Advertisement
E-Paper

নির্ভয়াকাণ্ডে ফাঁসিই বহাল, ক্ষমার প্রশ্ন নেই: সুপ্রিম কোর্ট

কোনও সাধারণ অপরাধ নয়। বিরল থেকে বিরলতম এই অপরাধ। নির্ভয়া গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় এই পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৭ ১৪:৩৬
অক্ষয় ঠাকুর, পবন গুপ্ত (বাঁ-দিক থেকে উপরে) মুকেশ সিংহ ও বিনয় শর্মা (বাঁ-দিক থেকে নীচে)। —ফাইল চিত্র।

অক্ষয় ঠাকুর, পবন গুপ্ত (বাঁ-দিক থেকে উপরে) মুকেশ সিংহ ও বিনয় শর্মা (বাঁ-দিক থেকে নীচে)। —ফাইল চিত্র।

কোনও সাধারণ অপরাধ নয়। বিরল থেকে বিরলতম এই অপরাধ। নির্ভয়া গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় এই পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের।

শুক্রবার এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত চার জনের ফাঁসির সাজাই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। সারা দেশকে শিউরে দেওয়া এই মামলায় ২০১৩ সালে চার জনের ফাঁসির সাজা হয়েছিল নিম্ন আদালতে। পরের বছর দিল্লি হাইকোর্টও একই সাজা বহাল রাখে। তবে সাজার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল দোষীরা। এ দিন সেই আর্জি খারিজ করে ফাঁসির সাজাই বহাল রাখল শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি আর ভানুমতী এবং বিচারপতি অশোক ভূষণের ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দেয়।

এ দিন ভিড়েঠাসা আদালতকক্ষে উপস্থিত ছিলেন নির্ভয়ার মা-বাবা। দুপুর ২টো নাগাদ রায় পড়ে শোনান বিচারপতি দীপক মিশ্র। তিনি বলেন, “নির্ভয়া গণধর্ষণ ও খুনের মামলায় বিরল থেকে বিরলতম। ফলে দোষীদের কোনও ভাবেই এতে ক্ষমার প্রশ্ন ওঠে না। এবং সুবিচার নিশ্চিত করতে দোষীদের সর্বোচ্চ সাজা শোনাতে আমরা বাধ্য হচ্ছি।”

বিচারপতির রায় শোনানো শেষ হওয়ামাত্রই আদালতকক্ষে করতালির ঝড় ওঠে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আদালতে উপস্থিত অন্তত ৮-১০ জন একটানা হাততালি দিতে থাকেন। সামনের সারিতে বসে থাকা জ্যোতি সিংহের মা-বাবার চোখেমুখে তখন দৃশ্যতই সন্তুষ্টির ছাপ। আদালতের মধ্যেই জলে ভিজে ওঠে জ্যোতির মা আশা সিংহের দু’চোখ।

আরও পড়ুন

‘শুধু আমার মেয়েই নয়, বিচার পেল ওর মতো সবাই’

প্রায় পাঁচ বছর আগের সেই শীতের রাতের ঘটনা। সঙ্গীর সঙ্গে সিনেমা দেখে বাড়ি ফেরার পথে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন ২৩ বছরের মেডিক্যাল ছাত্রী নির্ভয়া। গণধর্ষণের পরও চলে অকথ্য শারীরিক নির্যাতন। এর পর নির্ভয়া ও তাঁর সঙ্গীকে চলন্ত বাস থেকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলা দেওয়া হয়। তাঁর সঙ্গী প্রাণে বেঁচে গেলেও ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েও ফিরে আসতে পারেননি নির্ভয়া। রাজধানীর ওই ঘটনার নৃশংসতার স্মৃতি আজও অনেকের মনেই তাজা।

১২ ডিসেম্বর, ২০১২। তাঁর সঙ্গীর সঙ্গে সিনেমা দেখে বাড়ির পথে রওনা দেন ফিজিওথেরাপির ছাত্রী জ্যোতি সিংহ। দক্ষিণ দিল্লিতে একটি বাসে ওঠেন তাঁরা। সেই বাসে ছিল আরও ছ’জন। বাসচালক রাম সিংহ আশ্বাস দেয়, নির্দিষ্ট জায়গায় তাঁদের নামিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু, বাস চলতে শুরু করলে জ্যোতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে অন্যরা। সঙ্গীর সামনেই জ্যোতিকে একে একে ধর্ষণ করে ছ’জন। এতেও থেমে থাকেনি তারা। জ্যোতির শরীরে লোহার রড ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। টেনে বের করে আনা হয় তাঁর নাড়িভুঁড়ি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু, অবস্থায় উন্নতি না হওয়া নির্ভয়াকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সিঙ্গাপুরে। সেখানেই হাসপাতালে মারা যান তিনি। এই ঘটনার পর দেশ-বিদেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। বিক্ষোভ চলতে থাকে রাজধানী-সহ দেশের নানা প্রান্তে। প্রাথমিক ভাবে জ্যোতির নাম-পরিচয় গোপন রাখা হয়। নির্ভয়া বা দামিনী নামেই তাঁর উল্লেখ করা হয় সংবাদমাধ্যমে। পরে প্রকাশ্যে আসেন তাঁর মা-বাবা। মেয়ের নাম-পরিচয়ও জানান তাঁরা।

আরও পড়ুন

কোন পথে নির্ভয়া-মামলা

নির্ভয়াকাণ্ডের পর দোষীদের শাস্তির দাবিতে মোমবাতি মিছিল। ফাইল চিত্র

ঘটনায় অভিযুক্ত ছ’জনের মধ্যে এক নাবালকও ছিল। ওই নাবালক-সহ অভিযুক্ত অক্ষয় ঠাকুর, বিনয় শর্মা, পবন গুপ্ত, রাম সিংহ, ও মুকেশকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পর গত ২০১৩-তে নিম্ন আদালতে বিচার শুরু হয় তাদের। তবে ঘটনার সময় এক অভিযুক্তের বয়স ১৮ বছর থেকে মাসখানেকের কম হওয়ায় তাকে জুভেনাইল কোর্টে তোলা হয়। নিম্ন আদালতে মামলা চলাকালীনই ২০১৩-র মার্চে তিহাড় জেলে আত্মহত্যা করে রাম সিংহ। অক্ষয় ঠাকুর, বিনয় শর্মা, পবন গুপ্ত, ও মুকেশ সিংহকে ফাঁসির সাজা শোনায় নিম্ন আদালত। একই রায় বহাল রাখে হাইকোর্টও। জুভেনাইল কোর্টে তিন বছরের সাজা মেলে ওই নাবালকের। গত ২০১৫-তে সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পেয়ে যায় সে। তবে ফাঁসির সাজার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে অক্ষয় ঠাকুর, বিনয় শর্মা, পবন গুপ্ত, ও মুকেশ। সেই আবেদন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট।

এই অপরাধকে বিচারপতি দীপক মিত্র “অত্যন্ত নিষ্ঠুর, নৃশংস ও বর্বর আচরণ” বলে আখ্যা দেন। তিনি আরও বলেন, “দোষীদের এই আচরণ মানুষের বিবেকবোধকেও নাড়িয়ে দিয়েছে। এটি ক্ষমারও অযোগ্য কাজ।” শীর্ষ আদালতের মতে, গণধর্ষণের পর নির্ভয়াকে চলন্ত বাস থেকে ঠেলে ফেলে মেরে ফেলতেই চেয়েছিল দোষীরা। নির্ভয়ার জীবন কেড়ে নেওয়াটাও উপভোগ করেছিল অপরাধীরা। এই প্রবণতায় রীতিমতো শক্‌ড তাঁরা। এই হতবাক অবস্থা যেন সুনামির মতো আছড়ে পড়ছে সকলের উপরে। সুতরাং, দোষীদের চরম শাস্তি দিয়ে “সমাজে একটা বার্তা দেওয়াটা জরুরি” বলে মনে করেন তাঁরা।

দোষীদের ফাঁসির সাজাই চান আগেই জানিয়েছিলেন নির্ভয়ার বাবা। এর আগে তিনি বলেছিলেন, “ওই চার জনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হোক। এ রকম অপরাধের থেকে নৃশংস আর কিছুই হয় না।” রায়দানের পর আদালতের বাইরে পা রেখে নির্ভয়ার বাবা বি এন সিংহের প্রথম প্রতিক্রিয়া, “আমি খুশি!” আশাদেবী বলেন, “আমার মেয়ে সুবিচার পেল! আমার মেয়ের মতো যাঁদের সঙ্গে এ রকম অপরাধ হয়েছে আজ তাঁদেরও জয়।”

Nirbhaya Gangrape Case Supreme Court Nirbhaya Death Sentence Crime গণধর্ষণ নির্ভয়া Justice
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy