Advertisement
E-Paper

মঙ্গলের মতো করে ৮ মাস আগ্নেয় দ্বীপে

পরিবার থেকে বহু দূরে জনমানবহীন পরিবেশে কেমন ভাবে যুঝতে পারে মানুষ, তা দেখতে গত জানুয়ারিতে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মৌনা লোয়া নামে এক জনশূন্য দ্বীপে ডেরা বেঁধেছিলেন নাসার ছ’জনের একটি দল। দ্বীপটি আসলে পৃথিবীর সব চেয়ে বড় সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, যদিও আপাতত ঘুমিয়ে রয়েছে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:৩৭
ড্রোনের চোখে তাঁদের ডেরা। সম্প্রতি ছবিগুলি প্রকাশ করেছে নাসা।

ড্রোনের চোখে তাঁদের ডেরা। সম্প্রতি ছবিগুলি প্রকাশ করেছে নাসা।

লক্ষ্য ২০৩০ সাল।

মঙ্গল অভিযানের বছরটা আগেই ঘোষণা করে রেখেছে নাসা। কিন্তু মঙ্গলে পাড়ি দিয়ে অভিযাত্রীরা যেন কোনও অমঙ্গলের মুখে না পড়েন, তার জন্য সব রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে নিশ্চিত হতে চাইছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রটি। মূত্রের অণুগুলি ভেঙে তা থেকে খাবার তৈরি করা, টানা অনেক দিন ভারশূন্য থাকার পরীক্ষার পাশাপাশি গত ৮ মাস ধরে চলছিল ধৈর্যের এক দীর্ঘ পরীক্ষা। গত কাল শেষ হয়েছে তা।

পরিবার থেকে বহু দূরে জনমানবহীন পরিবেশে কেমন ভাবে যুঝতে পারে মানুষ, তা দেখতে গত জানুয়ারিতে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মৌনা লোয়া নামে এক জনশূন্য দ্বীপে ডেরা বেঁধেছিলেন নাসার ছ’জনের একটি দল। দ্বীপটি আসলে পৃথিবীর সব চেয়ে বড় সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, যদিও আপাতত ঘুমিয়ে রয়েছে। টানা আট মাস সেখানে কাটিয়ে রবিবার লোকসমাজে, চেনা পরিবেশে ফিরে এসেছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: ইরমার জন্য পিছতে পারে বাংলাদেশের প্রথম উপগ্রহের উৎক্ষেপণ

কেন এই পরীক্ষা?

নাসা জানাচ্ছে, দীর্ঘদিন একা থাকতে থাকতে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারেন অভিযাত্রীরা। খাদ্যাভাবে পড়তে পারেন। সমস্ত বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে ভিন্‌ গ্রহে নামতে গিয়ে মহাকাশযানের কোনও ক্ষতি হলে, মেরামতির কাজটিও সারতে হবে নভশ্চরদের। তাই ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে লাল মাটিতে চাষবাস, বেঁচে থাকার খুঁটিনাটি— জানতে হবে সবই। আর তার জন্য শক্ত ও সুস্থ রাখতে হবে মন। সে কারণেই মনোসমীক্ষার এই দীর্ঘ পরীক্ষাটি যৌথ ভাবে চালিয়েছে নাসা ও হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়।

জনহীন দ্বীপে ১২০০ বর্গফুটের উল্টোনো বাটির মতো দেখতে একটি বাড়ি। গত ক’মাস সেখানেই কাটিয়েছেন চার জন পুরুষ ও দুই মহিলা গবেষক। বাড়িটিতে ছোট দু’টি ঘর, ছ’জনের ছোট-ছোট ছ’খানা ঘুমোনোর জায়গা, একটি রান্নাঘর, গবেষণাগার, স্নানের ঘর ও দু’টি শৌচাগার। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের কথা মাথায় রেখে সকলেই এই আট মাস স্পেসস্যুট পরে কাটিয়েছেন। বাড়ি থেকে বেরোলে, সব সময় বেরিয়েছেন দল বেঁধে। লালগ্রহে বেঁচে থাকার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত অন্নসংস্থান। হাওয়াই-পরী ক্ষায় সে কাজটি করেছেন দলের জীববিজ্ঞানী জোশুয়া এহরিল্চ। ফলিয়েছেন গাজর, গোলমরিচ, বাঁধাকপি, সর্ষে, টোম্যাটো, আলু, পার্সলে। মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে কোনও সিগন্যাল পৌঁছয় ২০ মিনিটে। মৌনা লোয়া দ্বীপেও ছিল সেই ব্যবস্থা।

মঙ্গল-বাস: নিজ গ্রহে পরবাসী ছয় গবেষক । হাওয়াইয়ের মৌনা লোয়া দ্বীপে মঙ্গল গ্রহের মতো এই পরিবেশে আট মাস কাটিয়ে এসেছেন এঁরাই।

পরস্পরের মধ্যে সুসম্পর্ক ও তালমিল রাখাটাও ছিল পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বিশেষ করে দলের সকলেই যখন অল্পবয়সি। হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কিম বিনস্টেড বলেন, ‘‘একটা কথা আমাদের জানাই ছিল, ছ’টা লোক এক সঙ্গে থাকলে ঝামেলা বাঁধবেই। আমাদের সেরা দল পাঠালেও এটা হবেই। তাই মঙ্গলে এমন একটা দল পাঠাতে চাইছি, যারা ঝগড়া করলেও শেষমেশ নিজেদের মধ্যে মিটমাট করে নিতে পারবে। সেই বোঝাপড়াটা যাতে একে অপরের সঙ্গে থাকে।’’

গত আট মাস তারই মহড়া দিয়েছেন জোশুয়া এহরিল্চ, লরা লার্ক, স্যামুয়েল পেলার, ব্রায়ান র‌্যামোস, জেমস বেভিংটন ও অ্যানসলে বার্নার্ড। তাঁদের মেজাজ-মর্জি সামলাতে সাহায্য নেওয়া হয়েছে যন্ত্রের। কথাবার্তা ও উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ সেন্সর। গলার স্বর চড়লেই যন্ত্র সজাগ করে দিয়েছে, ‘শান্ত হও’। এমনকী, কেউ যদি কারও সঙ্গে কথা না বলে কিংবা চুলোচুলি করে, সেটাও ধরা পড়েছে যন্ত্রে। সেই মতো বার্তা দিয়েছে। সম্প্রতি এক ভিডিও মেসেজে লরা বলেছিলেন, ‘‘এই সব সমস্যা তো থাকবেই, কিন্তু একটু চেষ্টা করলেই সব বাধা পেরোনো যাবে। আমরাই সেটা করে দেখাব।’’

কতটা পেরেছেন তাঁরা?

লারারা ফিরে আসার পরে, চলছে তারই বিশ্লেষণ।

Volcano Hawaii Mars Reseachers NASA মঙ্গল মৌনা লোয়া দ্বীপ Mauna Loa
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy