সুবেদার গ্রেবালের শেষকৃত্যে যোগ দিতে ভিওয়ানির বামলা গ্রামে রাহুল গাঁধী। ছবি: সংগৃহীত।
বুধবার ছিল দিল্লিতে। জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রস্থল বৃহস্পতিবার দিল্লি থেকে সরে গেল হরিয়ানায়। আত্মঘাতী প্রাক্তন সেনাকর্মী রামকিশন গ্রেবালের শেষকৃত্যে হাজির হতে হরিয়ানার ভিওয়ানিতে পৌঁছে গেলেন বিরোধী রাজনীতির রথী-মহারথীরা। কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী, সাংসদ কমলনাথ, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল তো বটেই, সুবেদার গ্রেবালের গ্রামে হাজির তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনও।
শুধু যে কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি আর তৃণমূলের নেতারাই ভিওয়ানি গিয়েছেন তা নয়। বিজেপি শাসিত হরিয়ানার মন্ত্রী কৃশনলাল পাঁবর এবং ভিওয়ানির বিজেপি সাংসদ ধরমবীরও আত্মঘাতী রামকিশন গ্রেবালের শেষকৃত্যে যোগ দিতে হাজির হয়েছেন। কিন্তু ভিওয়ানিতে রামকিশন গ্রেবালের পরিবারের প্রতি সহানুভূতির আবেগ আজ এতই চড়া যে চেষ্টা করেও পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিতে পারেননি বিজেপি নেতারা। সুবেদার রামকিশন গ্রেবালের দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার সময় তাতে কাঁধ দিতে দেখা গিয়েছে হরিয়ানার দাপুটে নেতা তথা কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালাকে।
ভিওয়ানির বামলা গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন সেনাকর্মী রামকিশন গ্রেবাল হরিয়ানা থেকে দিল্লি গিয়ে জওহর ভবন সংলগ্ন চত্বরে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন মঙ্গলবার। বিষ খাওয়ার পর তিনি নিজের ছেলেকে ফোন করেছিলেন। ছেলেকে রামকিশন জানিয়েছিলেন, তিনি বিষ খেয়েছেন। এই আত্মত্যাগ সমস্ত সেনাকর্মীদের জন্য এবং দেশের জন্য, ছেলেকে এমনও বলেছিলেন তিনি। পেনশন বঞ্চনার অভিযোগ তুলে প্রাক্তন সেনাকর্মীর এই আত্মহত্যা মোদী সরকারের অস্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে। সরকার অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীদের জন্য ‘এক পদ, এক পেনশন’ নীতি সাফল্যের সঙ্গে কার্যকর করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী যখন বার বার দাবি করছেন, তখনই পেনশন বঞ্চনার অভিযোগ তুলে প্রাক্তন সেনাকর্মী আত্মহত্যা করায় ঘোর বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে কেন্দ্রীয় সরকার। এর মধ্যে কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল মৃতের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করতেই ‘অতিসক্রিয়’ হয়ে ওঠে কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশ। রাহুল, কেজরীবালদের দিনভর আটক করে রাখা হয়। তা নিয়ে বুধবার গোটা দিন উত্তাল ছিল দিল্লি। কিন্তু পুলিশ দিয়ে বিরোধী নেতাদের আটকে রাখার এবং আত্মঘাতী ব্যক্তির ছেলেকে দিনভর থানায় আটক করে রাখার অভিযোগ গায়ে মেখেও শেষ রক্ষা করতে পারল না সরকার। বৃহস্পতিবার আরও বড়সড় জমায়েতকে সাক্ষী রেখে আত্মঘাতী প্রাক্তন সেনাকর্মীর বাড়িতে পৌঁছে গেলেন রাহুল গাঁধী, অরবিন্দ কেজরীবালরা।
আরও পড়ুন: সেনার আত্মহত্যা ঘিরে বিক্ষোভ, রাজধানীতে আটক রাহুল, কেজরীবাল
প্রাক্তন সেনাকর্মীর আত্মহত্যা যে ভাবে গোটা দেশের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে, তা নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর সরকারের পক্ষে নিঃসন্দেহে অস্বস্তির। উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে জাতীয়তাবাদের ঝড় তুলতে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের বিষয়টিকে সরকারের সাফল্য হিসেবে বার বার তুলে ধরার চেষ্টা করছে বিজেপি। বার সেনাবাহিনীর জয়ধ্বনি শোনা যাচ্ছে বিজেপি নেতাদের মুখে। সেই সময়েই লাগোয়া হরিয়ানা আর দিল্লি যে ভাবে এক প্রাক্তন সেনাকর্মীর আত্মহত্যাকে ঘিরে সরকার বিরোধী ক্ষোভে ফুঁসছে, তাতে উত্তরপ্রদেশেও বাড়ছে বিজেপির রক্তচাপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy