আর ছ’ডিগ্রি উঠতে পারলে সেরার সেরা হওয়া যেত। তা হল না। তবে গরমের বিশ্বওয়াড়ি টক্করে সেরা দশের তালিকায় নাম তুলে ফেলল ভারত!
আর সেই সুবাদে আন্তর্জাতিক পরিচিতি জুটে গেল রাজস্থানের ছোট্ট শহর পালোডির কপালে। বৃহস্পতিবার সেখানে থার্মোমিটারের পারা চড়েছে ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। মৌসম ভবন জানাচ্ছে, এটা ভারতীয় রেকর্ড তো বটেই, আর ৫.৭ ডিগ্রি বাড়লে উষ্ণতায় বিশ্বরেকর্ডও করে ফেলত পালোডি! কী রকম?
গরমের দৌড়ে এখনও দুনিয়াসেরা আমেরিকা। ৫৬.৭ ডিগ্রির ব্যাটন তার কব্জায়। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)-র নথি অনুযায়ী, ররবীন্দ্রনাথের নোবেলপ্রাপ্তির বছরে, অর্থাৎ ১৯১৩-র ১০ জুলাই ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালি সেই অবিশ্বাস্য গরমে ভাজা ভাজা হয়েছিল। এর বেশি তাপমাত্রা এ যাবৎ কোথাও রেকর্ড করা হয়নি।
সেই হিসেবে পালোডি আর ক্যালিফোর্নিয়ার ফারাক প্রায় ছ’ডিগ্রি। মাঝে অবশ্য সাতটি দেশ জায়গা করে নিয়েছে। গরমের সেরা দশের ফর্দে ‘ভারতীয় চ্যাম্পিয়ন’ পালোডি ন’নম্বরে। এত দিন জাতীয় সেরার খেতাব ছিল রাজস্থানেরই আলোয়ারের দখলে। ১৯৫৬-য় আলোয়ার ৫০.৬ ডিগ্রির আঁচ পুইয়েছে।
বৃহস্পতিবার পালোডির সঙ্গে রাজস্থানের চুরুতেও পারদ হইহই করে চড়তে শুরু করেছিল। তবে ৫০.২ ডিগ্রিতে পৌঁছে থেমে যায়। রাজস্থানের আরও তিন শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রির আশপাশে ঘোরাফেরা করেছে। বৃহস্পতিবার গুজরাতের আমদাবাদ ৪৮ ডিগ্রি দেখেছে, যা কিনা একশো বছরের রেকর্ড! মৌসম ভবনের মানচিত্র বলছে, তামাম মধ্য ভারত, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাত ও মহারাষ্ট্রের একাংশ তাপপ্রবাহের কবলে। রাজস্থান-গুজরাতে তা প্রবল চেহারায় হাজির।
ভারতে গরমের এ হেন রেকর্ড-ভাঙা দৌড় কেন?
অনেকের আঙুল এল নিনো’র দিকে। ‘‘নানা আবহাওয়া সংস্থা আগেই পূর্বাভাস দিয়েছিল, জোরালো এল নিনো’র জেরে এ বার বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বাড়বে। ভারতে তারই প্রভাব চলছে।’’— মন্তব্য মৌসম ভবনের এক আবহবিদের। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ও আবহাওয়া সংস্থা নোয়া’র সাম্প্রতিক রিপোর্টের বক্তব্য: ২০১৫ উষ্ণতম বছরের তকমা পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি যা, তাতে শিরোপাটি ছিনিয়ে নিতে পারে ২০১৬। বস্তুত ২০১৬-র এপ্রিল ইতিমধ্যে ‘উষ্ণতম’ এপ্রিল হিসেবে চিহ্নিত।
এমতাবস্থায় এল নিনোর তেজে অবিলম্বে ভাঁটা না-পড়লে এ বছরটা আরও উষ্ণ হয়ে উঠবে বলে নাসা-নোয়ার পর্যবেক্ষণ। এল নিনো এত দিন ধরে সক্রিয় কেন?
আবহবিদেরা দায়ী করছেন উষ্ণায়নকে। যার সূত্র ধরে উঠে আসছে শিল্পায়ন, নগরায়ন ও তাপবিদ্যুতের ভূমিকা। ‘‘এখনও বিদ্যুতের জন্য তাপবিদ্যুৎ-ই মূল ভরসা। এ দিকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র যত বেশি ব্যবহার হবে, বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড তত বাড়বে। পাল্লা দিয়ে চড়বে পরিমণ্ডলের তাপমাত্রা। উষ্ণায়ন এড়ানো যাবে না।’’— বলছেন মৌসম ভবনের এক বিজ্ঞানী। তাঁর কথায়, ‘‘নগরায়ন ও শিল্পায়নের সঙ্গেও বিশ্ব উষ্ণায়নের সমানুপাতিক সম্পর্ক।’’
এই প্রেক্ষাপটে আবহবিদদের আশঙ্কা, বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা না-গেলে এল নিনো-র দাপটে রাশ পরানো মুশকিল। সে ক্ষেত্রে লাগামছাড়া গরম বা মাত্রাছাড়া বৃষ্টির জন্য তৈরি থাকতে হবে। ভারতে চলতি তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তির আশু সম্ভাবনা আছে কি?
মৌসম ভবন-সূত্রে নির্দিষ্ট কোনও আশ্বাস মেলেনি। তাদের বিশ্লেষণ— দেশের দু’দিকে এখন দু’রকম আবহাওয়া। মধ্য ভারত, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাত, মহারাষ্ট্রে তাপপ্রবাহ। তামিলনাড়ু, অন্ধ্র, ওড়িশা, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের বৃষ্টি। তাপপ্রবাহ-অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ৬-৭ ডিগ্রি উপরে উঠে যাচ্ছে। আবার ঘূর্ণিঝড় প্রভাবিত তল্লাটে স্বাভাবিকের নীচে নেমে থাকছে। ‘‘সব মিলিয়ে খুব অস্থির একটা পরিবেশ। প্রকৃতিতে চূড়ান্ত পাগলামি।’’— মন্তব্য এক আবহবিদের। ওঁদের দাবি, মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে বর্ষা ঢুকে যতক্ষণ না সুস্থির হবে, ততক্ষণ আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা কাটবে না।
কিন্তু কবে যে বর্ষা এসে গুছিয়ে বসবে, তা বলা যাচ্ছে না। মৌসম ভবন অঙ্ক কষে যাচ্ছে। তারই মাঝে জ্বলুনির সেরা দশে ঠাঁই করে ফেলেছে ভারত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy