Advertisement
E-Paper

বুক ঠুকতে বারণ মোদীর, ক্ষান্তি নেই তরজায়

রামের সাজে নরেন্দ্র মোদী। দশানন নওয়াজ শরিফ। এই রাবণ খতম হোক আরও একটি সেনা অভিযানে। দশমীর আগেই এমন পোস্টারে ছয়লাপ উত্তরপ্রদেশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:৩৫

রামের সাজে নরেন্দ্র মোদী। দশানন নওয়াজ শরিফ। এই রাবণ খতম হোক আরও একটি সেনা অভিযানে। দশমীর আগেই এমন পোস্টারে ছয়লাপ উত্তরপ্রদেশ।

উরি হামলার পর সেনা অভিযান ঘিরে মোদীকে নিয়ে এই মাতামাতিতে তিতিবিরক্ত বিরোধী শিবির। সেনার ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর পর যে বিরোধীরা একজোট হয়ে সরকারের পাশে দাড়িয়েছিল, তারাই এখন বুঝছে রাজনীতির ক্ষীরটা খেয়ে নিচ্ছেন মোদীই। তাই বিরোধীরা এখন ওই সেনা অভিযান নিয়েই নানা ভাবে খোঁচাতে শুরু করেছেন মোদীকে। কংগ্রেস, আম আদমি পার্টির নেতারা কখনও প্রমাণ চাইছেন অভিযানের। কখনও বা সঞ্জয় নিরুপমের মতো নেতারা দাবি করছেন, পুরোটাই ধাপ্পা। নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে গিয়ে আদৌ কোনও ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালায়নি সেনা। ঠিক যেমনটি প্রথম দিন থেকেই বলে আসছে পাকিস্তান।

কিন্তু দেশের ভিতরেই এমন বেসুরো আওয়াজ উঠলে তা বিড়ম্বনার বৈকি! অবস্থা সামাল দিতে তাই আজ আসরে নামলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। সকালে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সতীর্থদের জানিয়ে দিলেন, সেনা অভিযান নিয়ে বুক ঠুকে আস্ফালনের কোনও প্রয়োজন নেই। যাঁদের বলা হবে, শুধু তাঁরাই এ নিয়ে মুখ খুলবেন। আর সেনা অভিযানের ‘প্রমাণ’ নিয়ে যাতে কোনও জটিলতা না থাকে, তার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হংসরাজ আহিরকে দিয়ে বলানো হল, সেনাবাহিনী অভিযানের যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ-নথি ও ফুটেজ সরকারকে দিয়েছে। কখন, কী ভাবে তা প্রকাশ করা হবে, কিংবা আদৌ করা হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী।

বিরোধী ও শাসক শিবিরের কাছে এটা স্পষ্ট যে, সেনা অভিযান নিয়ে রাজনীতি করছে দু’পক্ষই। বিজেপির বিতর্কিত সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী যে কারণে বলেই ফেলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিদের মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিতে পারেন কিন্তু সর্বত্র দলের আম কর্মীদের আবেগকে কী করে ঠেকানো যাবে?’’ যার অর্থ, মন্ত্রীরা সমঝে কথা বলবেন। কিন্তু নিচু তলায় মোদী-বন্দনা চলতেই থাকবে। কংগ্রেস এ দিন তাই ফের দাবি তুলেছে, যাবতীয় তথ্য প্রকাশ্যে আনা হোক।

কিন্তু এর জন্য সেনা অভিযানের ফুটেজ প্রকাশ্যে আনলে তার ঝক্কিও কম নয়। এ দিকটিও মাথায় রাখতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে। কারণ, যে ফুটেজই প্রকাশ্যে আনা হোক, পাকিস্তান তা সরাসরি অস্বীকার করবে। পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ আজ তাদের পার্লামেন্টে ঠিক সেটাই করেছেন। এ ছাড়া, ফুটেজ প্রকাশ করলে ভারতীয় সেনা-অভিযানের খুঁটিনাটি তথ্য পেয়ে যাবে পাকিস্তান। এমন নয় যে, এক বারের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকেই সন্ত্রাসের সমস্যা মিটে গিয়েছে। এর বিরুদ্ধে লড়াইটা চলছেই। এই অবস্থায় নিজেদের অভিযানের কৌশল শত্রুপক্ষকে জানিয়ে দেওয়াটা কাজের কথা নয়।

যে কারণে অভিযানের প্রমাণ প্রকাশ্যে আনার রাজনৈতিক দাবির মুখে আজ মুখ খুলেছেন প্রাক্তন সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর কর্তারা। জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরী, দীপক কপূর, জে জে সিংহ, সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর প্রাক্তন আইজি জে পি সিন্হারা একযোগে বলেছেন, কোনও মতেই ফুটেজ প্রকাশ করা উচিত নয়। সেনাবাহিনী কোনও রাজনৈতিক দলের কথায় চলে না। খোদ ডিজিএমও প্রকাশ্যে বলার পর, সেনাবাহিনীর উপরে গোটা দেশের ভরসা রাখা উচিত।

সংশয় তবে কাটবে কী ভাবে?

সরকার ও বিজেপি ভরসা রাখছে সংবাদমাধ্যমের উপরে। লোকজনকে নিয়ন্ত্রণরেখার ও-পারের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাতে অভিযানের সত্যতা তাঁরা আত্মীয়দের কাছ থেকেই জেনে নিতে পারেন। তাতে কাজও হচ্ছে। দেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবর, ও-পারের লোকজনই জানাচ্ছেন, ২৯ সেপ্টেম্বর সত্যিই ভারতীয় সেনা অভিযান চালিয়েছিল। গাড়িতে জঙ্গিদের দেহগুলি সরিয়ে নিতেও দেখেছেন তাঁরা। ভারতের একটি সাংবাদ চ্যানেলের দাবি, তাদের এক সাংবাদিক নিজেকে পাক সেনা অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফোন করেছিলেন পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মিরপুর রেঞ্জের এসপি (‌স্পেশাল ব্রাঞ্চ) গুলাম আকবরকে। গুলাম কবুল করেন, ঘণ্টাখানেক ধরে বেশ কয়েক জায়গায় অভিযান হয়। অপ্রস্তুত পাক সেনার ৫ জন এতে মারা গিয়েছে। দ্রুত জঙ্গিদের দেহগুলি অ্যাম্বুল্যান্সে সরিয়ে ফেলে পাক সেনা। কফিন পরীক্ষার নাম করে জঙ্গিদের দেহ বিভিন্ন গ্রামে কবর দেওয়া হয়েছে। ভারতের ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রণবীর সিংহ ৩০ সেপ্টেম্বর যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, তার সত্যতা গুলাম কবুল করেছেন বলে দাবি ওই সংবাদ-চ্যানেলটির। বিজেপি কার্যত ওই সব খবরে সিলমোহর দিয়েছে। দলের সভাপতি অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ সচিব শীকান্ত শর্মা বলেন, ‘‘খবরে যা বেরিয়েছে, সেটাই প্রমাণ ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ হয়েছে। বিরোধীরা আর কী প্রমাণ চান!’’ বিরোধীদের থামাতে পাল্টা তিনটি প্রশ্নও তুলছে বিজেপি। তা হল: • ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ যদি না-ই হয়ে থাকে, হাফিজ সইদ কেন এর বদলা নেওয়ার কথা বলছে? নওয়াজ শরিফ বেমালুম চেপে গেলে কী হবে, হাফিজের হুমকি ভিডিও রয়েছে। • কেনই বা অভিযান শেষ হওয়ার আগেই আমেরিকা থেকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে ফোন করা হয়? • পাকিস্তানই বা কেন বিষয়টি নিয়ে তেড়েফুঁড়ে ভাষণবাজি করছে এবং সেনা-তৎপরতা বাড়িয়েছে?

জবাব রয়েছে প্রশ্নগুলিরই মধ্যেই। তাতেও তরজা অবশ্য থামছে না।

surgical strikes modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy