সেই বিচারক জগদীপ সিংহ।- ফাইল চিত্র।
এ বার ‘বাবা’ গুরমিত রাম রহিম সিংহের ভক্তদের হাতে প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ওই মামলার বিচারক জগদীপ সিংহের। তার প্রেক্ষিতে হরিয়ানা সরকারকে সিবিআই আদালতের বিচারক জগদীপ সিংহের জন্য নিরাপত্তার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা করতে বলল কেন্দ্র, অবিলম্বে। শুক্রবার বিচারক সিংহের রায়ের পরেই ‘বাবা’র সচ্চা-ভক্তদের তাণ্ডব শুরু হয়ে যায় হরিয়ানা জুড়ে। চলে গুলি, লাগানো হয় আগুন। এখনও পর্যন্ত যার বলি হয়েছেন ৩১ জন। জখম হন ২৫০-রও বেশি মানুষ। পুলিশের সঙ্গেও খণ্ডসংঘর্যে জড়িয়ে পড়েন ‘বাবা’র ভক্তরা। এর পর কার্ফু জারি হয় হরিয়ানার পঞ্চকুলা, সিরসা, কৈথাল এবং পঞ্জাবের মানসা, ভাটিন্ডা, ফিরোজপুর, পাটিয়ালা, সাংগ্রুর, বার্নালা ও ফরিদকোটে। পঞ্চকুলায় মোতায়েন হয়েছে সেনাবাহিনীর ৬টি কলাম।
কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে ওই নির্দেশ পৌঁছে যায় হরিয়ানা সরকারের কাছে। গোয়েন্দাদের মাধ্যমে শুরু হয়ে যায় হরিয়ানার সর্বশেষ পরিস্থিতির খবরাখবর সংগ্রহের কাজ। গোয়েন্দাদের রিপোর্টের ওপরেই নির্ভর করছে, সিবিআই আদালতের ওই বিচারক জগদীপ সিংহের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য সিআরপিএফের মতো কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে কি না।
আরও পড়ুূন- ডেরা-র ৩৬টি আশ্রম সিল করল পুলিশ, বিক্ষিপ্ত গোলমাল সিরসায়
আরও পড়ুন- ফায়দা লুটটেই আগুন জ্বলতে দেওয়া হয়েছে পঞ্চকুলায়: হাইকোর্ট
মজার ঘটনা হল, ধর্ষণের দায়ে যে ‘বাবা’ গুরমিত রাম রহিম সিংহকে জেলে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বিচারক সিংহ, সেই ডেরা সচ্চা সৌদার প্রধান পান ‘জেড’ ক্যাটেগরির নিরাপত্তা।
সিবিআই আদালতের বিচারক জগদীপ সিংহ বরাবরই একটু অন্য রকমের চরিত্র। কিছু দিন আগেকার ঘটনা। রাস্তাতেই দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় চার জনকে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। প্রথমে জরুরি পরিষেবার নম্বরে ফোন করে দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্স পাঠাতে বলেন জগদীপ। উত্তর মেলে, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স কি উড়ে উড়ে যাবে?’’ বাধ্য হয়ে নিজেই রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে চার জনকে জিন্দের একটি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন জগদীপ সিংহ। ডেরা সচ্চা সৌদার প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিংহকে জেলে ঢুকিয়ে তিনিই আজ গোটা দেশে খবরে। পঞ্চকুলার সিবিআই আদালতের এই বিচারক ১৫ বছরের পুরনো ধর্ষণ মামলায় গুরমিত রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করার পরে গোটা দেশেই কৌতূহল তৈরি হয়েছে তাঁকে ঘিরে। প্রশ্ন উঠছে, কে এই বিচারক, যিনি ধর্মগুরুকে দোষী সাব্যস্ত করতেও ডরান না?
আরও পড়ুন- মিনারেল ওয়াটার থেকে বিশেষ সহায়ক, জেলেও বহাল ‘বাবা’র মহিমা
পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ডিগ্রি পাওয়ার পরে প্রথমে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টেই ওকালতি করেছিলেন জগদীপ। ১২ বছর হাইকোর্টে সিভিল থেকে অপরাধ, সব মামলাই সামলেছেন। হরিয়ানা জুডিশিয়াল সার্ভিসে যোগ দেন ২০১২-তে। সোনীপতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তার পর সিবিআই আদালতের বিচারক হিসেবে যোগ দেন। আইনজ্ঞদের যুক্তি, সিবিআই আদালতে কাউকে বিচারক হিসেবে নিয়োগের আগে হাইকোর্ট যে কোনও বিচারকের যোগ্যতা আতসকাচের তলায় ফেলে দেখে। তাই জগদীপের যোগ্যতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠতে পারে না। আর তাঁর পরিচিত আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, জগদীপ কম কথার লোক। দেখনদারি নেই। তবে বিচারক হিসেবে যথেষ্ট কড়া। মেরুদণ্ড সোজা রেখে চলা লোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy