অরবিন্দ সুব্রহ্মণিয়ন ও সুব্রহ্মণ্যম স্বামী।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজনের পর এ বারে কেন্দ্রীয় সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণিয়ন।
ঠিক একই কায়দায় এ বারে অরবিন্দের অপসারণের দাবি তুললেন বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। রাজনের মতো অরবিন্দও এক সময়ে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (আইএমএফ)-এ কাজ করেছেন। স্বামীর অভিযোগ, অরবিন্দ সে সময় ভারত-বিরোধী অবস্থান নিয়েছিলেন। ওষুধ শিল্প নিয়ে ভারতের প্রতি কড়া হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন মার্কিন কংগ্রেসকে। এমনকী, পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) নিয়ে কংগ্রেসের অবস্থান মানার ব্যাপারেও নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে আর্জি জানিয়েছিলেন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আজ স্বামীর এই দাবি সটান খারিজ করে অরবিন্দের পাশেই এসে দাঁড়িয়েছেন। যদিও বিতর্কে ইতি পড়ছে না তাতে।
রঘুরাম রাজনের বিদায় সুনিশ্চিত করে রক্তের স্বাদ পাওয়া স্বামী ক’দিন আগেই জানিয়েছিলেন, সনিয়া গাঁধীর অনুগত ২৭ জন আমলার মুখোশ খুলবেন তিনি। যাঁদের পি চিদম্বরম সরকারের বিভিন্ন পদে বসিয়ে গিয়েছেন। স্বামী দাবি করেন, এই ২৭ জনের প্রথম নামটিই হল অরবিন্দ সুব্রহ্মণিয়নের। যদিও বাস্তব এটাই যে, রাজনের নিয়োগ ইউপিএ আমলে হলেও অরবিন্দের তা নয়। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই এই পদে নিয়োগ করা হয়েছে তাঁকে। রাজনের মেয়াদ শেষ হলে সেই পদে অরবিন্দকে আনা হবে কি না তা নিয়েও চর্চা চলছে। এই পরিস্থিতিতে অরবিন্দকে আক্রমণ করায় প্রশ্ন উঠছে, এর পিছনেও কী সঙ্ঘ ও বিজেপির একাংশের মদত রয়েছে?
কংগ্রেসের নেতা দিগ্বিজয় সিংহ আজ সকালেই মন্তব্য করেছেন, সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টাকে আক্রমণ করে স্বামী আসলে অর্থমন্ত্রী জেটলিকেই নিশানা করতে চাইছেন। নরেন্দ্র মোদী এখনও মন্ত্রিসভার বহু প্রতীক্ষিত রদবদল করেননি। তার আগে ধাপে ধাপে স্বামী চাপ বাড়াচ্ছেন, যাতে জেটলিকে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে তাঁকে বসানো হয়। সেই সূত্রে জেটলির পাশে দাঁড়িয়ে মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এ দিন বলেন, ‘‘জেটলির নিষ্ঠা ও যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। আমরা ছাত্র বয়স থেকে তাঁকে দেখে আসছি।’’ দলের পক্ষ থেকে অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ সচিব শ্রীকান্ত শর্মাও বলেন, ‘‘সুব্রহ্মণ্যম স্বামী যা বলেছেন, তা দলের অবস্থান নয়। এটি তাঁর ব্যক্তিগত মতামত।’’
রাজনের বেলাতেও খোদ অমিত শাহ স্বামীর মন্তব্য ‘দলের অবস্থান নয়’ বলে এড়িয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, দলের অবস্থানের বাইরে গিয়ে বিজেপির এক সাংসদ বারবার একের পর এক সরকারি ব্যক্তির বিরুদ্ধে তোপ দাগা সত্ত্বেও কেন তাঁকে ডেকে সতর্ক করা হচ্ছে না? বিতর্কিত মন্তব্য করায় অন্যান্য নেতা-নেত্রীর ক্ষেত্রে যা করা হয়েছে একাধিক বার?
বিজেপির একটি সূত্রের মতে, সঙ্ঘের একটি অংশ আগাগোড়া সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর পিছনে রয়েছেন। আর সেটি অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদীর কাছেও স্পষ্ট। সঙ্ঘের এস গুরুমূর্তি, সুব্রহ্মণ্যম স্বামীদের তথাকথিত ‘স্বদেশি স্কোয়াড’ ধীরে ধীরে এমন ব্যক্তিদের সরকারিতন্ত্র থেকে বাদ দিতে চাইছেন, যাঁরা ভারতের ‘স্বার্থ’ মেনে কাজ করছেন না। আর মোদী-অমিতদের নীরবতা স্বামীকে আরও ইন্ধন জোগাচ্ছে।
জেটলির সঙ্গে স্বামীর কোনও দিনই তেমন বনিবনা নেই। স্বামী এ পর্যন্ত যে ক’জনের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন, কোনও না কোনও ভাবে তাঁরা জেটলির মন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত। জেটলির অস্বস্তি এতে আরও বেড়েছে। সেই অস্বস্তি আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সাংবাদিক বৈঠকেও প্রকাশ পায়। জেটলি বলেন, ‘‘এর আগে দলের সভাপতি অমিত শাহও স্বামীর মন্তব্য থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন। মন্তব্য করার সময় সংযম বজায় রাখা উচিত। অরবিন্দর উপর সরকারের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আজ মন্ত্রিসভায় বস্ত্র শিল্পের জন্য যে বিশেষ প্যাকেজের সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার খসড়া তৈরিতেও সাহায্য করেছেন তিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy