Advertisement
E-Paper

রাশ টানার চেষ্টাই নেই ভোটের কালো টাকায়

নরেন্দ্র মোদী হুঙ্কার ছাড়ছেন ঠিকই। কিন্তু অভিযোগ, রাজনৈতিক দলগুলির তহবিলকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখা হচ্ছে। সেই সুযোগে রাজনৈতিক দলগুলির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যত খুশি পুরনো ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট জমা পড়তে পারে।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩২

নরেন্দ্র মোদী হুঙ্কার ছাড়ছেন ঠিকই। কিন্তু অভিযোগ, রাজনৈতিক দলগুলির তহবিলকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখা হচ্ছে। সেই সুযোগে রাজনৈতিক দলগুলির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যত খুশি পুরনো ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট জমা পড়তে পারে। আয়কর দফতর বা সিবিআই, কেউই তার খোঁজখবর করবে না। এ জন্য তাদের কোনও জরিমানাও দিতে হবে না। অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তাদের কথায় বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাওয়ায়, নতুন করে নির্বাচনী সংস্কারের দাবি উঠল। এ প্রশ্নও উঠেছে— সব জেনেও কেন প্রধানমন্ত্রী হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন?

এক মাস আগে সব দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মোদী। বলেন, ভোটে লড়ার খরচ সরকার বহন করতে পারে কি না, এ বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করা উচিত। যুক্তি হল, সরকার দলগুলিকে ভোটে লড়ার খরচ দিলে কালো টাকার কারবারে রামধাক্কা দেওয়া যাবে, দুর্নীতিতেও রাশ টানা যাবে। কারণ যে সব সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দেয়, তারাই পরে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে। এই বৈঠকের পর এক মাস কেটে গেলেও এ ব্যাপারে কোনও প্রস্তাব কেন্দ্রের তরফে নির্বাচন কমিশনে পৌঁছয়নি।

আমজনতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করা পুরনো নোটের উপর আয়কর দফতরের নজরদারি হলে রাজনৈতিক দলগুলি কেন ছাড় পাবে, আজ টুইটারে সে প্রশ্ন তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এই সময় সরকারের শীর্ষ কর্তাদের মন্তব্যের পিছনে অন্য উদ্দেশ্য থাকতে পারে। নোট বাতিলের নিয়ম সকলের জন্যই এক হওয়া উচিত। কী ভাবে ওরা আমজনতা ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে ভেদাভেদ করছেন? ’’ তৃণমূলনেত্রী বরাবরই সরকারি খরচে ভোট করার পক্ষে। রাজ্যে মমতার প্রতিপক্ষ সিপিএমও বরাবর সরকারি খরচে ভোট চেয়েছে। প্রাক্তন নির্বাচনী কমিশনার এস ওয়াই কুরেশির কথায়, ‘‘এই ব্যবস্থা রূপায়ণের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও প্রভাব, দু’টোই মোদীর রয়েছে।’’

কিন্তু মোদী কী করছেন? সরকারি সূত্রের খবর, একই সময়ে লোকসভা ও রাজ্যগুলির বিধানসভা ভোট করার খুঁটিনাটি দিকগুলি নিয়ে আইন মন্ত্রক আলোচনা শুরু করেছে, কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলির তহবিলে নজরদারি নিয়ে কোনও প্রস্তাবই নেই। অথচ গত বছরই আইন কমিশন সুপারিশ করে, কর্পোরেট সংস্থাগুলির চাঁদার ক্ষেত্রে আরও তথ্য প্রকাশ্যে আসুক। এ দিনও অর্থ মন্ত্রকের তরফে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে— রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়কর দিতে হয় না বটে, তবে তাদের খরচপত্রের হিসেব পরীক্ষা করার সংস্থান রয়েছে।অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এ দিন যুক্তি দিয়েছেন, আয়কর আইনে কোনও পরিবর্তন মোদী সরকার করেনি। ১৫-২০ বছর ধরে যা চলে এসেছে, তাই চলছে। নতুন করে প্রশ্ন তোলা তাই অনুচিত।

বর্তমান ব্যবস্থা অনুযায়ী, নথিভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলিকে নির্বাচন কমিশন ও আয়কর দফতরের কাছে শুধু জমা-খরচের হিসেব পেশ করতে হয়। যাঁরা ২০ হাজার টাকার কমে চাঁদা দিচ্ছেন, তাঁদের নাম-ঠিকানাও জানাতে হয় না। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এডিআর-এর হিসেব অনুযায়ী, ২০১৪-’১৫-এ এই অজ্ঞাত উৎস থেকে দলগুলির আয়ের পরিমাণ প্রায় ৬৮৫ কোটি টাকা, যা তাদের মোট আয়ের ৫৪%। এডিআর-এর অন্যতম কর্ণধার জগদীপ ছোকারের কটাক্ষ, ‘‘কোনও সংস্কারই করা হবে না। এ সব মানুষের নজর ঘোরানোর চেষ্টা।’’

প্রদীপের নীচেই...

• ২০ হাজার টাকার কম চাঁদায় নাম-ধাম ‘অজ্ঞাত’

• গত বছর ‘অজ্ঞাত’ উৎস থেকে দলগুলির আয় ৬৮৫ কোটি টাকা

• এই টাকা দলের মোট আয়ের ৫৪ শতাংশ

• রাজনৈতিক দলগুলির আয়ে কর দিতে হয় না

• বাতিল নোট দলের অ্যাকাউন্টে জমা পড়লেও তাই নজরদারি হবে না

Black money political party
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy