Advertisement
E-Paper

ক্ষোভের আঁচ সামাল দিতে কান্না মোদীর

কেঁদেই ফেললেন প্রধানমন্ত্রী! কাল জাপান থেকে হাসিমুখে হুঁশিয়ারি দিয়ে নরেন্দ্র মোদী বুঝিয়েছিলেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে পিছু হটবেন না। তার পর রাহুল গাঁধী টুইটারে বলেছিলেন, ‘‘গরিব ত্রস্ত, মোদী মস্ত! মোদী হাসছেন, গরিব কাঁদছেন!’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৫
গোয়ার সভায় নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

গোয়ার সভায় নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

কেঁদেই ফেললেন প্রধানমন্ত্রী!

কাল জাপান থেকে হাসিমুখে হুঁশিয়ারি দিয়ে নরেন্দ্র মোদী বুঝিয়েছিলেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে পিছু হটবেন না। তার পর রাহুল গাঁধী টুইটারে বলেছিলেন, ‘‘গরিব ত্রস্ত, মোদী মস্ত! মোদী হাসছেন, গরিব কাঁদছেন!’’ তার কয়েক ঘণ্টা পরে দেশে ফিরে আজ গোয়ায় এক সভায় দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেললেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী নিজেই! যার পরে মোদীর কান্নার ভিডিও টুইটারে পোস্ট করে রাহুল লিখলেন, ‘‘হাসির পর চোখের জল!’’

কান্না, আবেগ, হুঙ্কার, শ্রোতাদের অভিবাদন, হাততালি কুড়োনো— একেবারে নিঁখুত চিত্রনাট্য। শনিবার রাতে বিদেশের পাট চুকিয়ে দেশে ফিরেই আজ এক দিনে গোয়া, কর্নাটক ও মহারাষ্ট্র এই তিন রাজ্যে সফর সেরে ফেললেন মোদী। তিন জায়গাতেই তাঁর লক্ষ্য ছিল এক— বিদেশ সফরে বেরিয়ে পড়ার আগে ৫০০ ও হাজার টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমজনতার মধ্যে যে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে, সেটি প্রশমন করা। আর এই সূত্রে এককাট্টা হয়ে আসরে নামা বিরোধীদেরও একহাত নেওয়া। এবং এই কাজ করতে গিয়ে মোদী তাঁর ঝুলি থেকে সুকৌশলে বের করলেন নিজের পুরনো ঝাঁঝ আর নাটকীয় মেজাজটি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে সভার পর সভায় যে দক্ষতাকে ব্যবহার করে ভোটে বাজিমাত করেছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে বিদেশের বিভিন্ন সভাতেও যেটাকে ব্যবহার করে হাততালি কুড়িয়েছেন বিভিন্ন সময়ে।

‘‘আমি কুর্সির জন্য জন্মাইনি…’’ গোয়ায় প্রথম সভায় এ কথা বলতে গিয়েই গলা ধরে গেল মোদীর। খানিক চুপ থেকে বললেন, ‘‘দেশের জন্য ঘর-পরিবার ছেড়েছি। মোদীকে জ্যান্ত পুড়িয়ে দিলেও মোদী ভয় পায় না।’’ নিজের নাটকীয় বাগ্মিতাকে ব্যবহার করলেও মোদী অবশ্য আমজনতার ভোগান্তির কোনও আশু সমাধান বাতলে দিতে পারেননি এ দিন। দুর্নীতি দমনের আন্দোলনে দেশবাসীকে শরিক হওয়ার কথা বলে সেই ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্তই সময় কিনে নিলেন। নাটকীয় ভঙ্গিতে জানালেন, প্রাণ বাজি রেখেও তিনি দুর্নীতি দমনে বদ্ধপরিকর। সেই সঙ্গেই আর্জি, ‘‘৩০ ডিসেম্বরের পরে কোনও খামতি হলে মাথা পেতে সাজা নেব। এই ৫০টা দিন শুধু আমায় সাহায্য করুন।’’

গোয়ার এই আবেগঘন বক্তৃতা শেষে শ্রোতাদের দাঁড় করিয়ে প্রবল হাততালির মধ্যে মোদী বললেন, ‘‘আমি জানি, কোন শক্তির সঙ্গে আমি লড়াই শুরু করেছি। জানি, কারা আমার বিরুদ্ধে। ওঁদের ৭০ বছরের জমা কালো টাকা লুঠ করছি। আমাকে বাঁচতে দেবে না। বরবাদ করে দেবে।’’ সরাসরি না বললেও মোদীর ইঙ্গিত ছিল রাহুল গাঁধী তথা কংগ্রেসের দিকেই। দু’দিন আগে দিল্লির এক ব্যাঙ্কে নোট বদলের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন রাহুল। সেই লাইনে জনতার দুর্বোগ নিয়ে মোদীকে কটাক্ষও করেছিলেন কংগ্রেসের সহ-সঙাপতি। কর্নাটকের সভায় তারই পাল্টা দিতে গিয়ে মোদী বলেছেন, ‘‘যারা বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত, আজ তারাই চার হাজার টাকা বদলাতে লাইনে দাঁড়াচ্ছে!’’

মোদীর এই নাটুকে মেজাজ দেখে বিজেপি নেতারা বলছেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তটি একান্তই প্রধানমন্ত্রীর নিজের। মোদী নিজেও বলেছেন, গোটা বিষয়টি গোপন রেখে নেওয়া সিদ্ধান্ত তাঁর একারই। ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির দায়ও পুরোদস্তুর তাঁর একারই। জনতার এই ভোগান্তিকে পুঁজি করেই মোদীর বিরুদ্ধে একজোট হচ্ছে বিরোধীরা। এই চাপের মুখে পড়েই দেশে ফিরে এ ভাবে আসরে নামতে হয়েছে মোদীকে। এবং তিনি সেই পথের রাজনীতিই করলেন, যেটি গত কয়েক দিন ধরে রাহুল, কেজরীবাল, মমতারা করছেন। মমতা কাল মোদীকে বিঁধে বলেছিলেন, ‘‘এ বারে কি গুলি করবে?’’ আজ মোদী সেই ভাষাতেই পাল্টা বললেন, ‘‘মোদীকে জ্যান্ত পুড়িয়ে দিলেও মোদী ভয় পায় না।’’

কিন্তু নাটক, এত চোখের জলেও বাস্তবের চিঁড়ে ভিজল কই? উল্টে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িতরাই টাকা বদলের লাইনে দাঁড়াচ্ছে বলে মোদী যে মন্তব্য করেছেন, সেটা নিয়ে চূড়ান্ত আক্রমণাত্মক অরবিন্দ কেজরীবাল। তাঁর কথায়, ‘‘লাইনে দাঁড়ানো অজস্র মানুষকে সবচেয়ে বড় অপমানটা করলেন মোদী।’’ সেই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, নোট বাতিলের পুরো সিদ্ধান্তটিই ভাঁওতা। বিজেপি নেতা ও তাঁদের ঘনিষ্ঠেরা আগেই সুইস ব্যাঙ্ক, বেনামি সম্পত্তি ও ব্যাঙ্কে নিজেদের টাকা সরিয়ে ফেলেছে। নানা ভাবে মোদীকে বিঁধেছেন রাহুলও। আঁটঘাট বেঁধে সুর চড়াচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীদের বক্তব্য, মোদী-ঘনিষ্ঠ বড় পুঁজিপতিরাই ব্যাঙ্কের কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়েও শোধ না করে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে আর্থিক বোঝা চাপিয়েছে। নাটক না করে মোদী এই টাকা উসুল করলেই জনগণের লাভ হতো।

অনেকেই বলছেন, এ দিন মোদীর মূল লক্ষ্য ছিল আমজনতার অসন্তোষ প্রশমন করা। অথচ তাঁর হাতে সে রকম কোনও দাওয়াই নেই। তাই মরিয়া হয়েই চোখের জলে ক্ষোভের আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছেন। সেই সঙ্গেই কৌশলে দেশবাসীকে সৎ ও দুর্নীতিগ্রস্ত এই দুই ভাগে ভাগ করার চেষ্টা চালিয়েছেন। হেনস্থার শিকার দেশবাসীকে ‘ইমানদার’ সার্টিফিকেট দেওয়ার পাশাপাশিই বলেছেন, ‘‘ইমানদারদের ভরসায় গরিবদের জন্য এই কাজ করছি। বেইমানদের ছাড়ব না। যারা রাজনীতি করছে করুক। যারা লুঠ করেছে, কাঁদুক। দুর্নীতি রুখতে মগজে আরও প্রকল্প আছে।’’

Narendra Modi demonetization Goa
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy