Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সরছে মাটি, টিকবেন কি মরাঠা স্ট্রংম্যান

সত্যিই বড় ধাক্কা। নতুন করে পার্টিকে গড়ে তুলতে হবে। বক্তা, শরদ পওয়ারের কন্যা সুপ্রিয়া সুলে। পিতার প্রভাব যখন সঙ্কটে, তখন মেয়ে আর কী-ই বা বলতে পারেন!

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩১
Share: Save:

সত্যিই বড় ধাক্কা। নতুন করে পার্টিকে গড়ে তুলতে হবে। বক্তা, শরদ পওয়ারের কন্যা সুপ্রিয়া সুলে।

পিতার প্রভাব যখন সঙ্কটে, তখন মেয়ে আর কী-ই বা বলতে পারেন!

মহারাষ্ট্রের পুর নির্বাচনের ফলাফল এ বার প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, মরাঠা-রাজ্যে শরদ পওয়ারের পাঁচ দশকের প্রভাব কি এ বার অস্তমিত?

দশ বছর দখলে থাকা পুণে পুরসভা হাতছাড়া। এনসিপি-র দুর্গ পশ্চিম মহারাষ্ট্রের আর এক পুরসভা পিম্পরি-ছিঁচওয়ারেও একই হাল। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে হলেও শোলাপুর, অমরাবতী হাতে ছিল। চারটেই এ বার বিজেপি দখল করেছে।

দু’দিন আগেই রাজনৈতিক জীবনের পঞ্চাশ বছর পালন করেছেন ‘মরাঠা স্ট্রংম্যান’ শরদ গোবিন্দরাও পওয়ার। কিন্তু এই ভরাডুবির জন্য দলের মধ্যেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে তাঁর রাজনৈতিক রণকৌশল। কখনও তিনি বিজেপির ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন। তার পরেই নোট বাতিল নিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করছেন। আবার মোদী সরকারের থেকে পদ্মবিভূষণও নিয়েছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পওয়ার এ ভাবে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছেন। সেই কারণে নোট বাতিলেরও রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারেননি তিনি। অথচ মহারাষ্ট্রের চিনি কারখানা এলাকায় সমবায় আন্দোলনের জমিতেই নিজের রাজনৈতিক ভিত শক্ত করেছিলেন পওয়ার। নোট বাতিলের পরে সেই সমবায়গুলি সমস্যায় পড়লেও, ভোট পেয়েছে বিজেপিই। অনেকের মতে, এনসিপির ভোটারদের অনেকেই এ বার বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন।

শরদ পওয়ার দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে তাঁর ৭৫-তম জন্মদিন পালন করছেন। সেখানে নরেন্দ্র মোদী-রাহুল গাঁধীকে এক মঞ্চে হাজির করিয়ে নিজের ‘ব্র্যান্ড’ তৈরি করেছিলেন তিনি। ১৯৬৭-র ২২ ফেব্রুয়ারি শরদ পওয়ার প্রথম বিধানসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন বলে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের ৫০ বছর উদযাপন হচ্ছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও মহারাষ্ট্রের পুরভোটের যা ফল, তাতে এনসিপি-র ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। ভোটের ঠিক আগে মোদী সরকারের থেকে পদ্মবিভূষণ গ্রহণ করেছেন পওয়ার। তা নিয়েও দলের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে। কারণ, শিবসেনার মতো দল বিজেপি-এনসিপি যোগাযোগের কথা প্রচার করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলেছে বলেই অভিযোগ উঠেছে। ভোট বিপর্যয়ের পরে এনসিপি-র অন্দরমহলে এ সব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

আরও পড়ুন:
মদ ছাড়ায় না ডান্ডা, ভোটে গুলাবি গ্যাং

সেই ১৯৭৮-এ বসন্তদাদা পাটিলের সরকার ভেঙে মহারাষ্ট্রের নবীনতম মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন শরদ পওয়ার। তার পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে কম অভিযোগ ওঠেনি। কখনও দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে যোগাযোগ, কখনও লাভাসা শৈলনগরী, টু-জি স্পেকট্রাম বন্টন, কখনও আইপিএল দুর্নীতি—সব কিছু থেকেই গা বাঁচিয়ে পশ্চিম মহারাষ্ট্রের ‘সুগার বেল্ট’-এ নিজের প্রভাব ধরে রেখেছিলেন পওয়ার। তাঁর হাতিয়ার ছিল শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে পুণে ও বারামতী সংলগ্ন এলাকার উন্নয়ন এবং জাতীয় স্তরে সব দলের সঙ্গেই সুসম্পর্ক। কিন্তু তা সত্ত্বেও যে পওয়ার পরিবারের প্রভাব কমছিল, ২০১৪-র লোকসভা ভোটেই তার প্রমাণ মেলে। সুপ্রিয়া বারামতীতে জিতলেও ব্যবধান ৪ লক্ষ থেকে ৭০ হাজারে নেমে আসে। শরদের ভাই অজিত পাওয়ারও বারামতী বিধানসভা কেন্দ্র থেকে খুব কম ব্যবধানে জেতেন। দলের মধ্যে দাবি উঠেছে, এ বার এনসিপি-র নেতৃত্বে নতুন মুখ আনা হোক।

সান্ত্বনা একটাই। শরদ পওয়ারের দাদা আপ্পাসাহেবের নাতি রোহিত এ বার বারামতী তহসিলে জেলা পরিষদে জিতেছেন। শরদ, অজিত, সুপ্রিয়া সকলেই লোকসভা বা বিধানসভা ভোটে প্রথম লড়েছিলেন। চিনি কলের মালিক রোহিতের ইচ্ছা ছিল, তিনি তৃণমূল স্তরের রাজনীতি থেকে শুরু করবেন। রোহিতের হাত ধরে এনসিপি নিজের দুর্গ বারামতীতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে কি না, সেটাই এখন প্রশ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sharad Pawar Maratha Strongman Crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE