জাকিয়া সোমান ও নুরজাহান সাফিয়া নিয়াজ।
গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজনেস কমিউনিকেশনের অধ্যাপক ছিলেন। কিন্তু ১৬ বছর ঘর-সংসারের পরে নিজের বিবাহবিচ্ছেদের সময় টের পান, মুসলিমদের তালাক প্রথার ফাঁদ কিছুই তাঁর জানা ছিল না। তখনই মনে প্রশ্ন ওঠে, শিক্ষিত হয়েও যদি তাঁর শরিয়তের নিয়মবিধি জানা না থাকে, তা হলে নিরক্ষর, দরিদ্র, সাধারণ মহিলাদের কী অবস্থা!
এই প্রশ্ন থেকেই মুসলিম মহিলাদের জন্য লড়াই শুরু জাকিয়া সোমানের। নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাত থেকেই। সেই লড়াই-ই তাৎক্ষণিক তিন তালাক খারিজের রায়ে পরিণতি পেল।
জাকিয়ার সঙ্গে ছিলেন মুম্বইয়ের সমাজকর্মী নুরজাহান সাফিয়া নিয়াজ। সমাজতত্ত্বে ডক্টরেট নুরজাহান সেই নয়ের দশক থেকেই মুম্বইয়ের ধারাভিতে কাজ করছেন। তিনি ও জাকিয়া মিলে তৈরি করেন ‘ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন’। সেই সংগঠনই তিন তালাকের ভুক্তভোগী পাঁচ মহিলার পাশে দাঁড়িয়ে সুপ্রিম কোর্টে লড়াই করেছে।
এগারো বছরের লড়াইটা অবশ্য সহজ ছিল না। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁদের। কিন্তু সে সবে আমল দেননি দু’জনে। এগারো বছরে পা দিয়ে সংগঠনের সদস্য সংখ্যা এখন এক লক্ষেরও বেশি। পড়াশোনা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: কোর্ট কেন, মৌলবিই তো আছেন
সংগঠনের এক নেত্রী বললেন, ‘‘দিনে অন্তত একজন মহিলা স্বামীর থেকে তাৎক্ষণিক তিন তালাক পেয়ে আমাদের শরণাপন্ন হন। অবশ্য পুরুষরাও আসেন। তাঁদের বোনের জন্য সাহায্য চেয়ে।’’ জাকিয়া-নুরজাহানের মতে, এত দিন পার্সোনাল ল’ বোর্ডের মতো ইসলামের ‘স্বঘোষিত রক্ষাকর্তারা’ মহিলাদের জন্য কোরান, হাদিসের ব্যাখ্যা করে দিত। তাই এমন কারও দরকার ছিল, যাঁরা মহিলাদের জন্য কোরানের ব্যাখ্যা করে দেবেন।
শুধু সুপ্রিম কোর্টের তিন তালাক রায়-ই নয়, হাজি আলি দরগায় মহিলাদের প্রবেশের অনুমতিও জাকিয়া-নুরজাহানের হাত ধরে। কিন্তু এ বার তাঁদের দাবি, তিন তালাকের সঙ্গে মুসলিমদের মধ্যে বহু বিবাহ, নিকাহ হালালা (বিবাহবিচ্ছেদের পরে একই পুরুষকে ফের বিবাহ করার আগে অন্য পুরুষকে বিয়ে করে সহবাস)-এর মতো প্রথাও বন্ধ হোক।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নয়। তাঁরা চান, চালু হোক মুসলিমদের পারিবারিক আইন। এখনই তাই লড়াই শেষ বলে মানতে নারাজ জাকিয়া-নুরজাহানরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy