সনিয়া গাঁধী এবং নরেন্দ্র মোদী।—ফাইল চিত্র।
প্রবল রাজনৈতিক বিরোধিতায় ১৪ বছর ধরে আটকে ছিল মহিলা সংরক্ষণ বিল। সনিয়া গাঁধীর উদ্যোগেই ২০১০ সালে রাজ্যসভায় তা পাশ হয়। এখন সেই সনিয়াই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বিজেপির ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ’ নিয়ে বিলটি লোকসভায় পাশ করানোর অনুরোধ করলেন।
এমন একটি সময়ে সনিয়া চিঠিটি লিখলেন, যখন খোদ নরেন্দ্র মোদীই মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে আলোচনার প্রক্রিয়া তলে তলে শুরু করেছেন। সে কারণে বিজেপি বলছে, বিল পাশ হলে নরেন্দ্র মোদীর কৃতিত্বে ভাগ বসাতেই আগেভাগে চিঠি লিখে তা প্রকাশ্যে আনলেন সনিয়া। অন্য দিকে কংগ্রেসের বক্তব্য— মহিলা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, লোকসভার স্পিকার— সব কংগ্রেসেরই দেওয়া। রাজীব গাঁধীই পুরসভা-পঞ্চায়েতে মহিলা সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছিলেন। ফলে মহিলাদের ক্ষমতায়নের বিষয়ে তাদের বিজেপির শংসাপত্রের প্রয়োজন নেই।
বস্তুত এই কথাটি বোঝাতেই গত কাল মোদীকে চিঠি লেখার পর আজ কংগ্রেসের পাঁচ মহিলা নেত্রীকে সামনে নিয়ে আসেন সনিয়া। সুস্মিতা দেব, শর্মিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়, শোভা ওঝা, প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী, খুশবুকে দিয়ে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করিয়ে সনিয়া বুঝিয়ে দেন, মহিলাদের ক্ষমতায়নের বিষয়ে কংগ্রেস গোড়া থেকেই আন্তরিক। বরং ইদানীং মোদী যে ভাবে বেটি বচাও বেটি পড়াও, তিন তালাক, মহিলা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মতো বিষয়কে সামনে এনে নারীদরদি ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চাইছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে কংগ্রেস। এ দিন সুস্মিতা-শর্মিষ্ঠারা বলেন, মহিলা সংরক্ষণ বিল যদি লোকসভায় পাশ করাতে হয় তবে তা আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনেই করা উচিত। কারণ এটি সংবিধান সংশোধনী বিল। তাকে কার্যকর করা এক দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এ বছরেও বিলটি পাশ না হলে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে তা রূপায়ণ করা কঠিন হবে।
আরও পড়ুন:গুরুর নামে পুরস্কার চালু করে বিতর্কে মোদী
মোদীকে সনিয়া নিজেও লিখেছেন, ‘‘২০১০ সালে রাজ্যসভায় বিলটি পাশের পর নানা কারণে লোকসভায় পাশ করানো যায়নি। লোকসভায় আপনার সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে বিলটি পাশ করুন। মহিলাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কংগ্রেস তা পূর্ণ সমর্থন করবে।’’ বিজেপি এখন বুঝতে পারছে, সনিয়া কৌশলে এর মাধ্যমে মোদীর উপরে চাপই বাড়ালেন। কারণ, এই বিল পাশ করানো নিয়ে বিভিন্ন দলের ঘোর আপত্তি রয়েছে। ১৯৯৬ সালে সংসদে প্রথম বিলটি পেশ হয়। কিন্তু বিরোধের জেরে তিন বার বিলটির মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। তার পর সনিয়ার উদ্যোগে ২০১০ সালে বিলটি রাজ্যসভায় পাশের সময়েও সংসদে উচ্চকক্ষ রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। বিজেপির মধ্যেও এই নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। কারণ, ৩৩ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হলে পরের ভোটে অনেক পুরুষকেই প্রার্থীপদ খোয়াতে হবে। যে কারণে বিজেপির ভূপেন্দ্র যাদবের মতো কোনও কোনও নেতা এখনও বলছেন, এই বিল আনার কোনও প্রস্তাব দলে নেই।
কিন্তু নির্মলা সীতারামনকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী করার পর থেকে মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে যে ভাবে ইতিবাচক সাড়া পড়েছে, লোকসভার আগে সেটিকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। তার পুরো কৃতিত্বও নিতে চাইছেন। বিজেপির এক সাধারণ সম্পাদক আজ বলেন, ‘‘বিলটি সংসদের পরের অধিবেশনে আনার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy