Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

নয়া নোটে দুর্নীতি বেড়েছে, দাবি চিদম্বরমের

নোট বাতিলের পরের ঘটনা। এটিএম-ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারে ২০০০ টাকার নোট অমিল। ৫০০ তো নেই-ই। চার দিকে নোটের হাহাকার। তার মধ্যেই দিল্লি, কর্নাটক মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ুতে একের পর এক তল্লাশিতে উদ্ধার হচ্ছে তাড়া তাড়া ২০০০ টাকার নোট।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৮
Share: Save:

নোট বাতিলের পরের ঘটনা। এটিএম-ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারে ২০০০ টাকার নোট অমিল। ৫০০ তো নেই-ই। চার দিকে নোটের হাহাকার। তার মধ্যেই দিল্লি, কর্নাটক মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ুতে একের পর এক তল্লাশিতে উদ্ধার হচ্ছে তাড়া তাড়া ২০০০ টাকার নোট।

আজ সেই ঘটনাই তুলে ধরে নোট বাতিলকে ‘২০১৬-র সবথেকে বড় কেলেঙ্কারি’ বলে আখ্যা দিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। নরেন্দ্র মোদী সরকারের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কী ভাবে ওই নোট গেল ওঁদের কাছে? দিল্লির এক আইনজীবীর বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকার নতুন নোট উদ্ধার হল! ওঁরা কোথা থেকে পেলেন এই নোট? এর তদন্ত করেছেন? রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ছাপাখানা থেকে সোজা ওঁদের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল?’’

আজ রাজ্যসভায় বাজেট-বিতর্কে চিদম্বরমের এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাননি মোদী সরকারের কেউই। রাজ্যসভায় চিদম্বরমের ওই বক্তৃতার পর লোকসভায় বাজেট বিতর্কের জবাব দেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সেখানে কংগ্রেসের অন্যান্য সমালোচনার জবাব দিলেও এই বিষয়ে নীরবই থেকেছেন তিনি। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারাও মানছেন, আয়কর দফতর এবং অন্যান্য সংস্থার তদন্তেও এই রহস্যের সমাধান হয়নি। চিদম্বরমের বক্তব্য, এর অর্থ হল, নোট বাতিলের পরে দুর্নীতি ও কালো টাকার রমরমা আরও বেড়েছে। যাঁকে আগে স্যুটকেসে করে নোট নিয়ে যেতে হতো, ২০০০ টাকা এসে যাওয়ায় এখন ব্রিফকেস নিয়ে যেতে হচ্ছে!’’

নোট বাতিলকে কেলেঙ্কারি বলার পাশাপাশি এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আজ চিদম্বরম বলেন, ‘‘প্রথমে পুরনো নোটে ১৭ লক্ষ কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নেওয়া হল। সরকার বলছে, শেষ হিসেব পর্যন্ত নতুন নোটে ৯ লক্ষ কোটি টাকা বাজারে ছাড়া হয়েছে। তা হলে একবার ডিমনিটাইজ করে আবার রিমনিটাইজ করার অর্থ কী?’’

জেটলি থেকে শুরু করে অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষকর্তা— সকলেই দাবি করেছেন নোট বাতিলের ফলে অর্থনীতিতে সাময়িক ধাক্কা লাগলেও আগামী অর্থবর্ষে এর কোনও প্রভাব পড়বে না। কিন্তু আজ চিদম্বরম বলেন, ‘‘আমার মতে, চলতি অর্থবর্ষে জিডিপি ১ থেকে ১.৫ শতাংশ কমবে। ভাগ্য খুব খারাপ হলে তা ২ শতাংশেও পৌঁছতে পারে। ২০১৭-’১৮-তেও এই ধারা বজায় থাকবে।’’

বাজেটের পর গত কালই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রথম সুদ নীতির পর্যালোচনায় বসেছিল। অরুণ জেটলি দাবি করছিলেন, নোট বাতিলের ফলে ব্যাঙ্কে জমার পরিমাণ বেড়েছে। এর ফলে সুদের হার কমবে। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার কমানোর পথে হাঁটেনি। এমনকী ভবিষ্যতে কমাবে, এমন ইঙ্গিতও দেয়নি। চিদম্বরমের বক্তব্য, এ হল বাজেটের প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনাস্থা। বাজেটে যে পরিমাণ আর্থিক বৃদ্ধি, রাজকোষ ঘাটতি, রাজস্ব আয় বা ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে, তার কোনওটাই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বিশ্বাস করছে না। মোদী জমানায় বেসরকারি লগ্নির বিপুল ঘাটতি নিয়েও প্রশ্ন তুলে চিদম্বরম বলেন, ‘‘এখন নতুন চাকরি কোথা থেকে হবে?’’ তাঁর যুক্তি, বাজেটে চাকরি তৈরির কোনও উপায় রাখা হয়নি। অথচ চাকরি-রোজগারের অভাবে দেশ বারুদের স্তূপ হয়ে

উঠছে। একটি ফুলকিতেই আগুন লেগে যেতে পারে।

জেটলি লোকসভায় পাল্টা দাবি করেছেন, বাজেটে পরিকাঠামো খাতে বিপুল অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। সেখান থেকেই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। তাঁর অভিযোগ, ইউপিএ-সরকার যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করত, বাস্তবে তার থেকে প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা কম খরচ করত। একই সঙ্গে জেটলির দাবি, বেসরকারি লগ্নি আসছে না বলেই তিনি কর্মসংস্থানের জন্য সরকারি ব্যয়বরাদ্দ বাড়াচ্ছেন। যদিও জেটলির এই দাবি খারিজ

করে চিদম্বরমের অভিযোগ, নোট বাতিলের ধাক্কায় ৪০ কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

P chidambaram Demonetization
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE