Advertisement
E-Paper

পঞ্জাব-হরিয়ানা জুড়ে তাণ্ডব ভক্তদের, আগুন-ভাঙচুর-গুলি, হত ২৯

বাবা রাম রহিমের সমর্থকরা হিংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু করে দিলেন। ধর্ষণ মামলায় রাম রহিম দোষী সাব্যস্ত হতেই গোলমাল শুরু পঞ্জাব-হরিয়ানার বিভিন্ন অংশে। একাধিক থানা, রেল স্টেশনে আগুন।

জ্বলছে গাড়ি, মোটরবাইক। বেনজির তাণ্ডব চলছে পাঁচকুলায়। ছবি: এবিপি নিউজ।

জ্বলছে গাড়ি, মোটরবাইক। বেনজির তাণ্ডব চলছে পাঁচকুলায়। ছবি: এবিপি নিউজ।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৭ ১৬:২৭
Share
Save

লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ডেরা সচ্চা সৌদা অনুগামীদের প্রবল তাণ্ডব এবং তাদের সহ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধে মৃতের সংখ্যা পৌঁছে গেল ২৯-এ। শুক্রবার পাঁচকুলার বিশেষ সিবিআই আদালত ধর্ষণ মামলায় ডেরা প্রধান বাবা রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করতেই উত্তাল হয়ে ওঠে পঞ্জাব-হরিয়ানা। প্রথমে আদলত চত্বরের বাইরে শুরু হয়ে যায় প্রবল তাণ্ডব। লাঠি, বাঁশ, ইট-পাথর নিয়ে পুলিশের উপর হামলা হয়। লাঠি চালিয়ে এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে পুলিশ গুলি চালায় বলে খবর। অন্তত ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। জখম প্রায় ২৫০ জন। তবে গোলমাল শুধু পাঁচকুলায় সীমাবদ্ধ নেই। পঞ্জাবের দু’টি রেলওয়ে স্টেশনে ইতিমধ্যেই আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন রাম রহিমের অনুগামীরা। দুই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় থানা এবং সরকারি দফতরে আগুন লাগানো হয়েছে। পাঁচকুলায় জারি হয়েছে কার্ফু। পঞ্জাবের ভাতিন্ডা, মনসা, মুকতাসর, ফিরোজপুরেও কার্ফু জারি হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ হিংসাত্মক ঘটনাবলীর নিন্দা করেছেন। টুইটারে তাঁর বার্তা, ‘‘আদালতের রায় ঘোষণার পরে হিংসা এবং সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করা ভীষণ ভাবে নিন্দনীয়, সব নাগরিকের কাছে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংহও এ দিন একই আহ্বান জানিয়েছেন। পঞ্জাব ও হরিয়ানার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীও।

আরও পড়ুন: যৌন নির্যাতনে নাম জড়িয়েছে এই ধর্মগুরুদেরও

অশান্তি শুরু হতেই পাঁচকুলায় কার্ফু জারি করেছিল প্রশাসন। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। পুলিশের সঙ্গে প্রবল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন ডেরা অনুগামীরা। লাঠি চার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনা যায়নি। তাই পুলিশ গুলি চালিয়েছে বলে খবর। পুলিশের গুলিতেই ডেরা অনুগামীদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে প্রশাসনিক সূত্রে এখনও সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

রায় ঘোষণার পর পুলিশের সঙ্গে বাবা রাম রহিমের অনুগামীদের প্রবল সংঘর্ষ পাঁচকুলায়। ছবি: এবিপি নিউজ।

ডেরা সচ্চা সৌদার সদর দফতর যেখানে, হরিয়ানার সেই সিরসাতেও তাণ্ডব প্রবল আকার নেয় এ দিন। পুলিশের সঙ্গে সেখানেও সংঘর্ষ হয় ডেরা অনুগামীদের। বাবা রাম রহিমের ভক্তদের হাতে সিরসায় আক্রান্ত হয়েছে সংবাদমাধ্যমও। তবে শুধু সিরসাতে নয়, পাঁচকুলাতেও সংবাদমাধ্যম আক্রান্ত হয়েছে। মিডিয়ার একাধিক গাড়ি এবং ওবি ভ্যান নষ্ট করে দিয়েছে হামলাকারীরা।

পাঁচকুলায় থানা এবং বিভিন্ন সরকারি দফতরে রাম রহিমের ভক্তরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। গোটা শহরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। আগুন লাগানো হয়েছে বহু গাড়িতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ৬ কলাম সেনা পাঠানো হয়েছে পাঁচকুলায়।

আরও পড়ুন: বর্ণময় এবং বিতর্কিত, কে এই রাম রহিম

পরিস্থিতি প্রবল উত্তপ্ত পঞ্জাবেও। ভাতিন্ডা এবং মলোত রেলওয়ে স্টেশনে তাণ্ডবকারীরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে দিল্লিতেও। রাজধানীর আনন্দ বিহার রেলওয়ে স্টেশনে একটি ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর। উত্তর-পূর্ব দিল্লির লোনি চকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে একটি বাসও, খবর দিল্লি পুলিশ সূত্রের।

পঞ্জাব এবং হরিয়ানার পরিস্থিতি নিয়ে এ দিন প্রবল অসন্তোষ প্রকাশ করেছে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট। তাণ্ডবকারীদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করার অভিযোগ দায়ের করতে পুলিশকে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে। ডেরা অনুগামীদের তাণ্ডবে যে সব সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ ডেরার সচ্চা সৌদার কাছ থেকেই আদায় করতে বলেছে হাইকোর্ট। তার জন্য ডেরা সচ্চা সৌদার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হরিয়ানা সরকারের তরফে অতিরিক্ত মুখ্যসচিব রাম নিবাস জানিয়েছেন, ডেরা অনুগামীদের তাণ্ডবে মিডিয়ার এবং অন্যদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সরকার তার পূরণের বন্দোবস্ত করবে।

আরও পড়ুন: ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত রাম রহিম, সাজা ঘোষণা সোমবার

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ফোনে কথা বলেছেন পঞ্জাব ও হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ এবং মনোহরলাল খট্টরের সঙ্গে। অশান্তি রুখতে পঞ্জাবে কড়া হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে রাজনাথকে জানিয়েছেন অমরেন্দ্র। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরও জানিয়েছিলেন যে, ধর্ষণের মামলায় রায় যা-ই হোক, পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে যাবে না, পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু শুক্রবার বিশেষ সিবিআই আদালত বাবা রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করতেই গোটা হরিয়ানার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে বাবে ভেঙে পড়েছে, তাতে স্পষ্ট যে খট্টরের প্রতিশ্রুতি ভিত্তিহীন ছিল। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ডেরা সমর্থকদেরকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। বাবা রাম রহিম নিজেও শান্তিই চাইছেন, জানানো হয়েছে সরকারের তরফে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই। দুই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা এখন তাণ্ডবের গ্রাসে। হরিয়ানা সীমান্ত সিল করে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লির পুলিশ কিন্তু তা সত্ত্বেও দিল্লিতে অশান্তি ছড়িয়ে পড়া রোখা যায়নি। উত্তরাখণ্ড থেকেও অশান্তির খবর পাওয়া যাচ্ছে।

Dera Sacha Sauda Gurmeet Ram Rahim Singh Punjab Haryana Violent Protest Clashes ডেরা সচ্চা সৌদা গুরমিত রাম রহিম সিংহ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy