Advertisement
E-Paper

বিবাদে লাভ কেন্দ্রের, তবে বাড়লে বিপদ

সুপ্রিম কোর্টের চার প্রবীণ বিচারপতি সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ তুলেছেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বজায় থাকছে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:১০

এত দিন চলছিল মোদী সরকার বনাম সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের বিবাদ। এ বার সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণতম বিচারপতিদের নিয়ে তৈরি কলেজিয়ামের মধ্যেই বিবাদ শুরু হতে দোটানায় পড়েছে মোদী সরকার।

সুপ্রিম কোর্টের চার প্রবীণ বিচারপতি সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ তুলেছেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বজায় থাকছে না। গণতন্ত্রের স্বার্থে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা জরুরি। তাঁদের আঙুল কার্যত প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে। চার বিচারপতির সাংবাদিক সম্মেলনের পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেছেন।

সব মিলে মোদ্দা যে অভিযোগটি জোরালো ভাবে উঠে আসছে তা হল, সরকারের চাপের কাছে মাথা নোয়াচ্ছে বিচার বিভাগ। আর সেই কারণেই এখন প্রকাশ্যে যত বেশি সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে মোদী সরকার।

বিচারপতিদের ওই সাংবাদিক সম্মেলনের পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। সারা দিনে সরকারের পক্ষে এ নিয়ে বিশদে কেউই মুখ খোলেননি। শুধু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে আইন প্রতিমন্ত্রী পি পি চৌধুরী বলেন, ‘‘আমাদের বিচার বিভাগ স্বাধীন, তার সুখ্যাতিও রয়েছে। ওঁরা নিজেদের মধ্যেই এই বিবাদ মিটিয়ে ফেলবেন।’’

সরকারি সূত্রের বক্তব্য, বিচারপতিদের মধ্যে যে বিবাদ চলছে, সেটা সরকারের অজানা ছিল না। কিন্তু তা যে প্রকাশ্যে চলে আসবে, এটা বুঝতে পারেনি। বিশেষ করে আজই যে এমন ঘটনা ঘটবে, তার আঁচও পায়নি সরকার। আইনজীবী দুষ্ম্যন্ত দবে আজ সকালেই একটি সংবাদপত্রের কলামে ঠিক এই অভিযোগ তুলেছিলেন, যা চার বিচারপতি তুলেছেন। তার পরেও সরকার বুঝতে পারেনি।

বিরোধীদের দাবি, বিচারপতিদের এই বিবাদ বাড়তে দিয়েছে সরকারই। কারণ, বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সরকার বনাম কলেজিয়ামের বিবাদের মধ্যে কলেজিয়ামে ফাটল থাকলে সরকারেরই লাভ। বিশেষত বিচারপতি জে চেলমেশ্বর যে ভাবে কলেজিয়ামের বৈঠকে অনাস্থা প্রকাশ করেছিলেন, যে ভাবে সি এস কারনানের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে— সরকার তাতে নিজেদেরই নীতিগত জয় দেখছিল। কারণ, কলেজিয়ামের মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগে গলদ রয়েছে, এই তত্ত্বই এতে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছিল।

মোদী সরকারেরই বিচারপতি নিয়োগ কমিশন বিল সুপ্রিম কোর্ট অসাংবিধানিক বলে খারিজ করে দিয়েছিল। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেও সরকার চায়, বিচারপতি নিয়োগে শেষ কথা বলার অধিকার সরকারের হাতেই থাকুক। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে এ নিয়ে দর কষাকষিতেও পাঁচ প্রবীণ বিচারপতিকে নিয়ে কলেজিয়ামে ফাটল থাকলে সরকারেরই লাভ। তবে প্রকাশ্যে দূরত্ব বজায় রাখলেও সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব নয় কেন্দ্রের পক্ষে। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের শীর্ষ স্তর থেকে এই বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়লে মুশকিল। যদি প্রবীণতম বিচারপতিদের মতো অন্যেরাও মুখ খুলতে শুরু করেন কিংবা প্রধান বিচারপতি পাল্টা মুখ খোলেন, তা হলে এই বিবাদ আরও গড়াবে। বিচার বিভাগে সঙ্কট তৈরি হলে মোদী সরকারও গা বাঁচিয়ে থাকতে পারবে না।

উল্টো দিকে, কংগ্রেস চাইছে, আজ চার প্রবীণ বিচারপতি যে ‘সত্য’ তুলে ধরেছেন, অন্য বিচারপতিরাও একই ভাবে সেই সত্য তুলে ধরুন। তা আঁচ করেই বিচারপতিদের মধ্যে বিবাদ মেটাতে প্রাক্তন বিচারপতিদের অনুরোধ করেছে সরকার। যাতে তাঁরা দৌত্যের কাজ করেন। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপালের মাধ্যমেও প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করা হয়, তিনি যেন তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জবাবে এখনই পাল্টা মুখ না খোলেন। বেণুগোপাল বলেছেন, ‘‘আজ যা ঘটেছে, তা এড়ানো যেত। বিচারপতিদের এখন রাষ্ট্রনায়কদের মতো আচরণ করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে, এই ফাটল যাতে পুরোপুরি বোজানো যায়। ভবিষ্যতে যেন পুরোপুরি সম্প্রীতি এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকে।’’

Unrest Central Government Supreme Court CJI Judge Loya Dipak Misra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy