গোটা দিল্লি দূষণের কবলে।
গত রাত থেকেই হাওয়া বইতে শুরু করেছিল। তাতে সকাল থেকে ধোঁয়াশা সরে গিয়ে চারপাশ অনেকটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ঠিকই। তবে এর পরেও বাতাসে ক্ষতিকর কণা থেকে যাওয়ায় বদলায়নি দিল্লির দূষণের চিত্র।
টানা তিন দিন দূষণের কবলে থাকায় দিল্লির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ রাজ্য সরকারকে তুলোধনা করেছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। ধমক খেয়ে সোমবার থেকেই রাস্তায় জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেজরীবাল সরকার। আপাতত বন্ধ করা হয়েছে নির্মাণের কাজ। দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশে মেনে দিল্লিতে কৃত্রিম ভাবে বৃষ্টিপাত করানো যায় কি না, তা-ও যৌথ ভাবে খতিয়ে দেখছে দিল্লি ও কেন্দ্রীয় সরকার।
মঙ্গলবার থেকে গোটা দিল্লি দূষণের কবলে। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা পরিবেশ সংক্রান্ত সংস্থা ‘সফর’-এর মতে, মহানগরে আজ ক্ষতিকর ভাসমান কণা পিএম ১০ ও পিএম ২.৫-এর সূচক ছিল যথাক্রমে ৮৯৫ ও ৫৪৬। পরিবেশবিদদের মতে, মানবদেহের জন্য যা বেশি মাত্রায় ক্ষতিকর। দূষণের এই হাল দেখে উদ্বিগ্ন পরিবেশ আদালত আজ দিল্লি সরকারকে ভর্ৎসনা করে বলে, ‘‘মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারই তো কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।’’ যে এলাকায় পিএম ১০-এর সূচক ৬০০-র বেশি, সেখানে জল ছিটিয়ে দূষণ আটকানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:জিএসটি নিয়ে গব্বরকে চ্যালেঞ্জ ঠাকুর বলদেবের
তবে আগামী কালও যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে— এমন আশা করছেন না ‘সফর’-এর বিজ্ঞানীরা। বরং তাঁদের মতে, কালও বাতাসের মান খুবই খারাপ থাকবে। উদ্বেগের ছবি ফুটে উঠেছে নাসার কৃত্রিম উপগ্রহের পাঠানো চিত্রতেও। দেখা গিয়েছে, ৭ ও ৮ নভেম্বর পঞ্জাবের বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে আগাছা ও ফসলের গোড়া পোড়ানো হয়েছে। আগামী দু’-তিন দিনে সেই ধোঁয়া দিল্লিতে পৌঁছতে চলেছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। তবে এরই মধ্যে দিল্লি ও পঞ্জাব সরকারের মধ্যে সংঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পঞ্জাবে আগাছা পোড়ানোর বিষয় নিয়ে কথা বলতে মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চেয়েছিলেন কেজরীবাল। কিন্তু তা খারিজ করে অমরেন্দ্র বলেছেন, ‘‘কেজরীবাল অদ্ভুত মানুষ। কিছু না বুঝেই উনি মত দিয়ে দেন।’’ নেতিবাচক চিত্রের মধ্যে একমাত্র আশার আলো বায়ুপ্রবাহ শুরু হওয়া। গত রাত থেকে অল্প হলেও বাতাস বইতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বায়ু গবেষণা বিভাগের প্রধান দীপঙ্কর সাহার কথায়, ‘‘হাওয়া চললেই দূষণের চিত্র পাল্টাতে পারে।’’
দেরিতে হলেও নড়েচড়ে বসেছে দিল্লি সরকার। আজ থেকে ১৮৬ জোড়া অতিরিক্ত ট্রেন চালাচ্ছে মেট্রো। নামানো হয়েছে দমকলকেও। তারা আজ বিভিন্ন এলাকায় জল ছিটিয়ে দূষণ আটকানোর চেষ্টা করেছে। তবে এ দিন রাজ্যের তীব্র সমালোচনা করেছে পরিবেশ আদালত। দিল্লিতে ‘আপৎকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে’ মন্তব্য করে আদালত সরকারকে বলে, ‘‘দিল্লির হাল আপনারা খারাপ করেছেন। এ বার আদালত ঠিক করবে কী করার আছে।’’ দূষণে দায়ী কারখানাগুলি কেন বন্ধ করা হয়নি, সে প্রশ্ন তোলে আদালত। দিল্লির গ্যাস চেম্বারের দশা দেখে এইমস-এর চিকিৎসক রণদীপ গুলেরিয়ার সতর্কবার্তা, ‘‘এ ভাবে চললে আগামী দিনে শ্বাসজনিত সমস্যায় অন্তত ৩০ হাজার দিল্লিবাসী মারা যাবেন।’’ এরই মধ্যে দূষণ আটকানোর পরিকল্পনা করতে আজ সাত সদস্যের কমিটি গড়েছে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক।
আদালতের নির্দেশ
দিল্লি ও সংলগ্ন রাজধানী এলাকায়
• ফসলের গোড়া পোড়ানো যাবে না।
• সব নির্মাণকাজ বন্ধ। তবে শ্রমিকদের পাওনা দিতে হবে।
• যে সব শিল্প থেকে ধোঁয়া বেরোয় সেগুলি বন্ধ।
• নিয়মিত ভাবে রাস্তায় জল ছড়়াতে হবে।
• ১০ বছরের পুরনো ডিজেল ও ১৫ বছরের পুরনো পেট্রোল গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy