এক পক্ষ বলছে, তিন মাসের মধ্যে বিচার না পেলে আত্মহত্যা করা ছাড়া পথ নেই। অন্য পক্ষ বলছে, জোর করে মিথ্যে অভিযোগ এনেছে পুলিশ। এখনই মামলা তোলা না হলে আত্মহত্যা করতে হবে। আর শাসক দলের রাজনীতিক বলছেন, পুরোটাই হয়তো ষ়ড়যন্ত্র। সব মিলিয়ে ক্রমশই জটিল হচ্ছে বুলন্দশহরে গণধর্ষণ ও ডাকাতি কাণ্ডে তদন্তের পথ।
বুলন্দশহরে ৯১ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে ডাকাতি ও গণধর্ষণ নিয়ে হইচইয়ের জেরে আগেই বিপাকে পড়েছিল অখিলেশ যাদব সরকার। এ বার তাদের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে মুখ খুলেছেন নির্যাতিতার স্বামী। ৩৯ বছরের ওই ওলা ক্যাব চালক ১৮ বছর ধরে নয়ডার বাসিন্দা। কিন্তু এখন আর পাড়ায় থাকা যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন তিনি।
কেন?
তিনি জানাচ্ছেন, ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে কার্যত একঘরে হয়ে গিয়েছেন তাঁরা। নয়ডায় এক বন্ধুর আশ্রয়ে ছিলেন। সেই বন্ধুও এ বার চলে যেতে বলেছেন। মেয়েকেও অন্য স্কুলে ভর্তি করতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাঁর প্রশ্ন, কত দিন লোকের নজর এড়িয়ে, জায়গা বদল করে ৩৫ বছরের স্ত্রী আর ১৪ বছরের মেয়েকে নিয়ে থাকবেন? সামাজিক বয়কটে অতিষ্ঠ হয়ে যাওয়া ওই ব্যক্তি বলছেন, ‘‘তিন মাসের মধ্যে সুবিচার না পেলে সপরিবার আত্মহত্যা করা ছাড়া গতি থাকবে না। ক্ষতিপূরণ নয়, আমরা বিচার চাই।’’ ঘটনার পরে চিকিৎসকের কাছে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য গিয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন তাঁর স্ত্রী। বলেছেন, ‘‘আমাদের অবস্থা দেখার পরেও চিকিৎসক ধর্ষণের কথা মানতে চাইছিলেন না।’’ ওই চিকিৎসককে আগেই সমন পাঠিয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশন।
ঘটনার পর থেকেই তাঁদের কাছে যাতায়াত করছেন রাজনীতিক আর প্রশাসনিক কর্তারা। সংবাদমাধ্যমে জল্পনা হচ্ছে ঘটনায় রাজনৈতিক রং লাগা নিয়ে। এ দিনও এসেছিলেন বিজেপির প্রতিনিধিরা। আসার কথা খোদ মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবেরও। প্রশাসন জানিয়েছে, ওই পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। নিজেদের রক্ষা করার জন্য আগ্নেয়াস্ত্রও পাবেন তাঁরা। লোহিয়া আবাস যোজনা ও বৃদ্ধ বয়সে পেনশন প্রকল্পের সুবিধে দেওয়া হবে ওই পরিবারকে। উত্তরপ্রদেশে তাঁদের গ্রামের বাড়িতে দেওয়া
হবে বিদ্যুৎ।
কিন্তু তাতে সমস্যা মিটছে না। ৩৯ বছর বয়সি ক্যাব চালক বলছেন, ‘‘ঘটনা নিয়ে রাজনীতি তো আমিও চাই না। কিন্তু নেতারা দেখা করতে এলে ফিরিয়ে দেব কেন? তবে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে প্রশাসন ভুল করছে। বুলন্দশহরের প্রাক্তন এসএসপি বৈভব কৃষ্ণন আমাদের খুব সাহায্য করেছিলেন। আর এরা কিনা তাঁকেই সাসপেন্ড করে দিল?’’
এই ‘তাড়াহুড়ো’র জেরেই আর এক আত্মহত্যার হুমকির মুখে পড়েছে অখিলেশ যাদব সরকার। এই হুমকি ধৃত তিন জনের অন্যতম রইসউদ্দিনের স্ত্রী তারানার। তাঁর দাবি, ‘‘ঘটনার সময়ে আমার স্বামী বাড়িতে ছিলেন। পুলিশ তাঁকে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়েছে। মামলা তোলা না হলে আমি আত্মহত্যা করব।’’ তবে আর এক অভিযুক্ত বাবলুর বাবা রূপচন্দ বলেছেন, ‘‘ওর স্বভাবের জন্যই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। এখনও ওকে বাঁচাতে বাড়ি বা গ্রামের কেউ যাবে না।’’
এই টানাপড়েনের মধ্যে জল আরও ঘোলা করেছে রাজ্যের মন্ত্রী এবং সমাজবাদী পার্টির নেতা আজম খানের বক্তব্য। তাঁর মতে, ‘‘বিরোধীরা এই ঘটনার পিছনে রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত। ভোট পেতে গুজরাত, উত্তরপ্রদেশে মানুষ খুন
করা হয়েছে। এতো কেবল ধর্ষণের ঘটনা। পুরোটাই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হতে পারে।’’
স্পষ্টতই বিজেপি-কে ঠুকতে চেয়েছিলেন আজম। কিন্তু উল্টে তাঁর মন্তব্য নিয়েই সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, আজম খান সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছেন। বিজেপির জাতীয় সম্পাদক শ্রীকান্ত শর্মার কথায়, ‘‘আজমের মন্তব্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে উত্তরপ্রদেশের শাসক দল ভোটের জন্য কত দূর নামতে পারে। সমাজবাদী পার্টির বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধ থাকলে এই ঘটনার তদন্তের ভার সিবিআই-কে দেওয়া হোক।’’
বেগতিক বুঝে ফের বিবৃতি দেন আজম। দাবি করেন, তাঁর মন্তব্যের ভুল অর্থ করা হচ্ছে। এই জঘন্য অপরাধের কড়া শাস্তি হওয়া উচিত। সমাজবাদী পার্টির সাংসদ রামগোপাল যাদব বলেন, ‘‘সরকার প্রাণপণ চেষ্টা করছে। সংবাদমাধ্যম অখিলেশ যাদব সরকারের প্রতি স্বভাবত বিরূপ।
তাই বেছে বেছে আমাদের নিশানা করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy