Advertisement
১৫ মে ২০২৪
National News

খুনের পর খুন করে লাশ গায়েব! দোষ কবুল পুণের ডাক্তারের

এ যেন কেঁচো খুড়তে গিয়ে মিলে গেল কেউটের হদিশ! সন্তানসম্ভবা মেয়েকে দেখতে পুণের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন সাতারার এক মধ্যবয়স্ক মহিলা। প্রায় ১০০ কিলোমিটারের পথ যেতে যা সময় লাগে, তা পেরিয়ে যাওয়ার বহু ক্ষণ পরেও তিনি সেখানে না পৌঁছনোয় পরিবারের সকলে চিন্তায় পড়ে যান।

চিকিৎসকের বাগানবাড়ি থেকে একের পর এক দেহ উদ্ধার। ইনসেটে, মূল অভিযুক্ত সন্তোষ পল।

চিকিৎসকের বাগানবাড়ি থেকে একের পর এক দেহ উদ্ধার। ইনসেটে, মূল অভিযুক্ত সন্তোষ পল।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৬ ১৪:৫২
Share: Save:

এ যেন কেঁচো খুড়তে গিয়ে মিলে গেল কেউটের হদিশ!

সন্তানসম্ভবা মেয়েকে দেখতে পুণের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন সাতারার এক মধ্যবয়স্ক মহিলা। প্রায় ১০০ কিলোমিটারের পথ যেতে যা সময় লাগে, তা পেরিয়ে যাওয়ার বহু ক্ষণ পরেও তিনি সেখানে না পৌঁছনোয় পরিবারের সকলে চিন্তায় পড়ে যান। এর পর শুরু হয় ফোনাফুনি। কোথায় গেলেন মাঝবয়সী ওই মহিলা? বিভিন্ন জায়গায় তন্নতন্ন করে খোঁজার পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। কয়েক দিন পরে পুলিশ পুণের এক চিকিত্সকের বাগানবাড়ির মাটি খুঁড়ে তাঁর দেহ উদ্ধার করে।

কী ভাবে ওই চিকিত্সকের বাগানবাড়িতে পৌঁছলেন ৪৯ বছরের মহিলা মঙ্গল জেডে? আর কেনই বা খুন হতে হল তাঁকে?

ধোঁয়াশা কাটেনি তদন্তকারীদের। রহস্য আরও জটিল করে ওই বাগানবাড়ি থেকেই মঙ্গল দেবী ছাড়াও আরও তিনজনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। যা দেখেশুনে পুলিশ কর্তাদের অনেকেরই নিঠারি-কাণ্ডের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। এখানেও এক জন মনিন্দর সিংহ পান্ধের রয়েছেন। তাঁর নাম সন্তোষ পল। পেশায় তিনি চিকিত্সক। পুণের কাছে ওয়াইতে তাঁর একটি বাগানবাড়ি রয়েছে। সেই বাগানবাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছে ওই দেহগুলি। পুলিশি জেরায় ওই চিকিত্সক আরও ভয়ঙ্কর তথ্য দিয়েছেন। চার নয় এখনও পর্যন্ত তিনি ছয় জনকে খুন করেছেন। খুন হওয়াদের মধ্যে পাঁচ জন মহিলা। কিন্তু, বাকি দু’টি দেহ কোথায় গেল আপাতত তারই সন্ধান করছে পুলিশ। সঙ্গে সন্তোষ-সহ তাঁর এক সহযোগী নার্সকে গ্রেফতার করে জেরা করছে পুলিশ।

২০০৩ সালে পুলিশের কাছে একটি নিখোঁজ ডায়েরি জমা পড়েছিল। যিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন, বহু তল্লাশির পর তাঁর আর কোনও খোঁজ পায়নি পুলিশ। এর পরে আরও কয়েক জন একই রকম ভাবে নিখোঁজ হন। কিন্তু, কোনও কিনারাই করতে পারছিল না পুলিশ। এর পরেই মঙ্গল নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, মোবাইলে সন্তোষের সঙ্গে প্রায়ই কথা হত মঙ্গলের। পুণে যে দিন রওয়া হয়েছিলেন তিনি, তার আগে ওই চিকিত্সকের সঙ্গে ফোনে রীতিমতো ঝগড়াও হয় তাঁর। সেই কথোপকথনের তথ্য মোবাইল সংস্থার কাছ থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেখানে নাকি সন্তোষের ‘বেআইনি কাজকর্মে’র কথা ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেন মঙ্গল।

তদন্তকারীদের দাবি, ঘটনার দিন পুণের বাসস্টপ থেকে মঙ্গলকে অপহরণ করে নিজের বাগানবাড়িতে নিয়ে আসেন সম্তোষ। সঙ্গে ছিলেন ওই চিকিত্সকের এক সহযোগী নার্স জ্যোতি মান্দ্রে। পুলিশের জেরায় সন্তোষ জানিয়েছেন, পরের দিনই অতিরিক্ত মাত্রায় ওষুধ খাইয়ে বেহুঁশ করে মঙ্গলকে খুন করে ফার্মহাউসের বাগানে পুঁতে দেন তাঁরা। এর পরই গা-ঢাকা দেন দু’জনে।

মহারাষ্ট্র পূর্ব প্রাথমিক শিক্ষা সেবিকা সমিতির প্রেসিডেন্ট ছিলেন মঙ্গল। ফলে তাঁর নিখোঁজ হওয়ার খবর চাউর হতেই রাজ্য প্রশাসনের উপর চাপ বাড়তে থাকে। প্রথমে জ্যোতিকে পাকড়াও করে জেরা শুরু করে পুলিশ। জেরার মুখে সন্তোষের নাম-ঠিকানা জানিয়ে দেয় সে। শেষে গত শনিবার মধ্য মুম্বইয়ের দাদর এলাকা থেকে সন্তোষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে নিয়ে মহাবলেশ্বর-পঞ্চগনি এলাকার ওই বাগানবাড়িতে যান তদন্তকারী অফিসারেরা। ওই বাগানবাড়ির মাটি খুঁড়ে চারটি পচাগলা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঠিক এ ভাবেই ২০০৬ সালে নয়ডার ব্যবসায়ী মনিন্দর সিংহ পান্ধেরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল একের পর এক শিশুর পচাগলা দেহ।

মহারাষ্ট্রের সাতারার ওয়াই থানা এলাকার এই ঘটনায় উঠছে একাধিক প্রশ্ন। সন্তোষ পল কি আসলে সিরিয়াল কিলার? মঙ্গলকে খুনের পিছনে কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে তাঁর? অন্য মৃত ব্যক্তিদের সঙ্গেই বা কী সম্পর্ক ছিল? কী কারণেই বা দুনিয়া থেকে সরে যেতে হল ওই ছ’জনকে? সাতারার ওয়াই থানার ইনস্পেক্টর পদ্মাকর ঘনবতের দাবি, জেরার মুখে নিজের অপকর্মের কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত চিকিৎসক। পুলিশের অনুমান, অঙ্গ পাচারের কোনও চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন অভিযুক্ত। আপাতত স্থানীয় মিডিয়ার আলোচনার কেন্দ্রে সন্তোষ পল। পুলিশের আরও দাবি, জেরার মুখে ওই চিকিত্সক জানিয়েছেন, নার্স জ্যোতি মান্দ্রের পাশাপাশি মঙ্গলের সঙ্গেও অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। সে কারণেই মান্দ্রের সাহায্যে মঙ্গলকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার ছক কষেন তিনি।

মহাবলেশ্বর-পঞ্চগনিতে ছবির মতো সাজানো লোকেশনে বহু বলিউড ফিল্মের শুটিং হয়। সেখান থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরের ওয়াইতে সন্তোষ পলের বাগানবাড়ির ওই রোমহর্ষক ঘটনায় ফিল্মি প্লটের রহস্য উন্মোচন করতে দফায় দফায় ওই চিকিত্সককে জেরায় করছে পুলিশ।

আরও পড়ুন

মোদীকে তোপ প্রধান বিচারপতির

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE