অফিস-টাইম। ট্রেনে পা রাখার জায়গা নেই। আগাম বুকিং নিয়ে হাহাকার ছুটির মরসুমেও। তবু বছর-বছর রেলের যাত্রী সংখ্যা আর আয় কমছে! তা হলে কি পশ্চিমবঙ্গের ভোটের মতো রেলেও ভূতের নেত্য চলছে? নাকি, সবটাই টিকিট বিক্রিতে কারচুপি! রহস্যের সমাধানে ওঝা ডাকছে রেল মন্ত্রক। ঠিক হয়েছে, রেলের টিকিট বিক্রির হিসেব মেলাতে এ বার অডিট হবে। তিন দশকে এই প্রথম।
দেশ জুড়ে রেলের টিকিট বিক্রির জন্য কম্পিউটার নেটওয়ার্ক চালু হয়েছে প্রায় তিরিশ বছর আগে। অভিযোগ, সেই ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়েই চলছে কারচুপি। রেলের অফিসারদের অনেকের ধারণা, এর পিছনে রেল কর্মীদের একাংশ জড়িত থাকতে পারেন। অনেকে আবার কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন হ্যাকিংকে। তবে টিকিট বিক্রিতে কারচুপি যে হচ্ছে, রেল কর্তারা তা মানছেন। আর এর বেশির ভাগটাই হচ্ছে ‘অসংরক্ষিত’ টিকিটে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে
উঠে আসা এই অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই সাইবার-অডিটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রক।
কী ভাবে কারচুপি হচ্ছে?
রেল কর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা, টিকিট বিক্রি হচ্ছে নিয়ম মেনেই। কিন্তু দিনের শেষে হিসাবের খাতায় টিকিট বিক্রির সংখ্যা এবং তার থেকে হওয়া আয়ের পুরোটা দেখানো হচ্ছে না। উদাহরণ দিয়ে এক কর্তা জানান, ধরা যাক, কোনও ট্রেনের অসংরক্ষিত আসনের জন্য সারা দিনে ১০০টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। নিয়ম মেনে কম্পিউটারেও তা তোলা হচ্ছে। কিন্তু রেলের হিসাবের খাতায় টিকিট বিক্রি ও আয় কম করে দেখানো হচ্ছে। এক রেলকর্তা জানান, টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে যে সফ্টওয়্যার ব্যবহার করা হয়, তার নজরদারি হয় না। হিসাবের খাতাকেই (রেলের পরিভাষায়, সামারি) চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়া হয়। অভিযোগ, এখানেই যাত্রী সংখ্যা ও আয়— দু’টোই কম দেখানো হচ্ছে। এই কাজে রেলের লোক যুক্ত, না কি সফ্টওয়্যার হ্যাক করে এমনটা করা হচ্ছে, তা খুঁজে বার করতেই এ বার ব্যবস্থা হচ্ছে অডিটের।
রেলের প্রাথমিক হিসাব বলছে— ২০১২-১৩ সালে যাত্রী সংখ্যা ছিল প্রায় ৮৫০ কোটি। ২০১৩-১৪ সালে তা কমে হয় ৮৪২ কোটি। ২০১৪-১৫ সালে যাত্রী সংখ্যা আরও এক ধাপ নেমে দাঁড়ায় ৮২৩ কোটিতে। আর বিগত অর্থবর্ষে রেলে যাত্রীর সংখ্যা ৮১৫ কোটিতে এসে ঠেকেছে। কর্তাদের দাবি, এরই মধ্যে থেকে সরানো হচ্ছে কয়েক কোটি টিকিটের মূল্য। এতে খাতায়-কলমে যাত্রীর সংখ্যা তো কমছেই, গত কয়েক বছরে রেলের ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা করে আয় কমেছে বলেও জানাচ্ছেন তাঁরা। আর বিনা টিকিটের যাত্রী? রেলকর্তারা আপাতত টিকিট বিক্রির কারচুপি নিয়েই বেশি মাথা ঘামাচ্ছেন।
গত শুক্রবার এ নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক এবং ইন্ডিয়ান কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমের কর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। তার পরেই রেলের ১৬টি জোনের ‘অন লাইন নেটওয়ার্ক’ অডিট করার কথা ঘোষণা করেন তিনি। অডিটের কাজে কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)-এর সদস্যরাও থাকবেন।
কিন্তু বছর-বছর যাত্রীর সংখ্যা কমলেও এত দিন কেন টনক নড়েনি কর্তাদের? রেলের একাংশের বক্তব্য, ট্রেনের বদলে যাত্রীরা বিমান বা সড়ক পথে যাতায়াত করছেন বলে এত দিন দাবি করে আসছিলেন কর্তারা। পরে তাঁদের মনে হয়েছে, ভূত রয়েছে অন্দরমহলেই। আর তা খুঁজে বের করতে হলে অডিটের ঝাড়ফুঁক প্রয়োজন।
যদি কম্পিউটার ব্যবস্থায় কোনও ত্রুটি থাকে, আইটি বিশেষজ্ঞরা তা খতিয়ে দেখবেন। কর্মীদের গাফিলতির বিষয়টিও দেখা হবে অডিটে। পাশাপাশি, রেলের তথ্য ও নিরাপত্তা, ইন্টারনেট পরিষেবার হাল-সহ আরও কয়েকটি বিষয়ও খতিয়ে দেখবেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy