Advertisement
E-Paper

সমাজের রাবণ বধের ডাক মোদীর

কয়েক মাস পরে উত্তরপ্রদেশে বিধানসভার ভোট। আর ক’দিন আগেই হয়ে গিয়েছে উরির বদলা হিসেবে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’। যা নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে কৃতিত্বের চাপানউতোর অব্যাহত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৬ ০২:০১
গদাধর। দশেরায় লখনউয়ে নরেন্দ্র মোদী। রয়েছেন রাজ্যপাল রাম নায়েক (বাঁ দিকে) এবং রাজনাথ সিংহ। —পিটিআই

গদাধর। দশেরায় লখনউয়ে নরেন্দ্র মোদী। রয়েছেন রাজ্যপাল রাম নায়েক (বাঁ দিকে) এবং রাজনাথ সিংহ। —পিটিআই

কয়েক মাস পরে উত্তরপ্রদেশে বিধানসভার ভোট। আর ক’দিন আগেই হয়ে গিয়েছে উরির বদলা হিসেবে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’। যা নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে কৃতিত্বের চাপানউতোর অব্যাহত। তার মধ্যেই দিল্লির রামলীলা ময়দানের বদলে লখনউয়ের দশেরা অনুষ্ঠানে এই প্রথম বার হাজির হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর পরে তাঁর প্রথম জনসভা। সেখানে অবশ্য ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নিয়ে শব্দ খরচ নয়। বরং বক্তৃতার শুরুতে ও শেষে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানে মাতিয়ে দিলেন আইসবাগের রামলীলা ময়দানে হাজির কয়েক হাজার মানুষকে। স্বাভাবিক ভাবেই মোদীর এই সফর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যার জেরে দেশের প্রাচীনতম দশেরা অনুষ্ঠানে এ বারে মিশে গেল রাজনীতি।

মোদী অবশ্য এ দিন দশেরার বক্তৃতায় এড়িয়ে গেলেন প্রত্যক্ষ রাজনীতির কথা। প্রত্যক্ষ এ কারণেই যে, উত্তরপ্রদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে তিনি হিন্দু ভোট-ব্যাঙ্ক চাঙ্গা করে গেলেন অতি কৌশলে।

সব মিলিয়ে মিনিট কুড়ির কিছু বেশি সময় বক্তৃতা দিয়েছেন মোদী। যার আগাগোড়া ছুঁয়ে ছিল পুরাণ, রামায়ণ আর বর্তমান সমাজের কথা। মাঝে মাঝে রাজনীতির ছোঁয়া। ‘জয় শ্রীরাম’ বলে জনতাকে উদ্বেল করার পাশাপাশিই মোদী বললেন, ‘‘আমার সৌভাগ্য যে আমি এমন একটা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরেছি। এই মাটিই তো জন্ম দিয়েছে রাম এবং কৃষ্ণের।’’ এই বক্তব্যে জনতা ফেটে পড়েছে স্বাভাবিক ভাবেই। চওড়া হয়েছে মঞ্চে উপস্থিত বিজেপি নেতাদের হাসি।

কখনও রামায়ণ, কখনও সন্ত্রাস, কখনও সমাজের নানা ব্যাধির কথা বলতে গিয়ে কখনও বলেছেন, ‘‘আমরা প্রতি বছর রাবণের মূর্তি জ্বালাই, কিন্তু তার থেকে কি কিছু শিক্ষা নিই?’’ মানুষের ভিতরেই লুকিয়ে থাকা অশুভই যে রাবণ, তা মনে করিয়ে দিয়ে মোদী এনেছেন সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ। তাঁর কথায়, ‘‘ভারত বুদ্ধের (জ্ঞান) দেশ, যুদ্ধের নয়।’’ তাঁর বক্তব্য, সন্ত্রাসবাদ মানবতার শত্রু। বলেছেন, দেশের ১২৫ কোটি মানুষ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একসুরে কথা বললে এই রাবণকে দমন করা যায়। সন্ত্রাস নিয়ে কথা বলতে গিয়েই নাম না করেও পাকিস্তানকে নিশানা করেছেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘যারা সন্ত্রাসকে সাহায্য করে, সন্ত্রাসে মদত দেয়, তাদের কোনও ভাবেই ছাড়া হবে না।’’

শুধু অবশ্য সন্ত্রাস নয়। মোদীর কথায়, ‘‘রাবণ এখন নানা রকম রূপ ধরে হানা দিয়েছে আমাদের সমাজে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দুর্নীতি, অপরিচ্ছন্নতা, চরিত্রহীনতা, ব্যাধি, অশিক্ষা ও কুসংস্কার— এগুলোই রাবণ।’’ তাঁর কথায়, ‘‘অশুভকে হারিয়ে শুভর জয়ের উৎসব এই দশেরা। আমাদের সবার লক্ষ্য হোক, নিজেদের অন্তরের অশুভকে ধ্বংস করা।’’ জটায়ুর কথা বলেছেন। মোদীর বক্তব্যে যিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রথম যোদ্ধা। মোদী বলেন, ‘‘জটায়ু এক নারীর সম্ভ্রম রক্ষার জন্য লড়াই করেছিলেন। আমরা যদি রাম না-ও হতে পারি, জটায়ু তো হতেই পারি এবং সন্ত্রাসকে রুখে দিতে পারি।’’

জটায়ুর প্রসঙ্গ থেকেই এসেছে মেয়েদের নিয়ে নিজের ভাবনার কথাও। মোদীর বক্তব্য, দেশের নারীদের উন্নতি দরকার। পুত্রসন্তানের সমতুল্য করেই তাদের গড়ে তোলা উচিত। এই প্রসঙ্গেই উত্তরভারতের এই রাজ্যে দাঁড়িয়ে কন্যাভ্রূণ হত্যা নিয়ে নিজের উদ্বেগ গোপন করেননি প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা প্রতিদিন সীতাকে গর্ভেই নষ্ট করে দিই!’’ জনতাকে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘প্রতিটি কন্যাসন্তানের জন্ম আমাদের উদ্‌যাপন করা উচিত।’’

মিনিট কুড়ির বক্তব্য শেষ করে খুব বেশিক্ষণ মঞ্চে থাকেননি মোদী। এমনকী যে উপলক্ষে এই সমাবেশ, সেই রাবণ-দহন অনুষ্ঠানের জন্যও অপেক্ষা করেননি তিনি। বিজেপি নেতারা অবশ্য তাতেই উচ্ছ্বসিত। তাঁদের বক্তব্য, রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে নন, মোদী এ দিন লখনউয়ে এসেছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তাঁর প্রতিটি কথায় ছিল তার ছোঁয়া।

বিরোধীরা অবশ্য স্বাভাবিক ভাবেই এ সব শুনতে বা মানতে রাজি নন। বহু বছর ধরেই প্রধানমন্ত্রী-সহ শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা দিল্লির রামলীলা ময়দানেই দশেরা উৎসবে যোগ দেন। স্বাভাবিক ভাবেই মোদী দিল্লির বদলে লখনউ আসার কথা ঘোষণা কতরার পরে বিরোধীরা বলেছিলেন, উত্তরপ্রদেশে ভোটকে সামনে রেখেই মোদীর এই রামলীলা-যাত্রা। এ দিন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনার পরে বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী থেকে কংগ্রেসের রাজ্য নেতা— সকলেই নিশ্চিত ভোটের অঙ্কেই উত্তরপ্রদেশে রামলীলায় যোগ দিয়েছেন মোদী। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত থাকলেও এই অনুষ্ঠানে যোগ দেননি মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। মোদীর সফরকে তীব্র কটাক্ষ করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমার মনে হয়, ভোটটা বিহারে হলে এ বারে রাবণকে সেখানেই জ্বালানো হতো!’’

narendra modi Terrorism surgical attack
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy