Advertisement
E-Paper

রাহুল আর কাঁটা নন, দলে তাই ব্রাত্য বরুণ

বরুণ গাঁধী যখন বিজেপিতে যোগ দেন, সে দিন থেকেই শীর্ষনেতাদের কৌশল ছিল একটাই। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা। সময়টি ছিল ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। তখন সনিয়া গাঁধী দলের কাণ্ডারী হলেও দলে সদ্য যোগ দিয়েছেন রাহুল গাঁধী। আর সেই অঙ্ক মাথায় রেখেই ২০০৪ সালে লালকৃষ্ণ আডবাণী, প্রমোদ মহাজনের হাত ধরে বিজেপিতে আত্মপ্রকাশ করেন বরুণ গাঁধী।

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২৯

বরুণ গাঁধী যখন বিজেপিতে যোগ দেন, সে দিন থেকেই শীর্ষনেতাদের কৌশল ছিল একটাই। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা। সময়টি ছিল ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। তখন সনিয়া গাঁধী দলের কাণ্ডারী হলেও দলে সদ্য যোগ দিয়েছেন রাহুল গাঁধী। আর সেই অঙ্ক মাথায় রেখেই ২০০৪ সালে লালকৃষ্ণ আডবাণী, প্রমোদ মহাজনের হাত ধরে বিজেপিতে আত্মপ্রকাশ করেন বরুণ গাঁধী। মহারাষ্ট্রে নির্বাচনের মুখে তিনি যখন প্রথম নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন, তখন দলের কৌশলী মরাঠি নেতা প্রমোদ মহাজন সগর্ব ঘোষণা করেছিলেন, “জওহরলাল নেহরুর পৌত্র ও মতিলাল নেহরুর প্রপৌত্র আজ আমাদের দলে।” প্রমোদ সে দিন বরুণকে বলেছিলেন “তুমি প্রথম সভাতেই সরাসরি গাঁধী পরিবারকে আক্রমণ কর। সনিয়া গাঁধীর নাম করে আক্রমণ করলে আরও ভাল।” বরুণ কিন্তু সেই প্রস্তাবে রাজি হননি। বরুণকে দলে নিয়ে আসার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন প্রমোদ। তাকেই বরুণ বলে দেন, “জেঠিমাকে বা আমার ভাই-বোনকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা সম্ভব নয়।”

এর পর বহু বছর কেটে গিয়েছে। প্রয়াত আরএসএস প্রধান কে এস সুদর্শনের সঙ্গে ক্রমে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে বরুণের। উত্তরপ্রদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভাষায় বক্তব্য রেখে বিতর্ক সৃষ্টি করেন তিনি। সঙ্ঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলেও বরুণের সেই বক্তব্যে অসন্তুষ্ট হন লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ বা অরুণ জেটলিরা। আর সেই প্রথম প্রিয়ঙ্কা ও রাহুল গাঁধী এ ব্যাপারে বরুণকে পাল্টা আক্রমণ হানেন। তা না হলে তাঁরাও বরুণকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা থেকে বিরত থেকেছেন।

নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বিজেপির এক সাধারণ সম্পাদক আজ বলেন, “এ বারের লোকসভা নির্বাচনে রাহুল গাঁধীর প্রবল বিপর্যয় এবং প্রতিনিয়ত তাঁর ব্যর্থ নেতৃত্বের ভূমিকা দেখে বিজেপি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার রাজনীতির আর প্রয়োজন নেই।” বিজেপির ওই নেতা বলেন, “রাহুল ও বরুণ এ হল বড় দুই রাজনৈতিক দলের দুই গাঁধীর কাহিনি। এক গাঁধীর গুরুত্ব বাড়লে অন্য গাঁধীর গুরুত্ব বাড়ে। একই ভাবে, এক জনের কমলে গুরুত্ব কমে অন্যেরও।”

বরুণ অবশ্য মহারাষ্ট্রে সে দিনের জনসভায় শুধু নয়, সনিয়া কিংবা প্রিয়ঙ্কা-রাহুলের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কে চিড় ধরাতে চাননি। প্রিয়ঙ্কার বিয়ের সময় কাকিমা মেনকা না গেলেও বরুণ গিয়েছিলেন। আবার বরুণ যখন বঙ্গললনা যামিনীকে বিয়ে করেন, তখন জেঠিমা সনিয়া কিন্তু সপরিবার এসেছিলেন। বিয়ের পর বরুণের প্রথম সন্তানের আকস্মিক মৃত্যুর পরও শোক জানাতে জোর বাগের বাড়িতে সপরিবার এসেছিলেন সনিয়া। আর আজ বরুণের কন্যাসন্তান জন্ম নিয়েছে। নাম রাখা হয়েছে অনসূয়া। এত কিছুর মধ্যেও গাঁধী পরিবারের সকলে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেননি।

বিজেপি সূত্র বলছে, বরুণের এ বার সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বাদ যাওয়া অবশ্য শুধুই রাজনৈতিক ভাবে রাহুলের দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে নয়। সেই বৃহৎ প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি কিছু ক্ষুদ্র কারণও রয়েছে। সেই কারণগুলির মধ্যে প্রথমটি হল, ভোটের আগে থেকেই বরুণের মোদী-বিরোধী অবস্থান। কেন বরুণ এতটাই মোদী-বিরোধী তার প্রকৃত কারণ অজানা। কিন্তু বিজেপির এক শীর্ষ নেতার মতে, রাহুলের চ্যালেঞ্জ হিসেবে বরুণ নিজেকে আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ভাবতে শুরু করেছিলেন। নির্বাচনের আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি মোদী কলকাতায় যে জনসভা করেছিলেন, তা নিয়ে বরুণ বিবৃতি দিয়ে জানান, বিজেপি ওই সভায় যে ভিড় হয়েছে বলে দাবি করছে বাস্তবে হয়েছে তার সিকি ভাগ। এ কথা বলার জন্য তাঁকে দলের মধ্যে ভর্ৎসনা শুনতে হয়। যদিও বরুণের অভিযোগ ছিল, তিনি পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে সে দিন বলতে দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি বরুণকে উত্তরপ্রদেশে ছায়া মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার করতে সরব হন মেনকাও। নরেন্দ্র মোদীর টিমের মধ্যে মতপার্থক্য যা-ই থাক না কেন বরুণের উত্থানে খুশি ছিলেন না অরুণ-সুষমা দু’জনেই। ফলে বরুণকে অপসারিত করতে কোনও কষ্ট করতে হয়নি মোদী-অমিত শাহকে। বিজেপির ওই নেতাটি আরও বলেন, “উল্টে তাঁকে দলের পদ থেকে সরিয়ে মোদী এই বার্তাই দিয়েছেন যে উত্তরপ্রদেশ তথা হিন্দি বলয়ের রাজনীতিতেও বরুণ অপরিহার্য নন।”

তবে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার সাত দিন আগেই বরুণকে সরানোর বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছিলেন। বিভিন্ন বিজেপি নেতা দফায়-দফায় ফোন করে বরুণকে অনুরোধ জানান, যাতে তিনি দলীয় রদবদল সম্বন্ধে কোনও নেতিবাচক মন্তব্য না করেন। প্রতিক্রিয়া জানানো তো দূরের কথা, উল্টে দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে কী ভাবে মোদী সরকার উন্নত করতে পারে, সে ব্যাপারে দিল্লির সংবাদপত্রে প্রবন্ধ লেখেন বরুণ। তবে সর্বশেষ খবর, শুধু সনিয়া গাঁধীই নন, বরুণের কন্যাসন্তান জন্মের সংবাদে অভিন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীও।

rahul gandhi varun gandhi bjp congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy