Advertisement
E-Paper

মোদীর বক্তৃতায় বাস্তববাদী কৌশল

১৯৪৭ সালে মধ্যরাতে স্বাধীনতা অর্জন। পরের দিন সকালে লালকেল্লাতে দাঁড়িয়ে জওহরলাল নেহরু ভারতের ভবিষ্যত রচনার অঙ্গীকার করেছিলেন। ৭০ বছর পর সেই ভারত এমন এক পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে দেশের নানা প্রান্তে অশান্তি, আগুন, হিংসা, দলিত বিতর্ক।

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৬ ০১:২৮
সোমবার লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

সোমবার লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

১৯৪৭ সালে মধ্যরাতে স্বাধীনতা অর্জন। পরের দিন সকালে লালকেল্লাতে দাঁড়িয়ে জওহরলাল নেহরু ভারতের ভবিষ্যত রচনার অঙ্গীকার করেছিলেন। ৭০ বছর পর সেই ভারত এমন এক পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে দেশের নানা প্রান্তে অশান্তি, আগুন, হিংসা, দলিত বিতর্ক। সেই পটভূমিতে দাঁড়িয়ে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জোর দিলেন সামাজিক বিভেদ ভুলে ঐক্য রচনার উপরে। দিল্লির রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জনসংযোগ সংস্থার কর্ণধারেরা মনে করছেন, আজ মোদী তাঁর আগের দু’বারের

বক্তৃতা থেকে কৌশল অনেক পরিবর্তন করেছেন। এ বার মোদী অনেক বেশি বাস্তববাদী।

নেহরুর সময়ে টেলিভশন ছিল না। এহেন নিশ্ছদ্র নিরাপত্তা ছিল না। বুলেফপ্রুফ কাচের বাক্সে তাঁকে বক্তৃতা দিতে হয়নি। এ বার লালকেল্লায় বক্তব্য রাখার আগে নিরাপত্তা অফিসারেরা মোদীকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরতে বলেছিলেন। আপত্তি জানান তিনি। মোদী গোয়েন্দাপ্রধানকে বলেন, ‘‘নিরাপত্তার ব্যবস্থা আপনারা করুন। কিন্তু ওই জ্যাকেট পরে বক্তব্য রাখতে গেলে মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে আমার মানসিক সমস্যা হবে।’’ তাঁর লাল-গোলাপি-সাদা-সবুজ রঙের গুজরাতি স্টাইলে পাগড়ি পরার সিদ্ধান্তও সম্ভবত পূর্বপরিকল্পিত। এই পাগড়ির মধ্য দিয়ে এক দিকে তিনি গুজরাতি অস্মিতা অন্য
দিকে ভারতের বহুত্ববাদের প্রতীকি বার্তা দিতে চেয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকেই।

প্রধানমন্ত্রী এ বারের বক্তব্যে বারংবার বোঝাতে চেয়েছেন তিনি শুধু নীতি নন, ‘নিয়ত’ জানাতে চান। অর্থাৎ তিনি প্রশাসনের একটি ধারাবাহিকতা স্বীকার করছেন। এমনকী যেটা মোদীসুলভ নয়, আগের সরকারের ভাল কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য তিনি যে সেই কাজগুলি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেটা জানাতেও ভোলেননি। তবে আর্থিক বিশেষজ্ঞ জগদীশ ভগবতীর মতো কড়া সংস্কারবাদীরা নির্বাচনের আগে ভেবেছিলেন, ক্ষমতায় এসে মোদী সরকার অনেক বেশি আর্থিক সংস্কারমুখী হবে। ভর্তুকি সংস্কৃতি বিলুপ্ত করবে। অনেকে এমনটাও ভাবতে শুরু করেছিলেন যে, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আসা দল এ বার হয়তো আমেরিকায় রিপাবলিকান পার্টির ভারতীয় সংস্করণ হয়ে উঠবে। কিন্তু আজ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে আর্থিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সরকার যে অনেক বেশি জনমুখী রাজনৈতিক লাইন নিতেই আগ্রহী সেটা প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিলেন।

জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ দিলীপ চেরিয়ান তাই শুনে বলছেন, ‘‘গগনচুম্বী প্রত্যাশা নিয়ে নরেন্দ্র মোদী এসেছিলেন। তাই প্রথম ১৫ অগস্টের বক্তব্যে ছিল অনেক স্বপ্নের ফানুস। তার পরের বছরেও রাজনৈতিক মধুচন্দ্রিমা কাটেনি। কিন্তু তৃতীয় বছরে তিনি এসে দাঁড়িয়েছেন বাস্তবের মাটিতে। তাই এ বারের বক্তব্যে উত্তেজনা কম। উচ্চগ্রামে বাঁধা বক্তব্যের পরিবর্তে এ হল আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তৃতা। যা অনেকটাই সংযত।’’ আর বিপণন-গুরু পীযূষ পাণ্ডে মনে করেন, ‘‘এ বার প্রধানমন্ত্রী অনেক বেশি স্পষ্ট। পাকিস্তান নীতি থেকে শুরু করে দলিত বিতর্ক, সামাজিক সাম্য থেকে জনমুখী আর্থিক প্রকল্প, সব কিছুতেই ধোঁয়াশা কম।’’

বিপিএলের তালিকায় থাকা মানুষের জন্য স্বাস্থ্য যোজনা থেকে শুরু করে গরিব চাষিদের সমস্যার সমাধান করা়— এ সবই সাবেকি কল্যাণকামী রাষ্ট্রের চরিত্র। নেহরু থেকে মনমোহন সিংহ— কেউ সে পথ পরিবর্তন করেননি। তিন বছর পর মোদীও বুঝিয়ে দিলেন সেই পথ ধরেই এগোতে চাইছেন তিনিও। তাঁর নিজস্ব মশাল হাতে নিয়ে।

Modi speech
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy