Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
National News

রিসর্ট থেকে গড়া সরকার ভাঙতে ফের রিসর্ট-বন্দি শশিকলার অনুগামীরা

ফের সঙ্কটে তামিলনাড়ুর সরকার। শশিকলা তথা দিনকরণের অনুগামী ১৯ বিধায়ক এ বার বিদ্রোহী। পলানী-পনীরের সরকারে তাঁদের আস্থা নেই, রাজ্যপালকে জানালেন বিধায়করা। তামিলনাড়ুর সীমানা ছাড়িয়ে তাঁরা পৌঁছে গেলেন পুদুচেরির রিসর্টে।

পুদুচেরির সেই বিলাসবহুল রিসর্ট। ছবি: উইন্ডফ্লাওয়ার রিসর্ট অ্যান্ড স্পা পন্ডিচেরি-র ফেসবুক পেজ থেকে।

পুদুচেরির সেই বিলাসবহুল রিসর্ট। ছবি: উইন্ডফ্লাওয়ার রিসর্ট অ্যান্ড স্পা পন্ডিচেরি-র ফেসবুক পেজ থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
পুদুচেরি শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৭ ১৮:১৬
Share: Save:

বিধানসভা আর নয়, তামিল গণতন্ত্রের ‘পীঠস্থান’ এখন রিসর্ট। কখনও চেন্নাই থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরবর্তী রিসর্ট গোল্ডেন বে। কখনও তামিলনাড়ুর সীমানা ছাড়িয়ে প্রতিবেশী পুদুচেরির বিলাসবহুল চারতারা রিসর্ট উইন্ডফ্লাওয়ার। তামিল রাজনীতির এই রিসর্টায়নের সৌজন্যে এক জনই— শশিকলা নটরাজন।

দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে কর্নাটকের জেলে বন্দি শশী। সেই ফাঁকে নিজেদের মধ্যে হাত মিলিয়ে নিয়েছে এআইএডিএমকে-র বিবদমান দুই শিবির। শশিকলাকে দলের শীর্ষপদ থেকে ছুড়ে ফেলার তো়ড়জোড়ও প্রায় পাকা। কিন্তু এআইএডিএমকে-তে টিকে থাকতে মরিয়া শশিকলা প্রতিবেশী রাজ্য থেকেই মরণ কামড়টা দেওয়ার চেষ্টা করলেন। অনুগামী বিধায়কদের আরও এক বার রিসর্টে পাঠিয়ে দিলেন তিনি।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই খেলায় জড়িয়ে যাচ্ছে কংগ্রেসের নামও। শশিকলা নিজে এখন কর্নাটকে (জেলে)। আর তাঁর অনুগামী বিধায়করা এখন পুদুচেরিতে। ঘটনাচক্রে কর্নাটক এবং পুদুচেরি, দুই-ই কংগ্রেস শাসিত। যে ভাবে দুই কংগ্রেস-শাসিত ভূ-খণ্ডে বসে তামিলনাড়ুর বিজেপি-ঘনিষ্ঠ সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে শশিকলা-দিনকরণ শিবির, তাকে সমাপতন বলে মানতে রাজি নন অনেকেই।

ও পনীরসেলভমকে (ওপিএস) তামিলনাড়ুর গদি থেকে সরিয়ে যখনই নিজে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করছিলেন শশিকলা, তখনই বিদ্রোহ হয়েছিল দলে। ওপিএস, পান্ডিয়ারাজন, মৈত্রেয়নদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই বিদ্রোহ যাতে পরিষদীয় দলে খুব বেশি ছাপ ফেলতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে তড়িঘড়ি ১২০ জনেরও বেশি বিধায়ককে নিয়ে চেন্নাই থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরের গোল্ডেন বে রিসর্টে চলে যান শশিকলা। দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ড হওয়ায় শশী নিজে শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেননি। কিন্তু গোল্ডেন বে রিসর্টে বসেই নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন তামিলনাড়ুর ভবিষ্যৎ। ই পলানীস্বামীকে (ইপিএস) পরিষদীয় দলনেতা বানিয়েছিলেন। রিসর্ট থেকে চেন্নাইতে ফিরে পলানীস্বামীই মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেছিলেন। রিসর্ট-ফেরত বিধায়করা আস্থা ভোটে পলানীকেই সমর্থন করেছিলেন।

রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার পর পুদুচেরির উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন দিনকরণ অনুগামী বিধায়করা। ছবি: পিটিআই।

ই পলানীস্বামী তামিলনাড়ুর গদিতে থাকলে কর্নাটকের জেলে বসেও নিজের রাজ্যের সরকারকে তিনিই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন বলে হয়তো ভেবেছিলেন শশিকলা। কিন্তু কয়েক মাসেই তাঁর সে ভুল ভেঙেছে। বিদ্রোহী ওপিএস এবং মুখ্যমন্ত্রী ইপিএস হাত মিলিয়ে নিয়েছেন। শশিকলা জেলে যাওয়ার আগে দলের উপ-সাধারণ সম্পাদক পদে যাঁকে বসিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর সেই ভাইপো দিনকরণকে ওপিএস-ইপিএস একঘরে করে দিয়েছেন। ওপিএস উপমুখ্যমন্ত্রী হয়ে গিয়েছেন। এআইএডিএমকে-তে শশিকলার কর্তৃত্ব শেষ করে দেওয়ার তোড়জোড় মোটামুটি সেরে ফেলে ওপিএস-এর হাতে দলের কর্তৃত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: বাবা রাম রহিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার রায় ঘিরে বারুদের স্তূপে দুই রাজ্য

বিপদে পড়েই আবার রিসর্ট রাজনীতি শশীর। তিনি নিজে জেলে। কিন্তু ভাইপো দিনকরণ বাইরেই। আচমকা ১৯ বিধায়ককে তামিলনাড়ুর সীমানা পার করিয়ে পুদুচেরির উইন্ডফ্লাওয়ার রিসর্ট স্পা-এ ঢুকিয়ে দিয়েছেন দিনকরণ। পুদুচেরি যাওয়ার আগে রাজ্যপাল সি বিদ্যাসাগর রাও-এর সঙ্গে দেখা করে ইপিএস-এর প্রতি অনাস্থা জানিয়ে যেতেও ভোলেননি এই বিধায়করা।

যে রিসর্টে রয়েছেন এআইএডিএমে-র ১৯ বিদ্রোহী বিধায়ক, করমণ্ডল সৈকত থেকে হাঁটলে সেই রিসর্টের গেটে পৌঁছতে ৬ মিনিট সময় লাগে। সার সার নয়নাভিরাম ভিলা, বিলাসবহুল ঘর, টলটলে সুইমিং পুল, মাসাজ— সব ব্যবস্থাই রয়েছে। অপার বিলাসের মধ্যে বুধবার সকালে অবশ্য একটু সঙ্কটও হয়েছিল। এআইএডিএমকে সমর্থকরা জড়ো হয়েছিলেন রিসর্টের গেটে। বিক্ষোভ চলছিল বিদ্রোহী বিধায়কদের বিরুদ্ধে। কিন্তু পুদুচেরির সরকার কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় মুড়ে দিয়েছে উইন্ডফ্লাওয়ার রিসর্টকে। অতএব শশিকলা-দিনকরণদের অনুগামী ১৯ বিধায়ক এখন আরও নিরাপদ।

আরও পড়ুন: ইস্তফা দিতে চাইলেন রেলমন্ত্রী, মোদী বললেন অপেক্ষা করতে

২৩৪ আসনের তামিলনাড়ু বিধানসভায় একটি আসন এখন ফাঁকা। অতএব ১১৭ জন বিধায়ক সঙ্গে থাকলেই সরকার টিকে যায়। এআইএডিএমকে-র বিধায়ক সংখ্যা ১৩৪। পলানী-পনীরের সরকার নিশ্চিন্তে মেয়াদ পূর্ণ করতে পারত। দিনকরণ ১৯ বিধায়ককে আচমকা ভাঙিয়ে নেওয়ায় সরকার সঙ্কটে পড়েছে। যদি ফের অনাস্থার মুখোমুখি হতে হয় সরকারকে এবং এই ১৯ বিধায়ক পলানী-পনীরদের বিরোধিতায় অনড় থাকেন, তা হলে ১১৫টির বেশি ভোট পাবে না সরকার। ২ ভোটে মন্ত্রিসভার পতন ঘটতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তামিল রাজনীতির এই রিসর্টায়ন দেখে মজা পাচ্ছে কংগ্রেসও। অরুণাচলে দল ভাঙিয়েই কংগ্রেসের সরকার ফেলেছে বিজেপি। গোয়া এবং মণিপুরে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হওয়া সত্ত্বেও কংগ্রসকে সরকার গঠনের সুযোগই দেননি রাজ্যপালরা। গুজরাতেও একই রকম খেলা শুরু হয়েছিল। রাজ্যসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের আহমেদ পটেলকে হারাতে গুজরাতের কংগ্রেস পরিষদীয় দলে ধস নামিয়ে দিয়েছিল বিজেপি। রিসর্টের আশ্রয় নিয়েই আহমেদ পটেলকে জিতিয়ে এনেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস শাসিত কর্নাটকের রিসর্ট সে সময় কংগ্রেস বিধায়কদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিল। শশিকলা অনুগামীদের আশ্রয়স্থলও এ বার হয়ে উঠল আর এক কংগ্রেস শাসিত অঞ্চলের রিসর্টই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE