Advertisement
E-Paper

সমকাম নিয়ে রায় খতিয়ে দেখবে সুপ্রিম কোর্ট

গোপনীয়তার অধিকার মামলায় রায় দিতে গিয়েই সমকামিতা নিয়ে নিজের পুরনো রায়কে প্রবল সমালোচনা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার সমকামিতা নিয়ে সেই রায় পুনর্বিবেচনা করার সিদ্ধান্তও জানিয়ে দিল তারা।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২৯
‘বিদ্রোহী’ বিচারপতির সাংবাদিক বৈঠক আইনত অসিদ্ধ নয়। কিন্তু এটা অন্যায্য। না করাই শ্রেয়। এটা প্রথা ভাঙা। ফাইল চিত্র।

‘বিদ্রোহী’ বিচারপতির সাংবাদিক বৈঠক আইনত অসিদ্ধ নয়। কিন্তু এটা অন্যায্য। না করাই শ্রেয়। এটা প্রথা ভাঙা। ফাইল চিত্র।

গোপনীয়তার অধিকার মামলায় রায় দিতে গিয়েই সমকামিতা নিয়ে নিজের পুরনো রায়কে প্রবল সমালোচনা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার সমকামিতা নিয়ে সেই রায় পুনর্বিবেচনা করার সিদ্ধান্তও জানিয়ে দিল তারা।

ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় সমকামিতাকে প্রকৃতিবিরুদ্ধ যৌনাচার হিসেবে গণ্য করে অপরাধের তকমা দেওয়া আছে। ব্রিটিশ আমলের সেই আইন এখনও বিদ্যমান। মাঝে ২০০৯ সালে দিল্লি হাইকোর্ট এক যুগান্তকারী রায়ে ৩৭৭ ধারাকে সংবিধানপ্রদত্ত মৌলিক অধিকারের বিরোধী বলে আখ্যা দিয়েছিল। তার ফলে সমকামিতা যেমন সাময়িক ভাবে অপরাধের তকমামুক্ত হয়, তেমনই ৩৭৭ ধারার অংশবিশেষ অসাংবিধানিক বলে চিহ্নিত হয়ে যায়। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট দিল্লি হাইকোর্টের সেই রায় খারিজ করে বলে, ৩৭৭ ধারাকে অসাংবিধানিক বলা চলে না। পরিণাম? সমকামিতা ফের অপরাধের তালিকায় আসে।

সুপ্রিম কোর্টের ওই রায় নিয়ে গত ক’বছরে বিতর্ক কম হয়নি। যদিও এও ঠিক, সুপ্রিম কোর্ট তখনও বারবার বলেছিল, কেন্দ্র চাইলে দণ্ডবিধি সংশোধন করতেই পারে, ৩৭৭ ধারা বিলোপ করে নতুন আইন করতেই পারে। তাতে কোনও বাধা নেই। ফলে এক অর্থে সমকামিতাকে আইনত অপরাধের দায়মুক্ত করা হবে কি না, সেই সিদ্ধান্তের বলটি সরকারের কোর্টে ঠেলে দিয়েছিল তারা। সেই রায়ের বিরুদ্ধে একাধিক কিউরেটিভ পিটিশন হয়। ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ বলে, সব ক’টি পিটিশনই পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে শোনা হবে। সেই শুনানি এখনও চলছে। ইতিমধ্যে আজ বর্তমান প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ স্পষ্ট করে বলে দিল, ২০১৩-র রায় পুনর্বিবেচনা করার অবকাশ রয়েছে আর সেটা সাংবিধানিক বেঞ্চেই হবে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র এবং বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, যাঁরা আজকের তিন সদস্যের বেঞ্চে ছিলেন— দু’জনেই এর আগে গোপনীয়তার অধিকার মামলার আট সদস্যের বেঞ্চেও ছিলেন। ৩৭৭ ধারা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে আগের অবস্থান বদলাতে চায়, সে কথা ওই মামলার রায়েই বলা হয়েছিল। নিজের পুরনো রায় সম্পর্কে খুবই কড়া মন্তব্য করেছিল শীর্ষ আদালত।

আজ যেন সেই সুরটি এগিয়ে নিয়ে গিয়েই শীর্ষ আদালত বলল, যৌন রুচি নিয়ে কারও ভয়ে ভয়ে থাকা উচিত নয়। আর ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ যৌনতা’র প্রশ্নে তার মন্তব্য, ‘‘এক জনের কাছে যা অস্বাভাবিক, অন্যের কাছে তা স্বাভাবিক মনে হতেই পারে।’’ আদালতের মতে, নৈতিকতার প্রশ্নটি যুগে যুগে পাল্টে যায়। আইন যাতে নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব না করে, সেটা দেখতে হবে। ফলে এ বার সংবিধানের ২১ ধারা অনুযায়ী, নাগরিকদের জীবন ও স্বাধীনতার অধিকারের ভিত্তিতেই সমকামের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চলেছে সাংবিধানিক বেঞ্চ। সমকামীরা স্বাভাবিক ভাবেই এতে আশার আলো দেখছেন। কেন্দ্রীয় সরকার এত দিন বারবার পাশ কাটাচ্ছিল। তাদেরও এ বার আদালতে নিজের অবস্থান জানাতে হবে। বিশিষ্ট আইনজীবী হরিশ সালভে অবশ্য মনে করছেন, ‘‘গোপনীয়তার অধিকার স্বীকৃত হওয়ার সঙ্গেই ৩৭৭ ধারার মৃত্যু হয়ে গিয়েছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটা বাকি। আদালত সেটা দ্রুতই সেরে ফেলবে।’’

Supreme Court of India Homosexuality Colonial-Era Law সুপ্রিম কোর্ট
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy