শিলচর স্টেশন। ছবি: স্বপন রায়।
শিলচর-কলকাতা, শিলচর-নয়াদিল্লি—রেল পথে এই সংযোগের সিদ্ধান্ত পাকা। স্বাভাবিক ভাবে পরের প্রশ্নই হল, কবে থেকে? নয়াদিল্লির রেল ভবন বা মালিগাঁওয়ের রেল-সদর কিন্তু কোনও তারিখ বলতে নারাজ। তাঁদের কথায়, আগামী বছরের আগে কোনও ভাবেই তা সম্ভব নয়। রেল ভবনের এক রাজনৈতিক সূত্র অবশ্য ইঙ্গিত দিয়েছেন: আগামী বছর, অসম বিধানসভা নির্বাচনের আগেই এই যোগাযোগকারী ট্রেন চালানোর চেষ্টা নিশ্চয় করা হবে।
রেল ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, শিয়ালদহ-গুয়াহাটি কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ও নয়াদিল্লি-গুয়াহাটি সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেসকে শিলচর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে। রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর সচিবালয়ের এক পদস্থ সূত্র জানিয়েছেন, প্রাথমিক এই সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা ঘোষণা করার বা চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঠিক করার সময় এখনও হয়নি। তিনি বলেন এর প্রধান কারণ একেবারেই পরিকাঠামোগত। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে কিছু কাজ করার পরেই ট্রেন সম্প্রসারণ করা হবে।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখপাত্র নৃপেন ভট্টাচার্য কার্যত রেল ভবনের বক্তব্যকেই আরও বিশদে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর কথায়, ট্রেন সম্প্রসারিত হলে শিলচর হবে দূরপাল্লার ট্রেনের ‘টার্মিনাল স্টেশন’। কিন্তু টার্মিনাল স্টেশন হওয়ার জন্য যে পরিকাঠামো প্রয়োজন তা এখন শিলচরে নেই। এবং সেই পরিকাঠামো খুব দ্রুত তৈরি করা সম্ভব নয়। তবে কাজ চলছে।
উল্লেখ্য, একটি দূরপাল্লার ট্রেন যখন তার যাত্রা শেষ করে তখন ট্রেনটি যথেষ্ট অপরিচ্ছন্ন থাকে। প্রথমত সেই ট্রেনের ভিতর বাইরে পরিষ্কার করতে হয়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হয় ট্রেনের প্রতিটি শৌচাগারকে। ট্রেন ধোলাই করার জন্য প্রয়োজনীয় শেড তৈরি থেকে শুরু করে ‘পিট লাইন’ বসাতে হয়। ট্রেনটির যান্ত্রিক পরীক্ষাও প্রয়োজন। পিট লাইনে নিয়ে গিয়ে ট্রেনটির নীচের অংশের চাকা, ব্রেক থেকে শুরু করে প্রতিটি যান্ত্রিক ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার-সুপারভাইজার ছাড়পত্র দিলে তবেই পরের যাত্রা শুরু করতে পারে ট্রেনটি। এরই পাশাপাশি, ট্রেন যাত্রীদের শোওয়ার জন্য কাচা বেড রোলের ব্যবস্থা ইত্যাদি করতে হয়। তার জন্যও শিলচর স্টেশনে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই। তা গড়তে হবে। পাশাপাশি গড়তে হবে ‘বেস কিচেন’। দূরপাল্লার ট্রেন-যাত্রীদের জন্য প্রথম মধ্যাহ্ন ভোজ বা নৈশ ভোজের ব্যবস্থা শিলচর থেকে করেই ট্রেনটিকে রওনা করাতে হবে। রেল সূত্রের বক্তব্য, ‘টার্মিনাল স্টেশন’-এ এই ধরনের যাবতীয় ব্যবস্থা গড়ে না তুলে দূরপাল্লার ট্রেন চালু করা যায় না। সেই কারণে, প্রচার বা জল্পনা যাই হোক না কেন, চলতি বছরেই দূরপাল্লার ট্রেন শিলচর থেকে চালানো সম্ভব নয়।
মালিগাঁওয়ে নৃপেনবাবু জানান, গত মার্চে ব্রডগেজ লাইন উদ্বোধনের পর যখন যাত্রী-ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল, তখনই উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের তত্কালীন জেনারেল ম্যানেজার রঞ্জিত্ সিংহ বির্দি রেল বোর্ডকে একটি সুপারিশ পত্র পাঠান। সেই সুপারিশ পত্রেই বলা হয়, যাত্রী-ট্রেন পরিষেবা চালু হলে পরবর্তী ক্ষেত্রে কলকাতা ও নয়াদিল্লির সঙ্গে শিলচরের সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপন করতে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ও সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেসকে শিলচর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। নয়াদিল্লির রেল ভবন সূত্র বলছে, বোর্ড বির্দির সেই সুপারিশ মেনেই প্রাথমিক ভাবে এই দু’টি ট্রেনের সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবং সেই কারণে শিলচরে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় জলের সংস্থান করা হচ্ছে। শীঘ্রই পিট লাইন তৈরির কাজেও হাত দেওয়া হবে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, গত ২১ নভেম্বর শিলচর-লামডিং ব্রডগেজ লাইনে যাত্রী-ট্রেন চলাচল শুরু হয়। কিন্তু এখন শিলচর থেকে লামডিং হয়ে যে যাত্রী ট্রেন চলাচল করছে, তাতে অতিরিক্ত ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ।
আগামী এক মাসের জন্য ওই ট্রেনে স্লিপার শ্রেণি ও বাতানুকূল শ্রেণির সব টিকিট শেষ। অনেকে টিকিট চেয়েও তা পাচ্ছেন না। সে কারণে, আলিপুরদুয়ার ও লামডিংয়ের মধ্যে যাতায়াতকারী ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসকে অবিলম্বে শিলচর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে।
যতদিন শিলচরে ব্রডগেজ ছিল না, ততদিন এক রকম কেটেছে। বরাকের মানুষ কষ্টও করেছেন প্রচুর। ব্রডগেজ হয়ে যাওয়ার পর সেই লাইনে যাত্রী-ট্রেন চলাচল শুরু হতেই বরাকবাসীর প্রথম দাবি ছিল, কলকাতা-নয়াদিল্লি-মুম্বইয়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ। যাত্রী-ট্রেন উদ্বোধনের দিন আনন্দবাজারের পাতায় বরাকের বিশিষ্ট মানুষরা তাঁদের সেই দাবিকে সরাসরি তুলে ধরেন। রেল ভবন সূত্রের বক্তব্য, মানুষের এই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই তাঁরা পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy