Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
National News

গোয়া কংগ্রেসে বিদ্রোহের অবস্থা, ঝড়ের মুখে নেতৃত্ব

নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরাসরি অপদার্থতার অভিযোগ তুলে দিলেন গোয়ার কংগ্রেস বিধায়কেরা। নবনির্বাচিত বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বসে এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক তথা গোয়ার পর্যবেক্ষক দিগ্বিজয় সিংহ প্রবল ঝড়ের মুখে পড়লেন।

দিগ্বিজয় সিংহ— তাঁর ‘অপদার্থতা’তেই গোয়ায় সরকার গড়তে পারল না কংগ্রেস, বিধায়কদের অনেকেই তেমনই মনে করছেন। —ফাইল চিত্র।

দিগ্বিজয় সিংহ— তাঁর ‘অপদার্থতা’তেই গোয়ায় সরকার গড়তে পারল না কংগ্রেস, বিধায়কদের অনেকেই তেমনই মনে করছেন। —ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৭ ১৫:৩৭
Share: Save:

নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরাসরি অপদার্থতার অভিযোগ তুলে দিলেন গোয়ার কংগ্রেস বিধায়কেরা। নবনির্বাচিত বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বসে এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক তথা গোয়ার পর্যবেক্ষক দিগ্বিজয় সিংহ প্রবল ঝড়ের মুখে পড়লেন। বিজেপির থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া সত্ত্বেও যে ভাবে নেতৃত্বের তৎপরতার অভাবে গোয়ায় সরকার গড়তে পারল না কংগ্রেস, তার জন্য দিগ্বিজয়কেই দায়ী করেছেন একাধিক বিধায়ক। বিদায়ী বিধানসভায় যিনি বিরোধী দলনেতা ছিলেন, সেই বিশ্বজিৎ রাণে নাম না করে রাহুল গাঁধীকেও কটাক্ষ করেছেন। গোয়া কংগ্রেসে বড়সড় ভাঙন ধরে যেতে পারে বলেও আভাস মিলছে।

৪০ আসনের গোয়া বিধানসভায় ২১টি আসন পেলেই সরকার গড়া যায়। কংগ্রেস ১৭টি আসন পেয়েছে। বিজেপি পেয়েছে ১৩টি। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় ভোটের ফল চূড়ান্ত হয়ে যেতেই বিজেপির তরফে প্রবল তৎপরতা শুরু হয়। সে রাজ্যের দায়িত্বপ্রান্ত বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে ছোট দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি (এমজিপি) এবং গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টি (জিএফপি) ৩টি করে আসনে জয়ী হয়েছে। ৩ জন নির্দল প্রার্থীও জয়ী হয়েছেন। এই ৯ জন বিধায়ককে নিয়ে শনিবার রাতেই গডকড়ী একটি পাঁচতারা হোটেলে বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকেই মনোহর পর্রীকরকে মুখ্যমন্ত্রী করার দাবি ওঠে। বিষয়টি নিয়ে দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেন গডকড়ী। এমজিপি, জিএফপি এবং নির্দল বিধায়কদের সঙ্গে মধ্য রাত পর্যন্ত বৈঠক হয়। শেষ পর্যন্ত পর্রীকরকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেন গ়ডকড়ীরা এবং রবিবার বিকেলের মধ্যে ম্যাজিক ফিগারের চেয়ে এক জন বেশি বিধায়কের সমর্থন নিজেদের পক্ষে সুনিশ্চিত করে নেয় বিজেপি। আর এই ২৪ ঘণ্টায় কংগ্রেস ব্যস্ত ছিল নিজেদের পরিষদীয় দলনেতা বাছার ঝগড়ায়। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহ নিশ্চিত ছিলেন, একক বৃহত্তম দল হিসেবে কংগ্রেসকেই আগে সরকার গড়তে ডাকবেন রাজ্যপাল। তাই মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তা ঠিক করতেই দিগ্বিজয়রা বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিজেপি ম্যাজিক ফিগার থেকে অনেকটা দূরে থেমে গিয়েও যে শুধুমাত্র তৎপরতার জোরে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ককে নিজেদের পক্ষে টেনে নেবে এবং রাজ্যপালের কাছে সরকার গড়ার দাবি জানিয়ে আসবে, তা কংগ্রেস নেতারা ভাবতেই পারেননি। নেতৃত্বের এই অপদার্থতার বিরুদ্ধেই মুখ খুলেছেন গোয়ার কংগ্রেস বিধায়কেরা।

রাহুল গাঁধীকে সরাসরি আক্রমণ না করলেও, তাঁর নেতৃত্বে যে একেবারেই আস্থা নেই তাঁদের, গোয়ার কংগ্রেস নেতাদের কেউ কেউ সেই ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছেন। —ফাইল চিত্র।

মঙ্গলবার সকালে এআইসিসি প্রতিনিধি দিগ্বিজয় এবং গোয়া প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষনেতারা নবনির্বাচিত বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। কংগ্রেস সরকার গড়লে যিনি মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলে মনে করা হচ্ছিল, বিদায়ী বিধানসভার সেই বিরোধী দলনেতা বিশ্বজিৎ রাণে বৈঠকে দিগ্বিজয়কে তীব্র আক্রমণ করেন। কংগ্রেস নেতৃত্বের বেহাল দশার কারণেই রায় পক্ষে আসা সত্ত্বেও সরকার গড়া গেল না, বৈঠকে এমনই মন্তব্য করেন রাণে। ওই বৈঠকে প্রবল হইচইও হয়েছে বলে খবর। দিগ্বিজয় সিংহ তাঁদের হাত তুলে থামানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু বিক্ষুব্ধদের মুখ বন্ধ করা যায়নি।

আরও পড়ুন: কংগ্রেসের আর্জি সুপ্রিম কোর্টে খারিজ, পর্রীকরের শপথ আজই

গোয়ার পাঁচ বারের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী প্রতাপ সিংহ রাণের ছেলে বিশ্বজিৎ শুধু নেতৃত্বকে আক্রমণ করেই থেমে থাকেননি। তিনি প্রবল ক্ষোভ ব্যক্ত করে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়েও যান। পরে তিনি বলেন, ‘‘আমার মাথায় অনেক চিন্তা আসছে। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে আমি ভুল দলে রয়েছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার উপর প্রবল চাপ রয়েছে, যে বিধায়করা আমাকে সমর্থন করছেন, তাঁরা চাইছেন আমি কিছু পদক্ষেপ করি। কিন্তু শুধুমাত্র আমার নেত্রী সনিয়া গাঁধীর জন্য এখনও কোনও পদক্ষেপ করছি না।’’ বিশ্বজিৎ রাণের এই মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। দিগ্বিজয় সিংহকে যে তিনি পাত্তাই দিচ্ছেন না, সে কথা তিনি বৈঠকেই বুঝিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু শুধুমাত্র সনিয়া গাঁধী ছাড়া আর কাউকে যে তিনি নেতা বলে মনেই করেন না, সে কথা বলে বিশ্বজিৎ যে আসলে রাহুলের নেতৃত্বকেই অস্বীকার করছেন, তা বেশ স্পষ্ট।

আর এক কংগ্রেস বিধায়ক জেনিফার মনসেরেটও মুখ খুলেছেন। তাঁর কথায়: ‘‘মানুষ কংগ্রেসের উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন এবং আমাদের ভোট দিয়েছিলেন। আমরা ১৭টা আসন পেলাম, তবু সরকার গড়তে পারলাম না। ... সবাই আমাদের দেখে হাসছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE