আজ সংসদে আর্থিক সমীক্ষা পেশ করবেন অরুণ জেটলি। তার আগে সোমবার নর্থ ব্লকে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন, অর্থ বিষয়ক সচিব শক্তিকান্ত দাস (বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়)। ছবি: পিটিআ
মাঘ মাস পড়ার আগেই ইঙ্গিতটা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে দলের মধ্যে ও পরে টুইট বার্তায় বলেছিলেন, ‘শুক্লা পঞ্চমীর সকালে আবার বাজেট বক্তৃতা কীসের? ওই দিন আমরা সবাই সরস্বতী পুজো করব!’ সোমবার, সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা আগে তৃণমূল নেত্রী স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিলেন যে, আজ, মঙ্গলবার বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদের যৌথ সভায় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বক্তৃতা এবং কাল, বুধবার লোকসভায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির বাজেট বক্তৃতা বয়কট করবে তাঁর দল।
এ দিন তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে তৃণমূল সংসদীয় দলের বৈঠক ডেকেছিলেন মমতা। সেখানেই তিনি বলেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নরেন্দ্র মোদীর সরকার সংসদে বিষয়টি জানায়নি। নোট সমস্যার এখনও সমাধান করতে পারেনি কেন্দ্র। সেই কারণেই বাজেট অধিবেশনের প্রথম দু’দিন বয়কট করবে তৃণমূল।
তৃণমূল নেত্রীর এই সিদ্ধান্তের সহজ অর্থ করলে দাঁড়ায় যে, কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতের অবস্থানেই অনড় রয়েছে তৃণমূল। কিন্তু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আর কবে সরল রেখায় বিশ্লেষণ করা হয়েছে! বরং বিরোধীরা অভিযোগ করছেন, বিজেপি-র সঙ্গে ফের তলে তলে বোঝাপড়া শুরু হয়েছে তৃণমূলের। জেটলির বাজেট বক্তৃতা যাতে মসৃণ হয়, সে জন্যই বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। কেননা, কেন্দ্রের সঙ্গে মতান্তর থাকলেও বাজেট বক্তৃতার সময় সাধারণ ভাবে বিঘ্ন ঘটানোর পক্ষপাতী নয় কংগ্রেস। কিন্তু অতীত দৃষ্টান্ত বলছে তৃণমূলের তেমন বাছবিচার নেই। সংসদের গত অধিবেশনে নোট বাতিলের প্রতিবাদে দুই সভায় ধুন্ধুমার করেছিলেন তৃণমূল সাংসদরা। তার ওপর গত অধিবেশন শেষ হতেই সিবিআইয়ের হাতে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও তাঁর দফতরের সামনে তুমুল বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদরা। ফলে অনেকেরই আশঙ্কা ছিল, তৃণমূলের স্লোগান-বিক্ষোভে এ বার হয়তো সুষ্ঠু ভাবে বাজেট বক্তৃতাই করতে পারবেন না কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, তৃণমূল সাংসদরা যদি সংসদে হাজির থেকেও গোলমাল না করতেন, তা হলে বিজেপি-র সঙ্গে তাঁদের বোঝাপড়াটা স্পষ্ট হয়ে যেত। সেই কারণেই অধিবেশন বয়কট করে গা বাঁচানোর এই কৌশল।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিন বলেন, ‘‘ওঁর (মমতার) ভাবগতিক দেখে আমরা আগেই আশঙ্কা করেছিলাম। আজ প্রমাণ হয়ে গেল আমাদের সন্দেহই ঠিক।’’ তাঁর কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তো বুঝতে পারছেন, সিবিআই তদন্তের ধাক্কায় ওঁর দলের অস্তিত্বই সঙ্কটে পড়বে। তাই আত্মসমর্পণ করেছেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীকে যদি ম্যানেজই করার ছিল, তা হলে আগে বাহাদুরি দেখালেন কেন? আগে ম্যানেজ করলে সুদীপদাকে জেলে যেতে হতো না!’’ সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমও বলেন, ‘‘সরস্বতী পুজোর নাম করে ওয়াকওভার দেওয়া শুরু হল। চিট ফান্ড কাণ্ডে তদন্ত ফের বন্ধ না হয়ে যায়!’’ বস্তুত ভাঙড়ের ঘটনার পর বিজেপি-কে যে সেখানে দেখা যাচ্ছে না, সেই বিষয়টিও মোদী-মমতা গড়াপেটার তত্ত্বের সঙ্গেই জুড়ছেন বাংলায় বাকি বিরোধীরা।
ঘটনাচক্রে এ দিনই সিবিআইয়ের পূর্বাঞ্চলের জয়েন্ট ডিরেক্টর নবীন সিংহকে বদলি করা হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বেই রোজভ্যালি-সহ ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির অনিয়ম নিয়ে সম্প্রতি সিবিআই তদন্তে গতি এসেছিল। তাঁর পরিবর্তে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার কর্তা কে পি সিংহ-কে। সিবিআই সূত্রের অবশ্য দাবি, ওই পদে থাকার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়াতেই ঝাড়খণ্ড ক্যাডারে ফেরত পাঠানো হয়েছে নবীন সিংহকে।
শুধু বয়কটের সিদ্ধান্ত নয়, এ দিন সংসদীয় দলের বৈঠকে মমতার একটি নির্দেশকে কেন্দ্র করেও জল্পনায় ঘি পড়েছে। দলের সাংসদদের তৃণমূল নেত্রী পরামর্শ দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর নাম ধরে আর সমালোচনা করা চলবে না। ‘মোদীবাবু’ ইত্যাদি বলাও যাবে না। এমনকী সোশ্যাল মিডিয়াতেও যেন এমন কিছু লেখা না হয়। প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের রাজনৈতিক সমালোচনা করতে হবে। অথচ সাম্প্রতিক অতীতে মমতা নিজেই প্রধানমন্ত্রীর নাম করে বার বার মন্তব্য করেছেন। কখনও বলেছেন, উনি টাইগার নাকি? কখনও আবার মোদীকে রাবণের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তা ছাড়া, গত দু’-এক মাসে প্রায় প্রতিটি সভাতেই প্রধানমন্ত্রীকে ‘মোদীবাবু’ বলে কটাক্ষ করেছেন।
ফলে মমতার এই পরামর্শ নিয়ে অনেকেই ভ্রূকুটি করছেন! তবে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তৃণমূল সাংসদদের বক্তব্য, আদতে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখার পরামর্শই দিয়েছেন নেত্রী। পরে দলের এক শীর্ষ সারির নেতা অবশ্য বলেন, আসলে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করার কারণে বিজেপি প্রতিহিংসার রাজনীতি বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অনেকের মত। বাম আমলের উদাহরণ টেনে তিনি জানান, তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করায় জেরে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে বাংলাকে ওভারড্রাফট দেওয়া বন্ধ দিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। পরে জ্যোতি বসু কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সামাল দেন। তা ছাড়া, কল্যাণবাবু জানান, ২ ফেব্রুয়ারি থেকে সংসদের ভিতরে ও বাইরে কেন্দ্র-বিরোধী বিক্ষোভ দেখাবে তৃণমূল। বাজেট বিতর্কেও অংশ নেবে তৃণমূল।
বাজেট অধিবেশনের প্রথম দু’দিন বয়কটের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে বিজেপি-ও। সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অনন্তকুমার বলেন, ‘‘শাসক ও বিরোধী শিবিরের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। তা বলে সংসদ বয়কট করা ঠিক নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy