Advertisement
E-Paper

পরীক্ষায় আবার পাশ আইনস্টাইন

ঘটনাটা ১৪০ কোটি বছর আগের। এই পৃথিবী থেকে ১৪০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে দু’টো ব্ল্যাক হোল মজেছিল মরণ আলিঙ্গনে। মহাকর্ষের টানে কাছাকাছি এসে পড়ায় চক্কর দিচ্ছিল একে অন্যের চার পাশে। আসছিল ক্রমশ কাছে, আরও কাছে।

পথিক গুহ

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ০৮:১৯

ঘটনাটা ১৪০ কোটি বছর আগের।

এই পৃথিবী থেকে ১৪০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে দু’টো ব্ল্যাক হোল মজেছিল মরণ আলিঙ্গনে। মহাকর্ষের টানে কাছাকাছি এসে পড়ায় চক্কর দিচ্ছিল একে অন্যের চার পাশে। আসছিল ক্রমশ কাছে, আরও কাছে। তার পর মিশে গিয়ে বনেছিল একটা ব্ল্যাক হোল। মহাশূন্যে ওই প্রলয়ের খবর বিজ্ঞানীরা পান গত বছর ২৬ ডিসেম্বর। আজ সান দিয়েগো-য় ‘আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি’-র সম্মেলনে এ খবর দিলেন তাঁরা।

অর্থাৎ, দ্বিতীয় বার শনাক্ত হয়েছে মহাকর্ষ তরঙ্গ। ঠিক একশো বছর আগে যার অস্তিত্ব আগাম অনুমান করেছিলেন আলবার্ট আইনস্টাইন। সে তরঙ্গ প্রথম শনাক্ত হয়েছিল গত বছর ১৪ সেপ্টেম্বর। পৃথিবী থেকে ১৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে দু’টো ব্ল্যাক হোলের মরণ আলিঙ্গনের সঙ্কেত সে দিন ধরা পড়েছিল আমেরিকায় ‘লেসার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজারভেটরি’ (লাইগো)-র দুই যন্ত্রে। যাদের ঠিকানা লুইজিয়ানা-র লিভিংস্টোন এবং ওয়াশিংটনের হ্যানফোর্ড। সে ‘খবর’ গত ১১ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত হয়েছিল ওয়াশিংটনে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে। সাড়া পড়ে গিয়েছিল বিজ্ঞানের দুনিয়ায়।

পড়বেই। চুলচেরা পরীক্ষায় যে পাশ করছিলেন আইনস্টাইন। আর ফেল প্রতিপন্ন হয়েছিলেন আইজ্যাক নিউটন। মহাশূন্যে ঘটছে কত ধুন্ধুমার ঘটনা। নক্ষত্রের বিস্ফোরণ, দুই ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষ ইত্যাদি। আইনস্টাইন বুঝেছিলেন— এবং নিউটন বোঝেননি— যে সে সব ঘটনার
রেশ মহাশূন্যে ছড়াবে কাঁপন বা তরঙ্গ হিসেবে। যা মহাকর্ষ তরঙ্গ।

১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে আইনস্টাইন ওই তরঙ্গের অস্তিত্ব অনুমান করলেও, গত একশো বছরে তা শনাক্ত হয়নি। কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে ঘটুক যত ধুন্ধুমার ঘটনা, তার রেশ তরঙ্গাকারে যখন পৃথিবীতে এসে পৌঁছয়, তখন তা এতই ক্ষীণ, যে তাকে শনাক্ত করতে প্রয়োজন অতি-সংবেদনশীল যন্ত্র। লাইগো-র তেমন যন্ত্রেই গত বছর প্রথম শনাক্ত হয় মহাকর্ষ তরঙ্গ। তাতে শুধু যে আইনস্টাইন নির্ভুল প্রতিপন্ন হন, তা-ই নয়। যে সব ধুন্ধুমার ঘটনার কথা বলা হয়েছে, সে সব থেকে আলো তো কোন ছাড়, কোনও রকম সঙ্কেতই ছড়ায় না। ও-সব ঘটনার খবর পেতে মহাকর্ষ তরঙ্গ একমাত্র ভরসা। সে তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞানের জগতে আনন্দের ঢল নেমেছিল এই কারণে যে, ব্রহ্মাণ্ডকে দেখার এক নতুন জানালা এর
পর খুলবে।

বিজ্ঞানীদের স্বপ্ন সার্থক। গত ২৬ ডিসেম্বর তাঁরা পেয়েছেন, বড়দিনের উপহার। দ্বিতীয় বার শনাক্ত করেছেন মহাকর্ষ তরঙ্গ। গত বছর ১৪ সেপ্টেম্বর লাইগো-র যন্ত্রে ধরা পড়েছিল যে সঙ্কেত, তার উৎস সূর্যের ছত্রিশ এবং উনত্রিশ গুণ ভারী দুই ব্ল্যাক হোলের মরণ আলিঙ্গন। আর দ্বিতীয় বার শনাক্ত হয়েছে যে তরঙ্গ, তার মূলে দুই ব্ল্যাক হোল ছিল সূর্যের চোদ্দো এবং আট গুণ ভারী।

দ্বিতীয় বার মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্ত হওয়ায় দারুণ খুশি ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। পুণে শহরে ‘ইন্টার ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’-এর ডিরেক্টর সোমক রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘লাইগো প্রকল্পে বহু কাল যুক্ত ভারতীয় গবেষকেরা। এ বার দ্বিতীয় পর্যায়ে আমরা যোগ দিচ্ছি সরাসরি অংশীদার হিসেবে। ভারতে বসতে চলেছে লাইগো-র ডিটেক্টর। এমন পরিস্থিতিতে মহাকর্ষ তরঙ্গ দ্বিতীয় বার শনাক্ত হওয়ার খবরে আমরা রীতিমতো আনন্দিত।’’

albert einstein Black hole
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy