নতুন-মুখ: শনিবার বিজেপির পরিষদীয় দলের বৈঠকে যোগ দিতে লখনউ পৌঁছলেন যোগী আদিত্যনাথ। ছবি: পিটিআই।
চোদ্দো বছর বনবাসের পর উদ্ধার হয়েছে ‘রাম-রাজ্য’ উত্তরপ্রদেশ। বাবরি-ধ্বংসের ২৫ বছরে রাম-রাজ্যের সিংহাসনে এক যোগীকে বসানোর সিদ্ধান্ত নিলেন নরেন্দ্র মোদী।
ভোটের ফল প্রকাশের পরের এক সপ্তাহের ধোঁয়াশা কাটিয়ে শনিবারই উত্তরপ্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা হয়েছে। আগামী কাল শপথ নেবেন নতুন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। সঙ্গে দুই উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য এবং দীনেশ শর্মা। উত্তরপ্রদেশে গোটা ভোট জুড়ে মোদী মুখে উন্নয়নের কথা বললেও কৌশলে তুলেছেন সূক্ষ্ম মেরুকরণের হাওয়া। আর ভোটে বিপুল জয়ের পরেই তাঁর আস্তিন থেকে বেরিয়ে এল হিন্দুত্বের আসল তাস। গেরুয়া বসনধারী যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হওয়ার পরে মুখে যতই উন্নয়নের কথা বলুন না কেন, তাঁকে বাছাইয়ের পিছনে যে হিন্দুত্বের অঙ্কই কাজ করছে— সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মোদী-অমিতরা।
বিজেপি সূত্রের মতে, এ বার উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, মেরুকরণের তাস খেলেই জাত-পাতের অঙ্ককে অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়া গিয়েছে। হিন্দু ভোটব্যাঙ্ককে একজোট করা গিয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে সেটিকেই আরও কাজে লাগাতে চাইছে দল। যদিও বিজেপিরই অনেকে মনে করছেন, যোগীকে মুখ্যমন্ত্রী করায় সংখ্যালঘুরা একজোট হলে বিরোধী দলগুলির মধ্যে ভোট ভাগাভাগি না-ও হতে পারে। যেটি এ বারে হয়েছে সপা ও বসপার মধ্যে। তখন এককাট্টা সংখ্যালঘু ভোট ‘যোগ্য’ মোদী-বিরোধীর বাক্সে পড়তে পারে।
বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ ভেবেচিন্তেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যোগীর হিন্দু মুখকে সামনে রেখেই উন্নয়ন হবে গরিবের। অতীতে যেমন ‘অগ্নিকন্যা’ উমা ভারতীকে দিয়ে করানো হয়েছিল।’’ এই কৌশলের অঙ্গ হিসেবেই আজ দলের ৩১২ জন বিধায়ক থাকলেও যোগীর মতো একজন সাংসদকে বেছেছেন মোদী।
আরও পড়ুন: দেখে নিন যোগী আদিত্যনাথের কয়েকটি বিতর্কিত মন্তব্য
আগাগোড়া ‘হট-ফেভারিট’ না হয়েও শেষ বেলায় যোগীর বাছাইয়ে বিজেপির অনেকেই বিস্মিত। তাঁদের প্রশ্ন, এর পিছনে কি শুধুই হিন্দুত্ব? নাকি সঙ্ঘের চাপে মাথা নুইয়েছেন মোদী? গেরুয়া-শিবিরের অনেকের বক্তব্য, আদিত্যনাথ আদৌ আরএসএসের পছন্দ নন। আবার আদিত্যনাথ মোদী-ঘনিষ্ঠও নন। তা হলে? বিজেপির একটি অংশের বক্তব্য, উঁচু ও নিচু জাতের দ্বন্দ্ব ধামাচাপা দিতেই আপাত ভাবে এক জন যোগীকে বাছাই করা হল।
সূত্রের খবর, এ দিন বৈঠকে যাঁর নামই উঠেছে, তাঁকে নিয়েই আপত্তি তুলেছেন কোনও না কোনও পক্ষ! কিন্তু যোগীর নাম নিয়েও আপত্তি করেননি কেউই। বিধায়কদের মধ্যে এতটাই জনপ্রিয় তিনি! সেটাকেই কাজে লাগাতে চেয়েছেন মোদীরা। একটি অংশের মতে, অমিত শাহের কৌশল মেনে বিজেপিতে অন্য চেহারার ‘বাজপেয়ী-আডবাণী’ জমানা শুরু করতে চান মোদী। যেখানে তিনি হবেন উন্নয়নমুখী বাজপেয়ী, আর যোগী হবেন হিন্দুত্বের প্রাণপুরুষ আডবাণী!
যোগীর নাম উঠতেই লখনউ জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি। উগ্র হিন্দুত্বের হাওয়া তুলতে এই যোগীই নানা সময়ে নানা ভাবে মাঠে নেমেছেন এবং বেশ কয়েক বার গ্রেফতারও হয়েছেন যোগী। তাঁর প্রভাবেই এ বারে বিজেপির ইস্তাহারে কসাইখানা বন্ধের মতো বহু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এ বারে সে সব রূপায়ণ করবেন যোগী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy