মুখোমুখি: ব্যক্তিপরিসরের অধিকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে। ছবি: পিটিআই।
মেঘ না-চাইতেই বরফ? না। তাঁরা মনে করছেন, যা উচিত তাই হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ব্যক্তিপরিসরের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে ব্যক্তির যৌন পছন্দকেও মৌলিক অধিকার হিসেবে মেনে নিয়েছে শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর, বিচারপতি আর কে অগ্রবাল, বিচারপতি এস আব্দুল নাজির, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় একসঙ্গে যে রায়টি লিখেছেন, তাতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা নিয়ে ২০১৩ সালে সু্প্রিম কোর্টের রায় যে ‘ভুল’ ছিল, স্বীকার করা হয়েছে তা-ও। বিচারপতি এস কে কউল এবং বিচারপতি এস এ বোবদে-ও আলাদা করে যৌন স্বাধীনতার পক্ষে রায় লিখেছেন। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই, ৩৭৭ নিয়ে যে কিউরেটিভ পিটিশন এখনও বিচারাধীন, তাতে জয়ের আশা দেখছেন সমকামীরা।
প্রধান বিচারপতি খেহর-সহ চার বিচারপতিই একমত— সুরেশ কৌশল বনাম নাজ ফাউন্ডেশন মামলার রায়ে যে ভাবে সু্প্রিম কোর্ট দিল্লি হাইকোর্টের রায় খারিজ করে বলেছিল, এলজিবিটি-দের ‘তথাকথিত অধিকার’ রক্ষার উৎসাহেই হাইকোর্ট নানা দেশের দৃষ্টান্তে আস্থা রেখেছে— সেটা ‘ঠিক’ হয়নি। বিচারপতিরা বলেছেন, যৌন সত্তা ব্যক্তির অস্তিত্বের অচ্ছেদ্য অংশ। সমতা, স্বাধীনতা ও বেঁচে থাকার অধিকারের সমান। এলজিবিটি সম্প্রদায় যৌন সংখ্যালঘু হতে পারেন, কিন্তু সেই যুক্তিতে তাঁদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। তথাকথিত মূলস্রোত বা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যৌন সংখ্যালঘুদের নিয়ে কী ভাবছেন, তাতেও কিছু আসে-যায় না। বিচারপতিদের মতে— ৩৭৭ ধারায় খুব অল্প কয়েক জনই শাস্তি পেয়েছেন, তাই তাতে বিরাট কোনও অধিকার লঙ্ঘন হয়নি, কৌশল মামলার এই যুক্তি ‘ত্রুটিপূর্ণ এবং সমর্থন-অযোগ্য।’
২০০৯ সালে নাজ ফাউন্ডেশন-এর মামলায় দিল্লি হাইকোর্ট বলে, ৩৭৭ ধারার ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ যৌনকর্ম’ সংক্রান্ত অংশটি অসাংবিধানিক। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যান জ্যোতিষী কৌশল। ২০১৩-র ডিসেম্বরে শীর্ষ আদালত রায় দেয়, ৩৭৭ ধারা অসাংবিধানিক নয়। তবে সরকার চাইলে নতুন আইন করুক।
সে দিন হতাশ হয়েছিলেন যাঁরা, এ দিন তাঁদের মুখে হাসি। গত আড়াই দশক ধরে এ দেশ তথা কলকাতার সমকামী আন্দোলনের অগ্রণী সৈনিক পবনী ঢালি বা রাজ্যের ট্রান্সজেন্ডার উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য, রূপান্তরকামী নারী রঞ্জিতা সিংহের কথায়, ‘মূলস্রোতের বাইরের যৌনতা স্বীকৃতি পাবে বিশ্বাস করি! কিন্তু এ ভাবে শিকে ছিঁড়বে, ভাবিনি!’’ ফ্যাশন ডিজাইনার রায়না রায় বা স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে তালিমরত জিয়া দাস (যিশু)-র মতো রূপান্তরকামীরাও খুব খুশি।
এখন বাকি ৩৭৭ ধারা রদ করার লড়াই। শীর্ষ আদালত বলেছে, অন্য বেঞ্চে বিচারাধীন মামলার রায় অন্য বেঞ্চই দেবে। তবে সমাজকর্মীরা আত্মবিশ্বাসী, এ দিনের পরে লড়াই এগিয়ে গেল। সমকামী নারীদের এক সংগঠনের নেত্রী মালবিকার কথায়, ‘‘সাতরঙা সমাজ গড়তে ৩৭৭ রদ করতেই হবে।’’ তবে তাঁরা নিশ্চিত নন, রাস্তাঘাটে টিটকিরি-কটূক্তি বন্ধ হবে কি না! ট্রান্সজেন্ডার উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য তথা হিজড়া সমাজভুক্ত অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় তাই বলছেন, সমাজে স্বীকৃতির লড়াইটা চলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy