Advertisement
১৯ মে ২০২৪
বিহারে যুবক খুন

বাবার খামার থেকে পাকড়াও রকি যাদব

মা-বাবার ফোনে চলছিল নজরদারি। সেই সূত্র ধরেই শেষ পর্যন্ত পাকড়াও হল আদিত্য সচদেব হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত রকি যাদব। শনিবার রাতে বুদ্ধগয়ায় একটি পার্টি থেকে বাড়ি ফিরছিলেন গয়া জেলার এক ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে আদিত্য।

কোর্টে যাওয়ার পথে রকি যাদব। মঙ্গলবার গয়ায়। ছবি: পিটিআই

কোর্টে যাওয়ার পথে রকি যাদব। মঙ্গলবার গয়ায়। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
পটনা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৬ ০৩:৫৫
Share: Save:

মা-বাবার ফোনে চলছিল নজরদারি। সেই সূত্র ধরেই শেষ পর্যন্ত পাকড়াও হল আদিত্য সচদেব হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত রকি যাদব।

শনিবার রাতে বুদ্ধগয়ায় একটি পার্টি থেকে বাড়ি ফিরছিলেন গয়া জেলার এক ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে আদিত্য। পথে জেডিইউ বিধায়ক মনোরমা দেবীর গাড়িকে ওভারটেক করে তাঁর গাড়ি। তার জেরেই শেষ পর্যন্ত রকি আদিত্যকে গুলি করে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় বিজেপি-সহ বিরোধীদের প্রবল আক্রমণের মুখে পড়ে নীতীশ কুমার ও লালু প্রসাদের দল। বিহারে জঙ্গলরাজ ফিরে এসেছে বলে দাবি করেন বিরোধীরা।

এই পরিস্থিতিতে পুলিশকে কড়া পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেন নীতীশ কুমার। রকির বাবা বিন্দি যাদবও নীতীশের দলের বাহুবলী নেতা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনায় অপরাধীর রাজনৈতিক রং না দেখে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে বিহার পুলিশ সূত্রে খবর। বিন্দি যাদব এবং মনোরমা দেবীর দেহরক্ষী রাকেশ কুমারকে আগেই গ্রেফতার করেছিল
পুলিশ। বিন্দির বিরুদ্ধে ছেলেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করার অভিযোগ এনেছেন তদন্তকারীরা। রাকেশ কুমার ঘটনার সময়ে রকির গাড়িতে ছিল। সেও আদিত্যকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল
বলে অভিযোগ।

গত কাল রাতে আদিত্য হত্যার তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে বিহার পুলিশ। তার পরেই সিটের প্রধান গয়ার সিটি পুলিশ সুপার অবকাশ কুমারের নেতৃত্বে পুলিশ মনোরমা দেবীর বাড়িতে হানা দেয়। সেখানে ঘণ্টা তিনেক তল্লাশির পাশাপাশি চলে মনোরমা দেবীকে জেরা। তল্লাশির সময়ে বিধান পরিষদের ওই সদস্যের বাড়ি থেকে বেশ কয়েকটি বিদেশি মদের বোতলও পাওয়া যায়। সম্প্রতি মদ্যপানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিহার। তাই মদের বোতল পাওয়ায় আলাদা ভাবে একটি এফআইআর করেছেন তদন্তকারীরা। মনোরমা দেবীকে এ দিন সাসপেন্ডও করেছেন জেডিইউ নেতৃত্ব। দলের রাজ্য সভাপতি বশিষ্ঠনারায়ণ সিংহের কথায়, ‘‘মনোরমা দেবী তাঁর ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আমাদের মনে হয়েছে অভিযোগের সারবত্তা রয়েছে। তাই তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।’’

মনোরমা ও বিন্দির সব ক’টি মোবাইল ফোনে নজরদারি চালাচ্ছিলেন তদন্তকারীরা। হঠাৎই বিন্দির একটি মোবাইলে ফোন করেন তাঁর বুদ্ধগয়ার ডেয়ারি ফার্মের এক কর্মী। সেই কথোপকথন শোনার পরে আজ ভোরে মস্তপুরা গ্রামের ওই খামারে হানা দেয় পুলিশ। সেখানেই খোঁজ পাওয়া যায় রকির। তার কাছ থেকে ইতালির বেরেটা সংস্থার তৈরি একটি পিস্তলও পাওয়া গিয়েছে। ওই পিস্তল দিয়েই আদিত্যকে খুন করা হয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। স্পোর্টস কোটায় ওই পিস্তলটির লাইসেন্স দিয়েছিল দিল্লি পুলিশ। রকি দিল্লির শুটিং ক্লাবের সদস্য বলে আগেই জানতে পেরেছিলেন তদন্তকারীরা। রকির গ্রেফতারি নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ রাখতে চায়নি নীতীশ সরকার। তাই সাংবাদিক বৈঠকে মুখ ঢাকা রকিকে হাজির করে বিহার পুলিশ। বাবার খামার থেকে গ্রেফতার হওয়ার কথা অবশ্য মানতে চায়নি বিধায়ক-পুত্র। রকির দাবি, আদিত্য হত্যার দিন সে
দিল্লিতে ছিল। মায়ের ফোন পেয়ে এসে আত্মসমর্পণ করেছে।

বিকেলে রকিকে গয়া আদালতে তোলে পুলিশ। তাকে সাত দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার আর্জি জানান সরকারি কৌঁসুলি। তবে বিচারক রকিকে ১৪ দিনের জন্য জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। রাজ্য পুলিশের এডিজি (হেডকোয়ার্টার্স) সুনীল কুমার জানান, আদিত্য হত্যার মামলা দ্রুত শেষ করতে চায় পুলিশ। এক মাসের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

farm house Rocky Yadav
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE