Advertisement
E-Paper

মসনদ নয়, জেলেই যেতে হচ্ছে শশিকলাকে

শেষমেশ সুপ্রিম কোর্টের ‘ধাক্কা’ শশিকলার আশায় জল ঢেলে দিল। এই দফায় তাঁর আর তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হওয়া হল না। বদলে জেলেই যেতে হচ্ছে তাঁকে। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার বিরুদ্ধে হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি রাখার যে মামলা চলছিল সুপ্রিম কোর্টে তাতে শশিকলার নাম ছিল। মঙ্গলবার সেই মামলায় নিম্ন আদালতের রায়েই সম্মতি দিল শীর্ষ আদালত। ফলে, পুরনো নির্দেশ অনুযায়ী শশিকলার চার বছরের জেল বহাল রইল। আইন অনুযায়ী, এই সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরের ছ’বছরও তিনি আর ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না। কাজেই আগামী ১০ বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দরজা তাঁর কাছে বন্ধই হয়ে গেল বলে আইনজীবীদের একাংশের মত।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১১:০৯
ভিকে শশীকলা।-ফাইল চিত্র।

ভিকে শশীকলা।-ফাইল চিত্র।

শেষমেশ সুপ্রিম কোর্টের ‘ধাক্কা’ শশিকলার আশায় জল ঢেলে দিল। এই দফায় তাঁর আর তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হওয়া হল না। বদলে জেলেই যেতে হচ্ছে তাঁকে।

রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার বিরুদ্ধে হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি রাখার যে মামলা চলছিল সুপ্রিম কোর্টে তাতে শশিকলার নাম ছিল। মঙ্গলবার সেই মামলায় নিম্ন আদালতের রায়েই সম্মতি দিল শীর্ষ আদালত। ফলে, পুরনো নির্দেশ অনুযায়ী শশিকলার চার বছরের জেল বহাল রইল। আইন অনুযায়ী, এই সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরের ছ’বছরও তিনি আর ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না। কাজেই আগামী ১০ বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দরজা তাঁর কাছে বন্ধই হয়ে গেল বলে আইনজীবীদের একাংশের মত।

১৯৯৬তে তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার বিরুদ্ধে তত্কালীন জনতা দলের নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী একটি মামলা দায়ের করেন। অভিযোগ, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর হিসাববহির্ভূত সম্পত্তির পরিমাণ ৬৬.৬৫ কোটি টাকা। সেই মামলায় নানা টানাপড়েনের পর ২০১৪-র ২৭ সেপ্টেম্বর জয়ললিতা, তাঁর পালিত পুত্র সুধাকরণ, ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ভিকে শশীকলা এবং আত্মীয়া ইলাবরসিকে চার বছরের কারাবাসের সাজা শোনায় বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালত। জেলে পাঠানো হয় তাঁদের।

২১ দিন জেলে থাকার পর ওই বছরের ১৮ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে জয়ললিতা-সহ বাকিদের জামিন মঞ্জুর হয়। জেল থেকে ছাড়া পান তাঁরা। পরের বছর ১১ মে কর্নাটক হাইকোর্ট তাঁদের বেকসুর খালাস করে দেয়। কিন্তু, হাইকোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে যায় কর্নাটক সরকার। এ দিন কর্নাটক সরকারের সেই আবেদনের ভিত্তিতে কর্নাটকের বিশেষ আদালতের রায়ই বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট।

আরও পড়ুন: সরলো পথের কাঁটা, রায় ঘোষণা হতেই উল্লাসে ফেটে পড়ল পনীর শিবির

কর্নাটক হাইকোর্টের রায়ে বেকসুর খালাস হওয়ার এক বছরের মধ্যেই বিপুল জনাদেশ নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন জয়ললিতা। শশিকলা তখনও তাঁর ছায়াসঙ্গী। জয়ার সঙ্গেই তিনি পোয়েস গার্ডেনে থাকেন। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার মাস কয়েকের মধ্যেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন জয়া। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। সেখানেই প্রায় দু’মাস থাকার পরে গত ডিসেম্বরে মারা যান তিনি। তড়িঘড়ি ও পনীরসেলভম (ওপিএস)কে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করা হয়। এর আগে জয়া জেলে থাকার সময়েও তিনি দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

কিন্তু জয়ার মৃত্যুর পর পর্দার পিছনে থেকে নয়, সরাসরি রাজনৈতিক ক্ষমতার মঞ্চে অবতীর্ণ হন শশিকলা। প্রথমে দলের সাধারণ সম্পাদক, পরে এআইএডিএমকে-র পরিষদীয় দলের নেত্রী নির্বাচিত হন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন ওপিএস।

কিন্তু, তার দু’দিন পরেই বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন ওপিএস। প্রকাশ্যে জানিয়ে দেন তাঁকে জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে। অভিযোগের আঙুল সেই শশিকলার দিকে। এর পরেই ক্ষমতার দখলদারি নিয়ে দু’পক্ষের ‘লড়াই’ প্রকাশ্যে চলে আসে। দু’জনেই আলাদা করে দেখা করেন রাজ্যপাল বিদ্যাসাগর রাওয়ের সঙ্গে। ওপিএসের দাবি, তিনি আস্থাভোটে ‘রাজ্যের প্রকৃত প্রশাসক’ হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করতে চান। অন্য দিকে শশির দাবি, দলের প্রায় সমস্ত বিধায়কই তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তিনি শপথ নিতে চান।

আরও পড়ুন: কোন পথে শশিকলা ফের জেলে

এর মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের একটি সূত্র জানায়, হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি মামলায় খুব শীঘ্রই রায় শোনাবে আদালত। এটা জানার পর থেকেই কিছুটা ধীরে চলার নীতি নেন রাজ্যপাল। ওপিএসের পদত্যাগের পর প্রায় ১০ দিন কেটে গেলেও রাজ্যপাল কোনও পক্ষকেই ডাকেননি নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে। ইতিমধ্যে শশিকলার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, মুখ্যমন্ত্রী-জটিলতা কাটাতে রাজ্যপাল উদ্যোগ না নেওয়ায় তিনি আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। পাশাপাশি, দলের প্রায় ১১৮ জন বিধায়কদের বন্দি করে মহাবলীপুরমের একটি বিলাসবহুল হোটেলে রাখার অভিযোগও ওঠে। মাদ্রাজ হাইকোর্ট তা নিয়ে পুলিশের কাছে একটি রিপোর্টও চেয়ে পাঠায়। পুলিশ জানায়, সকলেই স্বেচ্ছায় রয়েছেন ওখানে।

এমন পরিস্থিতিতেই এ দিনের রায় ঘোষণা। এত দিন ওপিএস শিবিরে এক-দু’জন করে বিধায়ক জড়ো হচ্ছিলেন। কিন্তু, এ দিনের রায়ের পর শিবির বদল শুরু হয়ে গিয়েছে। পনীরের বাড়ির সামনে সকাল থেকেই সমর্থকদের ভিড়। শশি-বিরোধীদের উল্লাস এবং উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে রাজ্য জুড়ে। সকালে রায় ঘোষণার পরেই জয়ললিতার বাসভবন পোয়েস গার্ডেন (যেখানে শশিকলা এখনও থাকেন) এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ। শশিকলা যদিও সেখানে নেই। তাঁর শিবিরের বিধায়কদের তিনি যেখানে ‘আটকে’ রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল সেই গোল্ডেন বে রিসর্টেই তিনি সকাল থেকে রয়েছেন।

আরও পড়ুন: ধর্মের জয় হবে সুপ্রিম কোর্টের রায় শুনে প্রতিক্রিয়া শশিকলার

আদালতের নির্দেশে শশিকলার জেলে যাওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। তার আগেই ই কে পালানিসামিকে পরিষদীয় দলের নেতা নির্বাচিত করা হয়েছে। এ দিনের রায় ঘোষণার পরেই মূলত শশির উদ্যোগেই এ কাজ করা হয়। কিন্তু রাজনীতিবিদদের একাংশের মত, শশি যাই করুন না কেন বিনা যুদ্ধে তামিলনাড়ু জয় হবে না শশি শিবিরের। বরং গোল্ডেন বে রিসর্ট থেকে যে ভাবে বিধায়কদের উল্টোস্রোত শুরু হয়েছে, তাতে ওপিএস-এর দিকেই পাল্লা ভারী।

Sasikala Natarajan Disproportionate assets case The Supreme Court Verdict Corruption Case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy