Advertisement
E-Paper

গোরক্ষপুরে ৬৩ শিশুমৃত্যু, হাহাকার ঘিরে তরজা

প্রবল চাপের মুখে পড়ে তড়িঘড়ি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ রাজীব মিশ্রকে সাসপেন্ড করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। তাঁর কথায়, ‘‘যা-ই ঘটে থাকুক না কেন, চিকিৎসার গাফিলতি তো রয়েইছে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৭ ০৪:১০
সন্তানহারা: মৃত শিশুকে ঘিরে কান্না পরিজনদের। গোরক্ষপুরে। ছবি: এএফপি।

সন্তানহারা: মৃত শিশুকে ঘিরে কান্না পরিজনদের। গোরক্ষপুরে। ছবি: এএফপি।

গত পাঁচ দিনে মারা গিয়েছে ৬৩টি শিশু। তার মধ্যে গত দু’দিনে ৩০ জন। এতগুলি শিশুর মৃত্যুতে স্বজনদের হাহাকারের মধ্যেও আজ দিনভর চলল তরজা। আগেই অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালের অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলেই এতগুলি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। যদিও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সকলেই বলে চলেছেন, অক্সিজেন সঙ্কটে নয়, মৃত্যু হয়েছে রোগে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নিজের কেন্দ্র গোরক্ষপুরের বিআরডি মেডিক্যাল কলেজের শিশুমৃত্যু নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনীতি। মুখ খুলেছেন মায়াবতী।

প্রবল চাপের মুখে পড়ে তড়িঘড়ি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ রাজীব মিশ্রকে সাসপেন্ড করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। তাঁর কথায়, ‘‘যা-ই ঘটে থাকুক না কেন, চিকিৎসার গাফিলতি তো রয়েইছে। দোষীদের কড়া শাস্তি হবে।’’ তবে রাজীবের দাবি, শিশুমৃত্যুর দায় নিয়ে তিনি নিজেই পদত্যাগ করেছেন।

কোন গাফিলতির কথা বলছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী?

বৃহস্পতিবার রাত থেকে সত্যিই হাসপাতালের অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সে আক্ষেপ কর্মীদেরই। অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহকারী বেসরকারি সংস্থাটির দাবি, ৬৩ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকার সিলিন্ডার কিনে মাত্র ৩৫ হাজার টাকা মিটিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বকেয়া না মেটালে যে অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হবে না, সেই হুঁশিয়ারি তারা আগেই দিয়েছিল। ১ অগস্টও তারা চিঠি দিয়ে শেষ বারের মতো বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়েছিল হাসপাতালকে।

অক্সিজেন সরবরাহের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালের চিফ মেডিক্যাল অফিসারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, মজুত অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রায় শেষ। রোগীদের বাঁচাতে হলে কিছু একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। এক সপ্তাহ আগেও চিঠি দিয়ে অক্সিজেনের অভাবের কথা জানানো হয় ওই কর্তাকে। কিন্তু জবাব না মেলায় ফের অনুরোধ করা হয় ওই দিন। লাভ অবশ্য হয়নি। বৃহস্পতিবার রাত থেকে ট্রমা সেন্টার, এনসেফ্যালাইটিস ওয়ার্ড ও সদ্যোজাতদের আইসিইউ— সর্বত্র অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

ঘণ্টায় ঘণ্টায় মৃত্যু বাড়তে থাকে। হাসপাতালের বাইরে ভিড় জমে সাংবাদিকদের। বাধ্য হয়ে হস্তক্ষেপ করেন জেলাশাসক রাজীব রৌটেলা। দাবি করেন, গত ৪৮ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৩০টি শিশুর মধ্যে ১৭টির মৃত্যু হয়েছে নিও-নেটাল ইউনিটে। ৫ জন মারা গিয়েছে এনসেফ্যালাইটিস ওয়ার্ডে। আর ৮টি জেনারেল ওয়ার্ডে। এবং প্রত্যেকেই মারা গিয়েছে রোগে ভুগে, অক্সিজেনের অভাবে নয়। অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হওয়ার কথা স্বীকার করেও রৌটেলার দাবি, ৫০টি সিলিন্ডার মজুত ছিল হাসপাতালে।

আরও পড়ুন:অন্তর্ঘাতের তত্ত্ব যোগীর শিবিরে

কিন্তু শুধুই কি অক্সিজেনের অভাবে ভুগছে বিআরডি হাসপাতাল?

হাহাকারের মধ্যেও কান পাতলে শোনা যাচ্ছে ‘অন্য রোগের’ কথা। গত দু’বছরে এখানে ‘ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন’ দফতরের নার্স, ওয়ার্ডবয়, এমনকী চিকিৎসকেরাও বেতন পাননি। এনসেফ্যালাইটিস ওয়ার্ডেরও একই হাল। পাঁচ মাস পরে ঠিক দু’দিন আগে তাঁদের অ্যাকাউন্টে মাইনে পড়েছে। নিও-নেটাল ইউনিটেও ছ’মাস মাইনে পাননি কেউ। অথচ কয়েক মাস আগে রাজ্যে ভোটের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ১৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গোরক্ষপুরে একটি নতুন এইমস তৈরি করা হবে।

গত বুধবার বিআরডি হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছিলেন আদিত্যনাথ। একটি নতুন আইসিইউ উদ্বোধন করেন। যোগী ও সিদ্ধার্থনাথের দাবি, ‘‘ডাক্তাররা কিছুই বলেননি সে দিন।’’ সেই আদিত্যনাথই কিন্তু আজ ইলাহাবাদের এক অনুষ্ঠানে আজ বলেন, ‘‘প্রকাশ্যে মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাস ও নোংরা পরিবেশের ফলে এনসেফ্যালাইটিসের মতো রোগ হয়। বিআরডি-র কথা শুনেছেন তো।’’ একে অক্সিজেন সঙ্কট আড়াল করার চেষ্টা বলেই মনে করছেন বিরোধীরা।

এটা ঘটনা, এই অঞ্চলে ‘জাপানি এনসেফ্যালাইটিস’ ও ‘অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিন্ড্রোম’ খুবই চেনা। প্রতি বছর বর্ষায় কয়েকশো শিশু জলবাহিত এই রোগে মারা যায়। নেতারা হাঁকডাক করেন। প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে যায়। ২০১৪-র ডিসেম্বরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রাজ্যের কাছে এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে জবাব তলব করেছিল। সেই জবাব মেলেনি। এ বছরও জানুয়ারি থেকে ৮ অগস্ট পর্যন্ত ৪৭৬ জন এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে ভর্তি হয়েছিল বিআরডি হাসপাতালে। ১১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

৫ দিনে ৬৩টি বা দু’দিনে ৩০টি শিশুর মৃত্যু নিয়ে সরকার ও বিরোধীদের এই তরজায় তিতিবিরক্ত স্থানীয়েরা। তাঁদের চোখেমুখে হতাশা, ‘‘মৃতদের পরিবার ছাড়া ওদের কাছে ৩০টি শিশু তো শুধুই সংখ্যা!’’

Gorakhpur Child Death যোগী আদিত্যনাথ Yogi Adityanath
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy