’ লখনউ নিয়ে যাওয়া। মহারাষ্ট্রের ছাত্র ও যুব সংগঠন আবার ২৩ মার্চ মুম্বইয়ে নজরকাড়া সমাবেশ করতে চায়। কৃষক সভার সর্বভারতীয় সভাপতি এবং মহারাষ্ট্র থেকে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অশোক ধওয়ালের কদরও বাড়ছে! নির্বাচনী রাজনীতিতে ভরাডুবির সময়ে রাস্তার লড়াইয়ের সাফল্যকে সামনে রাখতে চাইছেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বও। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি যে কারণে বলছেন, ‘‘বিচারের সময়ে ভগৎ সিংহকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তুমি কি হিংসায় বিশ্বাস করো? ভগৎ বলেন, না। তা হলে অ্যাসেম্বলিতে বোমা মারলে কেন? ভগৎ বলেছিলেন, একটা বোবা-কালা সরকারের কানে আওয়াজ পৌঁছনোর জন্য একটা বিস্ফোরণের দরকার ছিল। আমরাও বলছি, সরকার কথা না শুনলে গণ-আন্দোলনের বিস্ফোরণ ঘটবে!’’

সর্বত্র কি বামেরা সুশৃঙ্খল ‘লং মার্চে’র পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবে? ধওয়ালে বলছেন, সব বাম কর্মসূচিতেই যেমন বাধা পেলে বসে পড়ার কথা থাকে, এখানেও একই পরামর্শ ছিল। আর কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লার সংযোজন, ‘‘শাসকের আচরণের উপরে আন্দোলনের চেহারা নির্ভর করে। বাংলায় দু’টো বড় কৃষক জাঠায় তৃণমূল অসভ্যতা করেছিল। দেখা করেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা। মহারাষ্ট্রে ফডণবীস অন্তত পালাননি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE