Advertisement
E-Paper

প্রধানমন্ত্রীকে বাহবা দিলেন অমিত, বাজেট কি মোদীই বানালেন, চর্চা তুঙ্গে

শুক্লা পঞ্চমীতে বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু বাজেটটা কার? অরুণ জেটলির না কি নরেন্দ্র মোদীর? রাজধানীর অলিন্দে এখন এটাই প্রশ্ন।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪১
রাজ্যসভায় দু’জনে। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।

রাজ্যসভায় দু’জনে। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।

শুক্লা পঞ্চমীতে বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু বাজেটটা কার? অরুণ জেটলির না কি নরেন্দ্র মোদীর? রাজধানীর অলিন্দে এখন এটাই প্রশ্ন।

অর্থমন্ত্রী বাজেট তৈরি করবেন, বাজেটের দিন তা পেশ করবেন, সেটাই দস্তুর। কিন্তু নর্থ ব্লকে কান পাতলেই শোনা যায়, মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই নিঃশব্দে সেই চেনা দস্তুরটাও বদলে গিয়েছে। এখন আর নর্থ ব্লক নয়, বাজেট তৈরি হয় রাইসিনা হিলের অন্য পারে, সাউথ ব্লকে। প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানেই তাঁর দফতরে বাজেটটি তৈরি হয় অর্থ মন্ত্রকের কয়েক জন সচিবকে সঙ্গে নিয়ে। আর বাজেট প্রক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রীর প্রবেশ ঘটে অনেক পরে। এনডিএ সরকারের একটি সূত্রের যুক্তি, বিদেশমন্ত্রী নন, বিদেশনীতি ঠিক করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীই যেমন মূল ভূমিকা নিয়ে থাকেন, বাজেটের ক্ষেত্রেও বিষয়টা আলাদা কিছু নয়। তবে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত জেটলি জানতেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় ছিল। সেই বিষয়টিই বাজেট নিয়ে জল্পনা উস্কে দিয়েছে।

অনেকে বলছেন, তা হলে জেটলি এ বার কি শুধুই নর্থ ব্লকে হালুয়া তৈরির খুন্তি নাড়িয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাজেট তৈরি শেষ করেছেন? আর শেষ বাজারে বাজেট বিবৃতিতে নিজের পছন্দের কয়েকটি কবিতা জুড়ে দিয়েই কাজ শেষ হয়েছে তাঁর? বিজেপি সূত্র জানাচ্ছে, এমন নয় যে জেটলিকে আলোচনার প্রক্রিয়ায় বাদ দেওয়া হয়েছিল। তবে কয়েক জন শীর্ষ আমলাকে নিয়ে বাজেটের মূল সিদ্ধান্তগুলি মোদীই নিয়েছেন।

বিষয়টি যে নিছক গুজব নয়, সেটি আরও স্পষ্ট কারণ বাজেট বিবৃতির পরতে পরতে ভোটের কথা মাথায় রেখে মোদীরই রাজনৈতিক বার্তাটি ছত্রে ছত্রে গোঁজা। আর বাজেটের পর প্রধানমন্ত্রীরই বিশ্বস্ত সেনাপতি অমিত শাহের গলায় শুধুই মোদীর জয়গান। বাজেটের গোটা কৃতিত্ব মোদীকে দিয়ে অমিত বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বাজেটের মাধ্যমে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছেন। এটি গ্রাম ও কৃষকের বাজেট। গরিব, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তের স্বপ্ন পূরণের বাজেট। সত্তর বছরের দুর্নীতি ঘুচিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বচ্ছতা এনেছেন। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বিজেপির কোটি কোটি কর্মীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।’’

ঘরোয়া স্তরে বিজেপি নেতারাও স্বীকার করছেন, এ বাজেট আসলে মোদীরই বাজেট। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী একা নিয়েছেন। সেই ধাক্কা সামলানোর দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী কী করেই বা অর্থমন্ত্রীর হাতে ছেড়ে দেন?’’ তাঁর যুক্তি, উত্তরপ্রদেশের ভোটই হোক বা পরের লোকসভার বড় পরীক্ষা— বিজেপির একমাত্র বাজি মোদীই। দায় ও দায়িত্ব দুটোই তাঁর। তাই এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়, মোদী বাজেট তৈরির কাজটিও নিজের হাতেই রাখবেন।

তবে প্রধানমন্ত্রী ‘মিত্রোঁ’ সম্বোধন করে যে ধরনের বিস্ফোরক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন, যেমনটি তিনি নোট বাতিলের ক্ষেত্রে করেছেন, বাজেটে তেমন কোনও গোলা বর্ষণ হয়নি। যা দেখে অনেকে মনে করছেন, নোট বাতিলের জেরে অর্থ মন্ত্রকের যে অসুবিধা হচ্ছিল, সেটা উপলব্ধি করে আমলাতন্ত্রের উপরেই বাজেট তৈরির কাজ ছেড়ে দিয়েছিলেন মোদী। সে ক্ষেত্রে অনেকের যুক্তি, তা হলে বাজেট কি নর্থ ব্লকের? যদিও প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রের খবর, নোট বাতিলের পরে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা ভেবেই মোদী বড় ধরনের কোনও শক থেরাপির দিকে এগোননি। বরং আর্থিক উপদেষ্টাদের এমন বার্তা দিয়েছেন যাতে সংস্কার থেকে সরে না গিয়েও গরিব মানুষের বাজেট তৈরি করা যায়।

আর সে কারণেই রাহুল গাঁধীদের ‘স্যুট-বুট’ সরকারের অভিযোগের মুখে নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে নিজেকে নিরন্তর ‘গরিবের মসিহা’ হিসেবে মেলে ধরার চেষ্টা করছেন, তারই ছাপ স্পষ্ট বাজেটে। আয়করে ছাড় দেওয়ার সময়ও অর্থমন্ত্রী নোট বাতিলের পর ‘সৎ আয়করদাতা’দের সুরাহা দেওয়ার দাবি করলেও আখেরে মোদী বোঝাতে চেয়েছেন, তাঁর নজর শুধুমাত্র ‘সৎ’ গরিবদের উপরেই। বোঝাতে চেয়েছেন, গরিবদের জন্যই ছাড় বেশি, তা না হলে বড়লোকরা ‘সৎ’ হলেও তাঁদের

উপরে চাপানো হয়েছে বাড়তি বোঝা। ঠিক যেমন নোট বাতিলের পর রবিনহুডি স্টাইলে মোদী লাগাতার বোঝাতে চেয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র ধনীদের উপর কোপ ফেলে গরিবদের রেহাই দেওয়ার লক্ষ্যেই।

বিজেপির এক নেতা আজ বলেন, বাজেটের গোটাটাই ভোটের কথা ভেবে। ভোটমুখী পঞ্জাব কৃষিপ্রধান। উত্তরপ্রদেশের ১৫ কোটি মানুষই থাকেন গ্রামীণ এলাকায়। এর অর্ধেকই নির্ভরশীল কৃষির উপরে। আর দেশের চল্লিশ শতাংশ শ্রমিক থাকেন উত্তরপ্রদেশে। কৃষি-ঋণের জন্য বরাদ্দ ১০ লক্ষ কোটি টাকা আসলে প্রধানমন্ত্রীর কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যেই এগোনো। ফসল বিমা যোজনা প্রায় দ্বিগুণ করা, কৃষকদের ফসলের ন্যায্য দামের ব্যবস্থা করা, বাজেট জুড়ে গ্রামীণ পরিকাঠামো বৃদ্ধি, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তের ঘর বানানোর স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা— এ সবই ভোটের কথা ভেবে। নোট বাতিলের পর শহর থেকে গ্রামে শ্রমিক ফিরে যাওয়া রুখতে ছোট ও মাঝারি শিল্পে কর ছাড়ও ক্ষত মেরামতেরই চেষ্টা।

বিজেপি সূত্রের মতে, বাজেট পেশের পর ঘনিষ্ঠ মহলে জেটলি বলেছেন, ভোটের বাধ্যবাধকতা না থাকলে তিনি আরও খুলে কাজ করতে পারতেন। বিশেষ করে রেলের ভাড়া, পণ্য মাশুল বাড়াতেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, যদি ভোটের কথা মাথায় রেখেই কাজ হয়েছে, তা হলে কেন কোনও একটি বড় ঘোষণা করে ঢাক পেটাতে চাইলেন না মোদী? বিজেপি সূত্রের মতে, ভোটের মুখে বাজেট পিছনো নিয়ে বিরোধীরা এমনিতেই একজোট হয়েছে। নির্বাচন কমিশনও স্পষ্ট বলে দিয়েছে, ভোট-রাজ্য ভিত্তিক কিছু ঘোষণা করা যাবে না।

তবে এ বারে বাজেটের ঘোষণাগুলিই ভোট-রাজ্যে পাঠাচ্ছেন অমিত শাহ। নির্বাচনী প্রচারে এগুলিই তুলে ধরা হবে। এমনকী জনসভাতেও মোদী তুলে ধরবেন নিজের ‘মনের কথা’। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও আজ বলেছেন, বাজেটে উত্তরপ্রদেশের ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়েছে। তবে তাঁর দাবি, মানুষকে এ ভাবে ভোলানো যাবে না।

Budget 2017 BJP Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy