Advertisement
E-Paper

খড়পোড়া ধোঁয়াতেই দিল্লিতে ফের ছায়া বিপর্যয়ের

তিন দিন বাদে সূর্যের মুখ দেখল রাজধানীর মানুষ। ধোঁয়াশা-মুক্ত আকাশ দেখে দিল্লিবাসী আজ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও পরিবেশবিদদের বক্তব্য, ও স্বস্তি সাময়িক। সপ্তাহান্তে আরও ঘন হয়ে ফিরে আসতে চলেছে কুয়াশার মোটা সাদা চাদর।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২০
এমনই অবস্থা রাজধানীর।

এমনই অবস্থা রাজধানীর।

তিন দিন বাদে সূর্যের মুখ দেখল রাজধানীর মানুষ। ধোঁয়াশা-মুক্ত আকাশ দেখে দিল্লিবাসী আজ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও পরিবেশবিদদের বক্তব্য, ও স্বস্তি সাময়িক। সপ্তাহান্তে আরও ঘন হয়ে ফিরে আসতে চলেছে কুয়াশার মোটা সাদা চাদর।

কেন?

বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা: দিল্লির দূষণের পিছনে অন্যতম বড় কারণ— চাষের খেতে শুকনো খড় পোড়ানো ধোঁয়া। গত ক’দিন ধরে লাগোয়া পঞ্জাব, হরিয়ানা থেকে ওই ধোঁয়া এসে জমছিল দিল্লির আকাশে। বায়ুপ্রবাহের অনুপস্থিতিতে তা ঘোরালো হয়ে ওঠে। চলচ্ছক্তিহীন ধোঁয়াশা সাদা চাদরের মতো ঝুলে থাকে দিল্লি-সহ নয়ডা, গ্রেটার নয়ডা, গাজিয়াবাদ, গুরুগ্রামের উপরে। কার্যত তামাম ‘ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিওন’ ঢাকা পড়ে যায়। রীতিমতো বিপর্যয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

আজ সকাল থেকে বাতাসের জোর বাড়ায় সেই চাদর সরে গিয়েছে বটে। কিন্তু অশনি সঙ্কেত দিচ্ছে উপগ্রহ চিত্র। দেখা যাচ্ছে, গত দু’দিনে পঞ্জাবে যত চাষের জমিতে খড় জ্বালানো হয়েছে, তাতে ফের নতুন ভাবে ধোঁয়ার আস্তরণ সৃষ্টি হয়েছে বায়ুমণ্ডলে। যা সপ্তাহের শেষে আবার দিল্লির মাথা ঢেকে ফেলতে পারে।

বাঁচার উপায় কী?

পরিবেশবিদেরা বলছেন, প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিতে ধান কাটার পরে খেতে রয়ে যাওয়া ধানগাছের মূল ও খড়ের বোঝা থেকে নিস্তার পাওয়ার সবচেয়ে সস্তা উপায় হল আগুন লাগিয়ে দেওয়া। পরিবেশের যে দফারফা হচ্ছে, তা মাথায় রাখা হয় না। এ ক্ষেত্রে একমাত্র উপায়, ওই খড়কে বিকল্প কোনও কাজে লাগানো। তার মাধ্যমে রোজগারের পথ পেলে তবেই চাষিরা খড় জ্বালানো বন্ধ করবেন। কী ভাবে তা সম্ভব?

কৃষি-বিজ্ঞানী এমএস স্বামীনাথনের পরামর্শ, ওই খড় পশুখাদ্য, কাগজ বা বোর্ড তৈরিতে ব্যবহার করা হোক। ‘‘পরিমাণ মতো ইউরিয়া ও গুড়ের মিশ্রণে খড়কে অনায়াসে পশুখাদ্যে পরিণত করা যায়।’’— দাবি তাঁর। স্বামীনাথন এ-ও জানাচ্ছেন, খড়ের এ হেন বিকল্প প্রয়োগ মায়ানমারে সাফল্য পেয়েছে। এ ব্যাপারে একটি সার্বিক পরিকল্পনা তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জমা দিতে চলেছেন।

পাশাপাশি সার্বিক সচেতনতাবৃদ্ধির উপরেও জোর দিচ্ছেন বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদেরা। দিল্লির দ্য এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউটের সংস্থার গবেষক অরিন্দম দত্ত গুরুত্ব আরোপ করছেন মূলত তিনটি বিষয়ে। কী রকম?

অরিন্দমবাবুর ব্যাখ্যা: প্রথমত কৃষকদের বুঝতে হবে, এ ভাবে খড় পোড়ালে আখেরে চাষেরই ক্ষতি। কারণ, এতে ফসলের জন্য উপকারী ব্যাক্টেরিয়াও মারা পড়ে। তাতে ফলন কমে। দ্বিতীয়ত, চাষের সময়ে এমন ব্যাক্টেরিয়া ব্যবহার করতে হবে, যাতে খড় দু’-তিন দিনে জমিতেই পচে যায়। পোড়ানোর দরকার তো পড়বেই না, উল্টে ধানগাছের মূল ও খড় মাটিতে পচে জমির উর্বরতা বাড়াবে। ‘‘এবং তৃতীয়ত, এমন ধানের চাষ করতে হবে, যাতে খড় হয়ই কম।’’— বলেন অরিন্দমবাবু।

খড়-পোড়া ধোঁয়া তো আছেই। উপরন্তু দিল্লি ও আশপাশে বায়ুদূষণের বাড়বাড়ন্তের জন্য নির্মাণকাজে উৎপন্ন ধুলোকেও দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা। সব মিলিয়ে বিষ হয়ে উঠছে রাজধানীর বাতাস। কিন্তু উন্নত দেশগুলোতেও তো এই সমস্যা! তারা মোকাবিলা করছে কী ভাবে?

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, বিদেশেও চাষের খেতে আগাছা বা খড় পোড়ানো হয়। তবে কড়া নিয়ম মেনে। অরিন্দমবাবুর পর্যবেক্ষণ— আমেরিকা-ইউরোপের অধিকাংশ দেশের সার্বিক পরিকাঠামো ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অনেক উন্নত। সেখানে চাইলেই কেউ আগাছা বা খড় জ্বালাতে পারে না। সে জন্য আবহাওয়া দফতরের সবুজ সঙ্কেত লাগে। হাওয়ার গতিবেগ, বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা, তাপমাত্রা ইত্যাদি খতিয়ে দেখে আবহাওয়া দফতর সিদ্ধান্ত নেয়, খড় পোড়ানো যাবে কি না। একই ভাবে উন্নত দুনিয়ায় নির্মাণের ক্ষেত্রেও রাশ বাঁধা। আবাসন তৈরি বা বাড়ি ভাঙার সময়ে গোটা এলাকা চার দিক দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়, যাতে দূষণ বাইরে ছড়াতে না পারে।

ভারতেও এমন বহু দূষণরোধী নিয়ম-বিধি বলবৎ। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি বলে বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ। ‘‘বাস্তবে প্রয়োগের বালাই নেই বলেই আজ খাস রাজধানীর এই হাল।’’— আক্ষেপ করছেন পরিবেশবিদেরাও।

Delhi smog Pollution crop burning
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy