তিব্বত থেকে পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যান টিম্বাকটু। বিশ্বভ্রমণ হয়ে যাবে! টিম্বাকটু যে ঠিক কত দূরে, সেই ধারণার অভাবেই হয়তো এই প্রবাদের জনপ্রিয়তা।
এ বার দিল্লির দোরগোড়ায় হাজির হচ্ছে পশ্চিম আফ্রিকার মালি দেশের এই সুপ্রাচীন শহরটি, তার সাতশো বছরের প্রাচীন পুঁথিপত্র নিয়ে। কট্টর ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া এই পুঁথিগুলির প্রদর্শনী হবে দিল্লির ‘ন্যাশনাল মিউজিয়াম’-এ। প্রদর্শনীর নাম ‘তাজমহল থেকে টিম্বাকটু’।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ করে এক ঢিলে বহু পাখি মারতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। নরমপন্থী সুফি ঐতিহ্য এই প্রাচীন শহরের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে রয়েছে। আর সেই সংস্কৃতির উপরে আঘাত হানতে গত কয়েক বছর ধরেই সক্রিয় আল
কায়দা সমর্থিত ওয়াহাবি জেহাদি সংগঠন আনসার দাইন। তারা ধ্বংস করেছে টিম্বাকটুর ঐতিহ্যশালী মাজার শরিফ (যা ইউনেস্কোর তালিকাভূক্ত হেরিটেজ মাজারও বটে)। গত কয়েক বছরে জঙ্গিরা তছনছ করেছে বহু স্মৃতি-সৌধ। বিভিন্ন গ্রন্থাগারে রাখা প্রাচীন ইসলামি সাহিত্য, বিজ্ঞান ও দর্শনগ্রন্থও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সুফি সন্ত আব্দেল কাদের হায়দারা-র (যাঁর নিজেরই সংগ্রহে রয়েছে বিপুল সংখ্যক পুঁথি) নেতৃত্বে অনেক গ্রন্থই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে জেহাদিদের হাত থেকে বাঁচানো গিয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের বাড়িতেও লুকিয়ে রেখেছেন প্রাচীন পুঁথি।
আরও পড়ুন: জুলুমে বন্ধ পাঁঠা, মুরগিও
চলতি মাসের গোড়ায় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরকে টিম্বাকটু পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ধ্বংসপ্রায় সৌধ এবং পুঁথিগুলির সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের জন্য পাঁচ লক্ষ ডলার দিয়েছে ভারত। ঠিক হয়েছে, এই বছরের মাঝামাঝি দিল্লিতে পুঁথিগুলির প্রদর্শনী করা হবে। সাম্প্রতিক কালে এই ধরনের প্রাচীন পুঁথির প্রদর্শনীর মধ্যে এটিই সব চেয়ে বড় হতে চলেছে, দাবি বিদেশ মন্ত্রকের।
কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, এই পদক্ষেপের ফলে এক দিকে কট্টর জেহাদি সংগঠন আল কায়দা তথা আনসার দাইনের বিরুদ্ধে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রাচীন ইসলামি পুঁথির প্রদর্শনীকে অস্ত্র করে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা অসহিষ্ণুতার অভিযোগকেও ভোঁতা করার চেষ্টা করা হবে।