Advertisement
E-Paper

৫০ জন পুণ্যার্থী বেঁচে গেলেন সেলিমের জন্য

যাই ঘটে যাক, বাস তিনি থামাবেন না। বাসের ভিতর তখন গুলিতে আহতদের কাতরানি, আতঙ্কিতদের সমবেত চিত্কার আর অবিরাম গুলির শব্দ।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৭ ১৬:০১
জনা পঞ্চাশেক পূণ্যার্থীকে বাঁচিয়ে এখন তিনিই হিরো। ছবি: ফিরোজ হুসেনের ফেসবুক পেজের সৌজন্যে।

জনা পঞ্চাশেক পূণ্যার্থীকে বাঁচিয়ে এখন তিনিই হিরো। ছবি: ফিরোজ হুসেনের ফেসবুক পেজের সৌজন্যে।

তিন দিক থেকে যখন এলোপাথাড়ি গুলি ছুটে আসছিল, তিনি তখন শরীরটাকে সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে শক্ত হাতে স্টিয়ারিং ধরে ছিলেন। আর ডান পা-টা আরও জোরে চেপে বসিয়ে দিচ্ছিলেন অ্যাক্সেলেটরে। যাই ঘটে যাক, বাস তিনি থামাবেন না। বাসের ভিতর তখন গুলিতে আহতদের কাতরানি, আতঙ্কিতদের সমবেত চিত্কার আর অবিরাম গুলির শব্দ।

এ ভাবেই অন্ধকার রাস্তায় শেখ সেলিম গফুর এগিয়ে গিয়েছিলেন প্রায় কয়েক কিলোমিটার। তার এই দৃঢ়তার জেরে জঙ্গি হামলার কবলে পড়েও বেঁচে গিয়েছে বহু প্রাণ। অনেকের প্রাণ বাঁচিয়ে তিনি এখন কার্যত হিরো। কিন্তু, সেলিমের আক্ষেপটা যাচ্ছে না কিছুতেই! সবাইকে বাঁচাতে না পারার আক্ষেপ। অনন্তনাগে জঙ্গি হানার কবল থেকে অনেকের সঙ্গে নিজের প্রাণটুকু বাঁচিয়ে ফেরার পর এক আত্মীয়কে ফোনে তিনি বলেছেন, ‘‘আক্ষেপটা থেকে গেল। খুব চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সবাইকে বাঁচাতে পারলাম না। চোখের সামনেই জঙ্গিদের এলোপাথাড়ি গুলিতে লুটিয়ে পড়ছিলেন পূণ্যার্থীরা। মনে পড়লে এখনও কাঁটা দিচ্ছে গায়ে!’’ ওই সময় যদি কোনও ভাবে বাসটি দাঁড় করিয়ে দিতেন সেলিম, তবে জঙ্গিদের আক্রমণে আরও অনেক প্রাণহানি হতে পারত। তাঁর উপস্থিত বুদ্ধির জোরেই বেঁচে গেল বেশ কিছু প্রাণ।

আরও পড়ুন: অমরনাথে লস্করেরই হাত, ছক পাকিস্তানে বসে

সোমবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ শ্রীনগর থেকে বাস নিয়ে বেরিয়েছিলেন সেলিম। নিয়ম অনুযায়ী, রাতে পূণ্যার্থীদের নিয়ে বাস চলাচল করার কথা নয়। কিন্তু, মাঝপথে টায়ার ফেটে যায়। সেই টায়ার বদলাতেই প্রায় দেড় ঘণ্টা লেগে যায়। তত ক্ষণে উপত্যকায় রাত নেমে এসেছে। টায়ার পাল্টে শ্রীনগর-জম্মু হাইওয়ে ধরে কয়েক মিনিট যেতেই বাস লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি ছুটে আসে জঙ্গিদের ছোড়া গুলি। বাতেঙ্গুর কাছে হামলাটা হয়। চার দিকে তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিন্তু, বাস থামাননি সেলিম। কোনও দিকে না তাকিয়ে ঝড়ের গতিতে ছুটিয়ে দেন পূণ্যার্থী বোঝাই বাসটি।

সোমবার রাতে জঙ্গি হামলার পর অনন্তনাগে কড়া নিরাপত্তা। ছবি: পিটিআই

তত ক্ষণে বাসের ভিতরেই গুলির ঘায়ে লুটিয়ে পড়েছেন অনেকে। কিছু পরেই জানা যায়, জঙ্গিদের গুলিতে সাত জন মারা গিয়েছেন। আহত হয়েছেন ২০ জন। আর সব মিলিয়ে সেলিম ভাইয়ের বুদ্ধির জোরে প্রাণে বেঁচে গিয়েছে অন্তত জনা পঞ্চাশেক পূণ্যার্থীর প্রাণ। তাঁদেরই এক জন মহারাষ্ট্রের ভাগ্যমণি। গুলিবৃষ্টিতে গুরুতর জখম হয়েছেন। অনন্তনাগ জেলা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তিনি জানাচ্ছিলেন সেলিমের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতার কথা। বাঁ-হাতে চওড়া ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় বললেন, ‘‘কী ভাবে যে ওই সময় বাস চালিয়েছিলেন সেলিম ভাই! ওঁর জন্যই প্রাণে বেঁচে গেলাম।’’

তাঁর মতো আরও অনেকের মুখেই এক রা— সেলিম না থাকলে এ যাত্রাতেই জীবন খতম হয়ে যেত!

Amarnath Yatra Terror attack Sheikh Salim Gafoor Amarnath Terror Attack Anantnag Jammu and Kashmir অমরনাথ যাত্রা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy