Advertisement
E-Paper

অখিলেশ যাদবকে পার্টি থেকেই বের করে দিলেন যাদব কুলপতি মুলায়ম

বছরের শেষ লগ্নে একটি মোক্ষম বোমা ফাটিয়ে পরিবারের মুষল-পর্বে নতুন মোচড় এনে দিলেন মুলায়ম সিংহ যাদব। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা বড় ছেলে অখিলেশ যাদবকে সমাজবাদী পার্টি থেকেই বের করে দিলেন যাদব কুলপতি!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৯
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

বছরের শেষ লগ্নে একটি মোক্ষম বোমা ফাটিয়ে পরিবারের মুষল-পর্বে নতুন মোচড় এনে দিলেন মুলায়ম সিংহ যাদব। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা বড় ছেলে অখিলেশ যাদবকে সমাজবাদী পার্টি থেকেই বের করে দিলেন যাদব কুলপতি! অখিলেশের ঘনিষ্ঠ তথা নিজের তুতো-ভাই রামগোপাল যাদবকেও বহিষ্কার করেছেন মুলায়ম।

বহিষ্কারের পরে এখন কি মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়তে হবে অখিলেশকে? বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, দল রাজ্যপালের কাছে মুখ্যমন্ত্রীকে অপসারণের দাবি জানালে ছ’মাসের মধ্যে আস্থা ভোটে জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে অখিলেশকে। তত দিন তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ চালানোর আবেদন জানাতে পারেন রাজ্যপাল। কিন্তু ঘটনা হল, সম্ভবত জানুয়ারির গোড়ায় উত্তরপ্রদেশে ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। তাই এখন নতুন করে আস্থা ভোটে যাওয়ার প্রয়োজন নেই অখিলেশের।

মুখ্যমন্ত্রীর গদি না হয় আপাতত টিকে গেল। কিন্তু অখিলেশ এ বারে কী করবেন?

কাল সকালে দলের নেতাদের বৈঠকে ডেকেছেন অখিলেশ। সপা-র একটি সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে সিংহ ভাগ নেতা-বিধায়ককে পাশে নিয়ে দাবি করতে পারেন, তাঁরাই আসল সমাজবাদী পার্টি। মুলায়মকেই পাল্টা দল থেকে বহিষ্কার করতে পারেন অখিলেশ। প্রয়োজনে রাজ্যপালের কাছে গিয়ে গরিষ্ঠতার প্রমাণও দেবেন। আসলে ভোটের মুখে সপা-র নির্বাচনী প্রতীক ‘সাইকেল’ হাতে রাখতে মরিয়া অখিলেশ। কারণ এই মুহূর্তে নতুন দল গড়ে ভোটে যাওয়া কঠিন। প্রতীক নিয়ে সমস্যা হবে। পুরনো প্রতীক হাতে থাকলে সেই সমস্যা মিটবে।

কিন্তু সেই চেষ্টা যদি ব্যর্থ হয়? দ্বিতীয় অঙ্কটিও মাথায় রাখছে অখিলেশ-শিবির। প্রায় মুছে যেতে বসা সমতা পার্টির সঙ্গে হাত মেলাতে পারেন তিনি। সাবেক জনতা দল ভেঙে ১৯৯৪ সালে সমতা পার্টি তৈরি করে‌ছিলেন জর্জ ফার্নান্ডেজ-নীতীশ কুমার। শরদ যাদবের সঙ্গে মিলে নীতীশ জেডি (ইউ) গঠন করার পরে সমতা পার্টি এখন শুধু নামেই টিকে রয়েছে। আর রয়েছে তাদের নির্বাচনী প্রতীক চিহ্ন ‘মশাল’। অখিলেশ সমতা পার্টির সঙ্গে হাত মেলালে প্রতীক সমস্যা মিটবে।

অখিলেশের মাথায় ঝুলছে টিকে থাকার প্রশ্নটাও। উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক ‘দঙ্গলে’ একদা কুস্তিগীর বাবা মুলায়মের প্যাঁচে আপাতত বিপাকে পড়লেও হার মানার বান্দা নন তিনি। দলের তরুণ প্রজন্মে‌র কাছে যথেষ্টই প্রিয় অখিলেশের সঙ্গে রাহুল গাঁধী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কও বেশ ভাল। অন্য একাধিক দলের কাছেও মুলায়মের তুলনায় অখিলেশ বেশি গ্রহণযোগ্য। বহিষ্কারের খবর পাওয়ার পরেই অখিলেশকে ফোন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি শক্ত থাকার পরামর্শও দিয়েছেন তৃণমূল-নেত্রী। রাহুল গাঁধীও ফোন করে কথা বলেছেন অখিলেশের সঙ্গে। স্বাভাবিক ভাবেই নতুন সমীকরণের গন্ধ পাচ্ছেন অনেকে। অখিলেশ-শিবির কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ার কথাই বলছে। কংগ্রেস এখনও স্পষ্ট কিছু জানায়নি। তবে ধর্মনিরপেক্ষ ভোট ভাগাভাগি হলে বিজেপি ফায়দা নেবে বলে আশঙ্কা তাদের। ফায়দা হতে পারে মায়াবতীর বিএসপি-রও। রাজ্যে তাদের ভোট অনেকটাই বাড়তে পারে। রাজ্য কংগ্রেসের একাংশ অবশ্য রাহুল-অখিলেশ কথা হওয়ায় জোটের সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী।

উত্তরপ্রদেশের অঙ্ক মাথায় রেখেই বিজেপিকে ঠেকাতে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের পথ খোলা রাখতে চেয়েছিলেন অখিলেশ। পাশাপাশি প্রার্থী তালিকা গড়ার ভার হাতে রেখে দলে নিজের নিয়ন্ত্রণটাও শক্ত রাখতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু চলতি সপ্তাহেই ছোট ভাই শিবপালকে সঙ্গে নিয়ে বিধানসভা ভোটের জন্য একটি প্রার্থী তালিকা বের করেছিলেন মুলায়ম। সেই তালিকায় অখিলেশ ঘনিষ্ঠ নেতা-মন্ত্রী-বিধায়কদের সিংহ ভাগের নাম যেমন ছিল না, তেমনই কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের পথও খুলে রাখা হয়নি বলে অখিলেশ শিবিরের মত। তার পরেই অখিলেশ কাল পাল্টা তালিকা প্রকাশ করেন। ভেবেছিলেন, চাপে পড়ে পিছু হটবেন মুলায়ম। কিন্তু সে সবের ধার দিয়েই হাঁটেননি সপা-চেয়ারম্যান। সন্ধ্যায় দু’জনকে ছ’বছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে জানালেন, দলকে বাঁচাতেই এমন সিদ্ধান্ত। অখিলেশকে তিনিই মুখ্যমন্ত্রী করেছেন। পরের মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, সেটাও তিনিই ঠিক করবেন। ইঙ্গিত দিলেন, প্রয়োজনে নিজেও মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন।

কিন্তু কেন এত বড় পদক্ষেপ করলেন মুলায়ম?

সপা সূত্রের মতে, মুলায়ম-শিবপাল জোটের সঙ্গে অখিলেশ-রামগোপাল জোটের লড়াই নতুন নয়। মাত্র মাস দুয়েক আগেই দুই শিবিরের যুদ্ধে দল প্রায় ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়েছিল। অখিলেশ-ঘনিষ্ঠদের সরিয়ে মুলায়ম-পরবর্তী সপা-য় নিজের নিয়ন্ত্রণ মজবুত করতে চাইছেন শিবপাল। তখন কোনও রকমে সমস্যা মেটানো হলেও অখিলেশ তখন বলে দিয়েছিলেন, টিকিট বণ্টনের বিষয়টি যেন তাঁর হাতে থাকে। সেটি না হওয়াতেই বিদ্রোহ করেন মুখ্যমন্ত্রী। গত কাল অখিলেশ পাল্টা প্রার্থী তালিকা সামনে আনার পরেই দ্রুত পট পরিবর্তন হতে থাকে। আজ সকালে অখিলেশ ও রামগোপালকে কারণ দর্শানোর নোটিস ধরানোর পরে সন্ধ্যায় শিবপালকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে বহিষ্কারের ফরমান শোনান নেতাজি।

দল থেকে বহিষ্কৃত রামগোপাল পাল্টা জানিয়েছেন, জবাব না শুনে যে ভাবে তাঁদের একতরফা বের করে দেওয়া হয়েছে, তা অসাংবিধানিক।

বিভ্রান্ত সপা কর্মীরা মনে করছেন, প্রতিটি বিষয়েই নেতাজি যে ভাবে ঘন ঘন পাল্টি খান, তাতে ক’দিনের মধ্যে বাপ-বেটার মিটমাট হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। আবার সেটা না-ও হতে পারে। কারণ, যাদব পরিবারের মহাভারতে শুধু মুলায়ম, শিবপাল, অখিলেশ, রামগোপালই মূল চরিত্র নন। অখিলেশ-শিবিরের দাবি, পর্দার আড়ালে অমর সিংহই আসলে কলকাঠি নাড়ছেন। অখিলেশকে উপেক্ষা করে শিবপালের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার নেপথ্যেও ‘আঙ্কেল’ অমর। আর এই যুদ্ধে অমর পাশে পেয়েছেন মুলায়মের দ্বিতীয় স্ত্রী সাধনা আর তাঁর ছেলে প্রতীককে। অমর-শিবপালের পিছনে রয়েছেন কর্পোরেট সংস্থার কিছু কুশীলবও।

মুলায়মের ঘোষণার পরেই লখনউয়ের পথেঘাটে ভিড়-জল্পনা। কোথাও কান্না, কোথাও বিষাদ, কোথাও উদ্বেগ। মাস দুয়েক আগের ছবিটাও প্রায় এই রকমই ছিল। এ বারেও কি তেমন হতে পারে? শুধু রামগোপালকে জব্দ করতেই কি নেতাজি এত কড়া পদক্ষেপ করলেন? আদরের টিপুকে কি তিনি ফিরিয়ে নেবেন? নেতাজিকে এ দিন জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি তো বাবা। অখিলেশ ক্ষমা চাইলে কি ফিরিয়ে নেবেন? মুলায়মের জবাব, ‘‘আগে হোক, তার পর দেখা যাবে।’’

এখন স্বস্তি শুধু বিজেপি শিবিরে। যাদব-বংশের এই যুদ্ধে আখেরে লাভ দেখছে তারাই। ধর্মনিরপেক্ষ ভোট ভাগাভাগি হলে আখেরে তাদেরই লাভ বলে একান্ত আলোচনায় মেনেও নিয়েছেন দলের একাধিক শীর্ষ নেতা। একই আশা মায়াবতীরও। গৃহযুদ্ধে সপা-র ঘর ভাঙলে লখনউয়ের কুর্সিতে ফেরার পথ খুলবে বলেই আশা ‘দলিত কি বেটি’র।

Mulayam Singh Yadav Akhilesh Yadav Ramgopal Yadav
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy