Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

শুল্ক ফাঁকি দিতে চিন থেকে অ্যাসিড পাচার

কলকাতার ডিআরআই অফিসারদের একটি দল সম্প্রতি মিজোরাম থেকে ১২২.৫ মেট্রিক টন এমন বেআইনি অ্যাসকরবিক অ্যাসিড পাউডার বাজেয়াপ্ত করেছেন। যার বাজারদর প্রায় ১০ কোটি টাকা বলে ডিআরআই সূত্রে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, চিন থেকে আইনি পথে ওই পরিমাণ অ্যাসকরবিক অ্যাসিড আমদানি করা হলে তার জন্য ভারত সরকার ৪.৮১ কোটি টাকার শুল্ক কর পেত।

উদ্ধার হওয়া অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের পেটি। নিজস্ব চিত্র

উদ্ধার হওয়া অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের পেটি। নিজস্ব চিত্র

সুনন্দ ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৭ ০১:২৫
Share: Save:

কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন বাজার ছেয়ে যাচ্ছে ভিটামিন সি-র ট্যাবলেট, সিরাপে। সারা দেশের অন্য সব জায়গাতেও ছবিটা একই।

অভিযোগ, এই ভিটামিন সি-এর ট্যাবলেট, সিরাপ তৈরি করা হচ্ছে চিন থেকে বেআইনি ভাবে আমদানি করা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড থেকে। এমনকী, এ দেশে বেশ কিছু ওষুধ, বোতলবন্দি ফলের রস, প্রসাধনী সামগ্রী তৈরির ক্ষেত্রেও চিন থেকে আসা ওই অ্যাসকরবিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি এ নিয়ে তদন্তে নেমেছিলেন ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (ডিআরআই)-এর অফিসারেরা। জানা গিয়েছিল, এই অ্যাসকরবিক অ্যাসিড উত্তর-পূর্ব ভারত দিয়ে পাউডারের আকারে এ দেশে ঢুকছে। তার পরে সড়ক পথে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের অন্যত্র।

কলকাতার ডিআরআই অফিসারদের একটি দল সম্প্রতি মিজোরাম থেকে ১২২.৫ মেট্রিক টন এমন বেআইনি অ্যাসকরবিক অ্যাসিড পাউডার বাজেয়াপ্ত করেছেন। যার বাজারদর প্রায় ১০ কোটি টাকা বলে ডিআরআই সূত্রে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, চিন থেকে আইনি পথে ওই পরিমাণ অ্যাসকরবিক অ্যাসিড আমদানি করা হলে তার জন্য ভারত সরকার ৪.৮১ কোটি টাকার শুল্ক কর পেত। ডিআরআই-এর এক কর্তার কথায়, ‘‘ওই শুল্ক কর ফাঁকি দেওয়ার জন্যই বেআইনি ভাবে সীমান্ত টপকে এ ভাবে পাঠানো হচ্ছে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড।’’ ডিআরআই-এর ওই কর্তা জানিয়েছেন, এই অ্যাসকরবিক অ্যাসিড বিদেশ থেকে আসার সময়ে প্রতি কিলোগ্রামে প্রায় ৪ মার্কিন ডলার শুল্ক কর নেওয়া হয়।

প্রাথমিক তদন্তের পরে ওই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর জানিয়েছে, চিনের শ্যানডং প্রদেশ থেকে ওই বিশাল পরিমাণ অ্যাসকরবিক অ্যাসিড-এর পাউডার জাহাজে করে মায়ানমারে আসে। সেখানে সড়ক পথে মায়ানমার ও মিজোরামের জোখাতার সীমান্ত দিয়ে বেআইনি ভাবে এ দেশে ঢোকে। এই মাসের ৮ অগস্ট প্রথম মিজোরামের ওই এলাকায় হানা দেন ডিআরআই অফিসারেরা। সেখানকার ভাইরেংতে নামের একটি জায়গায় একটি গুদামে মজুত করা ছিল ৮৮ মেট্রিক টন অ্যাসকরবিক অ্যাসিড পাউডার। যার দাম সাত কোটির মতো। এক একটি পেটিতে ২৫ কিলোগ্রাম করে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড পাউডার রাখা ছিল বলেও জানা গিয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে অফিসারেরা জানতে পারেন যে চিন থেকে আসা ওই অ্যাসিড ইতিমধ্যেই স্থানীয় কিছু এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। লরিতে চাপিয়ে তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোর তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে। এর পরেই অফিসারেরা স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নিয়ে কয়েক দিন ধরে মিজোরামের বেশ কিছু এলাকায় হানা দেন। সেই সব এলাকা থেকে আরও ৩৪.৫ কিলোগ্রাম অ্যাসকরবিক অ্যাসিড পাউডার পাওয়া গিয়েছে।

উত্তর পূর্ব ভারতে এর আগে এত বিশাল পরিমাণ পাচার ধরা পড়েনি বলে দাবি করেছে ডিআরআই। অফিসারদের দাবি, মিজোরামের ওই জোখাতার সীমান্ত দিয়ে মাদক, সোনা, পশুর চামড়া-সহ প্রচুর পণ্য পাচার হয়। এর আগেও অ্যাসকরবিক অ্যাসিড এ ভাবে ঢুকেছে। ডিআরআই-এর এক কর্তা জানিয়েছেন, এই পাচারের সঙ্গে যুক্তদের খোঁজ চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE