Advertisement
E-Paper

রংপোর টানে সটান সিকিম

সাত-সতেরো নিয়মে বাঁধা জীবন থেকে ভিতরের মানুষটা মাঝে মধ্যেই জানান দেয়—‘চল, পালাই’। ব্যস্ত দিনের লোকাল বাসের জানলার বাইরে দূরের আকাশও ফিসফিস করে—‘কী রে, যাবি না কোথাও?’

সুমন সাহা

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৭ ০১:৪৮

সাত-সতেরো নিয়মে বাঁধা জীবন থেকে ভিতরের মানুষটা মাঝে মধ্যেই জানান দেয়—‘চল, পালাই’। ব্যস্ত দিনের লোকাল বাসের জানলার বাইরে দূরের আকাশও ফিসফিস করে—‘কী রে, যাবি না কোথাও?’

এর মধ্যেই দুম করে সীমান্ত সাহার ফোন—‘চলো বন্ধু বেরিয়ে পড়ি। দু’দিনের জন্য প্রাণভরে বেঁচে আসি।’’

সে ইচ্ছে তো আমারও করে। কিন্তু যাব কোথায়? মনের কোণে অনেকদিনের একটা ঠিকানা মজুত করা ছিল। সিকিমের রংপো। পাইনের সারি, অর্কিড আর ভালবাসার নদী, রঙ্গোলির কথা শুনে রাজি হয়ে গেল আর এক বন্ধু সুভাষ ঘোষ।

দশমীতে ঠাকুর বিসর্জন, হইহইয়ে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু মন ছিল চনমনে। কারণ, পরের দিনই তো যাত্রা শুরু। একাদশীর সন্ধ্যায় বেরিয়ে পড়লাম পড়লাম আমি, সুভাষ আর সীমান্ত। চাঁদের আলো আর আশ্বিনের হাওয়ায় গল্পে, গানে-আড্ডায় বুঝতেই পারিনি রাতভর বাসের ধকল।

সকালে পৌঁছে গেলাম শিলিগুড়ি। সেখান থেকে জিপে করে রংপোর রাস্তা ধরলাম। এঁকেবেঁকে যাওয়া রাস্তার পাশেই গোকুই, লালি, সাউর, মাওয়া আর পাইন গাছের বন-জঙ্গলের সঙ্গে নাম না জানা ছোট ছোট সব নদী। মুখভার করা কালো মেঘ আর শীতশীত করা ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে আশি কিলোমিটার রাস্তার প্রতিটা মুহূর্ত যেন শিল্পীর হাতে আঁকা ছবি।

আরও পড়ুন

দীর্ঘ রেলযাত্রায় শৌচাগার নেই

সকাল সাড়ে-দশটা নাগাদ রংপো বাসস্ট্যান্ডে নামলাম। সেখানে অপেক্ষায় ছিল আমাদের আর এক বন্ধু অমিত মণ্ডল। কর্মসূত্রে সে প্রায় দশ বছর ওখানেই আছে। উঠেছিলাম ওরই বাংলোয়। বাসস্ট্যান্ড থেকে বাংলো সামান্যই পথ। কিন্তু একেবারে খাড়াই ওইটুকু রাস্তা পেরোতে গিয়ে দম আটকে যাবার জোগাড়। পাহাড়ের গায়ে দোতলা কাঠের বাংলো। বারান্দাখানা অন্যপ্রান্তের পাহাড়ি ঝর্ণার দিকে মুখ করে ঝুলছে। গেটেই লেপচা দারোয়ানের আন্তরিক অভ্যর্থনা, ‘নমস্তে সাহাব, আইয়ে...।’

আগে থেকেই ঠিক ছিল, খাওয়াদাওয়া হবে রংপোর রুচিতে। সেই মতো দুপুরে চিকেন থুকপা আর গুনড্রুক খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ছোট গ্রাম। লেপচা, ভুটিয়া আর নেপালিদের বসবাস। কাঠের ঘরবাড়ি। আর প্রতিটি বাড়ির সামনে চোখজোড়ানো অর্কিড ফুল আর নাম না জানা কতশত গাছগাছালি। গ্রামের লোকজনের সঙ্গে দেখা হলেই কথা বলছেন। মুখে হাসি লেগেই আছে। যেন কত দিনের আলাপ।

রংপো গ্রামটা একেবারে পাহাড়ে ঘেরা। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে এসেছে একাধিক ঝরনা। মাথায় মেঘেদের সংসার। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে রঙ্গোলি। স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন, খরস্রোতা রঙ্গোলি ভালবাসার নদী। তিস্তা থেকে জন্মে বুকে নুড়ি পাথর নিয়ে বয়ে চলেছে অবিরাম।

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত ৮টা। মাথার উপরে চাঁদ। আমরা চার জন বসে আছি রঙ্গোলির পাশে। চার দিকের পাহাড়ি ঝর্ণার শব্দ, হিমালয় থেকে আসা ঠাণ্ডা হাওয়া মিলেমিশে সে এক স্বর্গীয় মুহূর্ত। যে মুহূর্তে দিব্যি ভুলে যাওয়া যায় আটপৌরে জীবনের আপসের দিবারাত্রি।

পরের দিন রংপো পাহাড়ের পাইনের বনে সারাদিন ঘুরে ঘুরে দেখেছিলাম চেনা অচেনা কত অর্কিড। ঈশ্বর যেন নিজেই রংতুলি নিয়ে নিজের মনে এঁকেছেন সে সব। দুপুরে লেপচাদের বাড়ি থেকে অমিত নিয়ে এসেছিলো ‘খরি’ (এক ধরনের রুটি, ভিতরে শাক-সব্জি) আর ‘নিগুরু’ (ফার্ন গাছের লতাপাতার তরকারি)। তেষ্টা মেটাতে ঝর্ণার জল। উফ্, এমন শান্তির খাবার কোনও রেস্তোরাঁতে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ আছে।

পাহাড়ের আরও অনেকটা উপরে উঠে দেখেছিলাম অদ্ভুত দৃশ্য। চারপাশে সবুজ আর সবুজ। প্রতিটা পাহাড়ের নিজস্ব রঙের সঙ্গে মেঘ জমে আছে। শেষ বিকেলে সূর্যের লাল আভা ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের চোখেমুখে। স্তব্ধতাও যে কত সুন্দর হতে পারে তা এখানে না এলে বুঝতে পারতাম না। ফিরে এলাম অন্ধকার ঘন হওয়ার আগেই। রাতের মেনুতে ছিল ভেজ ক্লিয়ার স্যুপ আর চিকেন মোমো। প্রায় শেষ রাত পর্যন্ত ঝোলা বারান্দায় আমরা চুপচাপ বসেছিলাম। নীচে রঙ্গোলির উপরে কাঁপতে থাকা চাঁদ। পরের দিন সকালে ফিরে আসা। দু’টো দিন কী ভাবে যে কেটে গেল বুঝতেই পারিনি। দুপুরে যখন রওনা দিচ্ছি বাড়ির পথে, গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলেন সেই লেপচা দারোয়ান। হাসি মুখে বললেন, ‘ফিরসে আনা সাহাবজি।
রংপো আপ লোগোকে লিয়ে ইন্তেজার করেগা।’

কী ভাবে যাবেন—

কলকাতা থেকে বাসে অথবা ট্রেনে শিলিগুড়ি। সেখান থেকে ছোট গাড়ি অথবা বাসে রংপো।

কখন যাবেন—

বর্ষাতে একদম না। রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি ভাল থাকে না। শীতের শুরুতে যাওয়া সব থেকে ভাল। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর ওখানকার আবহাওয়া খুব সুন্দর।

কোথায় থাকবেন—

হোম স্টে অথবা সরকারি অথিতিশালায় ।

ছুটি এক্সপ্রেস

নিজের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর-সহ লেখা পাঠান এই ঠিকানায়:

ই-মেল: abpnm15@gmail.com

(* সম্পাদকের নির্বাচনই চূড়ান্ত)

ছবি: লেখক।

Sikkim Scenic Beauty Tourist Spot
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy