মস্কটের সুলতান কাবুস স্টেডিয়ামে অনাবাসী ভারতীয়দের সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে দেশের পূর্ববর্তী সরকারকে যে ভাবে কটাক্ষ করেছেন মোদী, তাতে সাংঘাতিক অসৌজন্য দেখছে বিরোধী পক্ষ। ছবি: পিটিআই।
ফের অসৌজন্যের অভিযোগ উঠল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে। দেশের রাজনৈতিক লড়াই নিয়ে তিনি মুখ খুললেন বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে। বিরোধী পক্ষকে তথা পূর্ববর্তী সরকারকেকটাক্ষ করলেন তিনি। তাঁর সরকার ভারতকে বদলে দিচ্ছে বলেও দাবি করলেন। ওমানে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই অসৌজন্যমূলক মন্তব্যের প্রবল সমালোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
মোদী জানেনই না, বিদেশে গিয়ে কী বলতে হয়— মন্তব্য কংগ্রেসের। আর বিজেপি বলছে, প্রধানমন্ত্রী ভুল কিছু বলেননি, যে ভারতীয়রা বিদেশে থাকেন, তাঁরাও জানেন, কংগ্রেস জমানা কেমন ছিল।
জর্ডন, প্যালেস্তাইন, আরব আমিরশাহি ঘুরে সফরের শেষ দফায় ওমান যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী। রবিবার ওমানের রাজধানী মস্কটে সুলতান কাবুস স্টেডিয়ামে প্রবাসী ভারতীয়দের জমায়েতে মোদী ভাষণ দেন। সেখানেই তিনি পূর্ববর্তী সরকার এবং নিজের সরকারের তুলনা টানেন।
‘‘আমার সরকারের বিরুদ্ধে কেউ দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে পারবেন না,’’—বলেছেন মোদী। দেশের মাটিতে কংগ্রেস যখন রাফাল চুক্তির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুর ক্রমশ চড়াচ্ছে, তখন কোনও ওমানে অনাবাসী ভারতীয়দের সমাবেশে নিজের সরকারকে মোদীর ক্লিনচিট বিশেষ অর্থবহ, বলছে রাজনৈতিক শিবির।
আরও পড়ুন: ভাগবতের সেনা মন্তব্যে তুমুল ঝড় দেশজুড়ে
সুলতান কাবুস স্টেডিয়ামের রয়্যাল বক্স থেকে রবিবার ভাষণ দেন মোদী। রয়্যাল বক্স শুধুমাত্র ওমানের সুলতানই ব্যবহার করেন। মোদী হলেন ওমানের প্রথম বিদেশি অতিথি, যাঁর জন্য রয়্যাল বক্স খুলে দিল পশ্চিম এশিয়ার দেশটি।
মোদীর ভাষণে কংগ্রেস তথা ইউপিএ সরকারের প্রতি কটাক্ষ ছিল স্পষ্টই। করদাতাদের অর্থ তছরুপ কেন হল, আগের সরকারকে সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, আর তাঁর সরকারকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, রাজকোষে কতটা অর্থ জমা পড়ল— মন্তব্য মোদীর।
আরও পড়ুন: দুর্নীতিতে বিজেপির বিশ্ব রেকর্ড: রাহুল
বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই সব মন্তব্যকে অবশ্য মোটেই ভাল চোখে দেখছে না বিরোধী পক্ষ। কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী জানেনই না, বিদেশে গিয়ে কী বলতে হয়। বিদেশ সফরগুলোতে যাওয়ার আগে বিদেশ মন্ত্রকের কোনও অভিজ্ঞ আমলার কাছ থেকে তিনি কেন যে জেনে নেন না, কী বলতে হবে, সেটাই বুঝতে পারি না।’’ বিদেশে গিয়ে বার বার বিরোধী দলকে আক্রমণ করে মোদী ভারতের পরম্পরা এবং ঐতিহ্যে আঘাত হানছেন বলে প্রদীপ ভট্টাচার্যের দাবি। তিনি বলেন, ‘‘ওমানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। ভারত এবং ভারতের মানুষ সম্পর্কে সে দেশের মানুষের ধারণা আগে থেকেই রয়েছে। নরেন্দ্র মোদী বিদেশে গিয়ে যদি কাদা ছোড়েন, তা হলে তাঁর নিজের ভাবমূর্তিই খারাপ হবে।’’
বামেরাও মোদীর এই অবস্থানের নিন্দায় সরব। সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য তথা সাংসদ মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশিত। এই প্রথম বার নয়, আগেও তিনি বিদেশে গিয়ে দেশের রাজনীতি নিয়ে মুখ খুলেছেন। এটা ভারতীয় পরম্পরার বিরোধী। পাকিস্তানের নেতারা এই রকম করেন। ভারতীয় নেতাদের কাছ থেকে এটা প্রত্যাশিত নয়। বিদেশ নীতির প্রশ্নে আমাদের দেশে একটা রাজনৈতিক ঐকমত্য ছিল। সেটা নরেন্দ্র মোদী ভেঙে দিয়েছেন। পরিণত গণতন্ত্র হিসেবে ভারতের যে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি রয়েছে বিদেশে, এ বার মোদী সেটাকেও ভাঙছেন।’’ রাহুল গাঁধীর বিদেশ সফরের প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘‘সম্প্রতি রাহুল গাঁধী বাহরাইন সফরে গিয়েছিলেন। রাহুল সরকারি সফরে যাননি, সরকারি খরচেও যাননি। এ ধরনের সফরে দেশের রাজনীতি নিয়ে মুখ খোলায় বাধা নেই। তা সত্ত্বেও রাহুলের নানা মন্তব্যকে বিজেপি তীব্র আক্রমণ করেছে। এ বার মোদী সরকারি খরচে, রাষ্ট্রীয় সফরে বিদেশে গিয়ে যা বললেন, তার কী ব্যাখ্যা দেবে বিজেপি?’’
মোদীর এই মন্তব্যে অবশ্য আপত্তিকর কিছু দেখছে না বিজেপি। দলের মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্রের ব্যাখ্যা, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তো ভুল কিছু বলেননি। ইউপিএ জমানায় কী হয়েছে, তা সকলেই জানেন। প্রধানমন্ত্রী যেখানে ভাষণ দিয়েছেন, সেখানে ভারতীয়দের জমায়েতই ছিল। ইউপিএ জমানার দুর্নীতি তাঁদের অজানা নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy