Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রাহুলের ফোন, জোটের বার্তা দিলেন অখিলেশও

সমাজবাদী পার্টির গৃহযুদ্ধে অখিলেশ যাদবকেই নিবার্চন কমিশন জয়ী ঘোষণা করার পরে ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশের জোট-অঙ্ক আরও জমজমাট হয়ে গেল। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়া নিয়ে গোড়া থেকেই আগ্রহী ছিলেন অখিলেশ। এ দিন কমিশনের সিদ্ধান্ত জানার পরেই রাহুল ফোন করে অভিনন্দন জানান অখিলেশকে।

প্রতীক নিয়ে অখিলেশ সমর্খদের উল্লাস। ছবি: পিটিআই।

প্রতীক নিয়ে অখিলেশ সমর্খদের উল্লাস। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪৫
Share: Save:

সমাজবাদী পার্টির গৃহযুদ্ধে অখিলেশ যাদবকেই নিবার্চন কমিশন জয়ী ঘোষণা করার পরে ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশের জোট-অঙ্ক আরও জমজমাট হয়ে গেল। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়া নিয়ে গোড়া থেকেই আগ্রহী ছিলেন অখিলেশ। এ দিন কমিশনের সিদ্ধান্ত জানার পরেই রাহুল ফোন করে অভিনন্দন জানান অখিলেশকে। রাহুলের ফোনে খুশি অখিলেশ বলেন, ‘‘খুব শিগগিরই আমরা আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনায় বসব।’’

শুধু কংগ্রেস নয়। এ দিন কমিশনের রায়ের পরে অখিলেশকে অভিনন্দন জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, লালু প্রসাদ যা বলেছেন, তাতে বিজেপি-বিরোধী বৃহত্তর জোটের পথ খুলে গিয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বলছেন, উত্তরপ্রদেশের ভোট আসলে বিজেপি বিরোধী জোটের কাছে সেমিফাইনাল ম্যাচ। আসল পরীক্ষা ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট।

কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে বিধানসভা ভোটে লড়ার ব্যাপারে অখিলেশ উৎসাহী হলেও আপত্তি ছিল মুলায়মের। এ দিনের পরে সেই বাধা আর রইল না। অন্য দিকে পাঁচমঢ়ী ও শিমলার চিন্তন শিবিরে সনিয়া গাঁধী যে জোট রাজনীতির অভিমুখ ঠিক করে দিয়েছিলেন, এখন ছেলে রাহুল সেই পথেই এগোবেন।

কয়েকটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে উত্তরপ্রদেশ চিরকালই জাতীয় রাজনীতির অভিমুখ ঠিক করে দিয়েছে। সেখানে এ বারের বিধানসভা ভোট ঘিরে যে জোটপর্বের আভাস মিলছে, তাকে ইতিমধ্যেই ‘মহাজোট’ বলতে শুরু করেছেন অনেকে। কংগ্রেসের পাশাপাশি অজিত সিংহ, লালু প্রসাদরা যে অখিলেশের পক্ষেই, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তাঁরা। লালু এক বিবৃতিতে মুলায়মকে অনুরোধ করেছেন, তিনি যেন ছেলেকে আশীর্বাদ করে তাঁর পাশে দাঁড়ান। অখিলেশকে অভিনন্দন জানিয়ে মমতা সোমবার টুইটারে লেখেন, ‘‘এটা তোমারই প্রাপ্য।’’ এ দিনই তৃণমূলের তরফে মুকুল রায় বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে বিরোধী ভোটের ভাগাভাগি রুখতে সেখানে প্রার্থী দেবে না তৃণমূল।’’ একটি সূত্রের দাবি, অখিলেশ-কংগ্রেস সম্ভাব্য জোটকে শক্তি জোগাতে উত্তরপ্রদেশে প্রচারেও যেতে পারেন মমতা।

লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশে বিপুল সংখ্যক আসনে জয়ের পর লখনউ দখল করার ব্যাপারে এক রকম নিশ্চিত ছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী সরকারের আড়াই বছর কাটার পরে পরিস্থিতি অনেক বদলেছে। পাশাপাশি স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অখিলেশের পাল্টা হিসেবে নিজেদের কোনও নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এখনও তুলে ধরতে পারেনি বিজেপি। কমিশনের রায় অখিলেশের বিপক্ষে গেলে অনেকটাই সুবিধা পেত তারা। কিন্তু তা না হওয়ায় বিজেপি শিবির বেশ হতাশ।

উত্তরপ্রদেশে প্রচারে নেমে বিজেপি বলছে, ১৪ বছর দেশের বৃহত্তম রাজ্যে তারা ক্ষমতায় নেই। বনবাস পর্ব শেষ। এ বার মানুষ রামকে ফিরিয়ে আনবে। তবে দল বুঝতে পারছে, মোদীর বিরুদ্ধে মানুষের অসন্তোষ উত্তরপ্রদেশে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় ভোট ভাগাভাগির সুবিধা পেতে মরিয়া বিজেপির লক্ষ্য মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি। ইতিমধ্যেই মায়াবতীর ভাই সিবিআই তদন্তে জড়িয়েছেন। ফলে দলিত নেত্রী বাধ্য হয়েছেন সুর নরম করতে। সূত্রের খবর, ভোটের পরে যাতে হাত মেলানো যায়, এখন সেই অঙ্ক কষছে দুই দল। আর এটাকেই প্রচারে উচ্চগ্রামে তুলে সংখ্যালঘু ভোটকে টানতে মরিয়া কংগ্রেস-সপা।

১৯৮৯ সালে এই উত্তরপ্রদেশেই রাজীব গাঁধীর বিরুদ্ধে জোট বেঁধে কংগ্রেসকে হারানোর যাত্রা শুরু করেছিলেন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহ। ইলাহাবাদ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সুনীল শাস্ত্রীকে হারিয়ে বিশ্বনাথ প্রতাপের জয় ছিল সে দিনের সেমিফাইনাল। রাজীব-পুত্র রাহুল সেই জোটের পথে হেঁটেই নরেন্দ্র মোদীকে গদিচ্যুত করতে পারেন কি না, তার প্রথম পরীক্ষা সেই উত্তরপ্রদেশেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rahul Gandhi Akhilesh Yadav
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE