Advertisement
E-Paper

মগজটাকে আরও ঘেঁটে দেখা দরকার

কুড়ি বছর আগে ‘ডিপ ব্লু’ নামে এক কম্পিউটার প্রোগ্রাম হারিয়ে দিয়েছিল বিশ্বজয়ী দাবাড়ু গ্যারি কাসপারভকে। গত বছরের গোড়ায় বোর্ড গেম ‘গো’-র লড়াইয়ে কম্পিউটার প্রোগ্রাম ‘আলফা-গো’-র কাছে হেরেছেন বিশ্বজয়ী লি সেডল।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২২
প্রেসিডেন্সির দু’শো বছর পূর্তি উপলক্ষে বক্তৃতা মৃগাঙ্ক শূরের। ছবি: রণজিৎ নন্দী

প্রেসিডেন্সির দু’শো বছর পূর্তি উপলক্ষে বক্তৃতা মৃগাঙ্ক শূরের। ছবি: রণজিৎ নন্দী

কুড়ি বছর আগে ‘ডিপ ব্লু’ নামে এক কম্পিউটার প্রোগ্রাম হারিয়ে দিয়েছিল বিশ্বজয়ী দাবাড়ু গ্যারি কাসপারভকে। গত বছরের গোড়ায় বোর্ড গেম ‘গো’-র লড়াইয়ে কম্পিউটার প্রোগ্রাম ‘আলফা-গো’-র কাছে হেরেছেন বিশ্বজয়ী লি সেডল।

মগজাস্ত্র কি তবে পিছিয়ে পড়ছে যন্ত্রের কৃত্রিম বুদ্ধির কাছে!

বিষয়টিকে মোটেই এ ভাবে দেখছেন না ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) নিউটন অধ্যাপক মৃগাঙ্ক শূর। তিনি বরং বলছেন উল্টো কথা। তাঁর মতে, কোনও খেলায় যন্ত্রের কাছে মগজের হার হতে পারে। কিন্তু বুদ্ধির দৌড়ে কম্পিউটার কখনওই টেক্কা দিতে পারবে না মগজাস্ত্রকে। তবে কম্পিউটারের বুদ্ধিতে শান দিতে হলে নিজের মগজটাকেই আরও ভাল করে ঘেঁটে দেখতে হবে মানুষকে।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’শো বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার এক বক্তৃতায় মৃগাঙ্কবাবু মনে করিয়ে দিলেন, মস্তিষ্ক যে ভাবে কাজ করে সেই যুক্তিকে কাজে লাগিয়েই কম্পিউটারের প্রোগ্রামকে আরও উন্নত করে তোলা সম্ভব। কিন্তু মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা যত এগোবে ততই এটা স্পষ্ট হবে যে, যন্ত্রের বুদ্ধি কোনও ভাবেই ছাপিয়ে যেতে পারবে না মানুষের মগজকে। এই প্রসঙ্গে কম্পিউটার প্রোগ্রাম ও মস্তিষ্কর তুলনা টানলেন মৃগাঙ্কবাবু। তা হল, কাজ করতে ‘আলফা-গো’ প্রোগ্রামের লাগে ৩০ হাজার ওয়াট শক্তি। আর মানুষের মগজের দরকার হয় মাত্র ২০ ওয়াট!

প্রবীণ এই স্নায়ুবিজ্ঞানীর বক্তব্য, মানুষের মগজই সম্ভবত এই ব্রহ্মাণ্ডের সব থেকে জটিল যন্ত্র। কেজি দেড়েক ওজনের ওই অঙ্গে রয়েছে কয়েক হাজার কোটি কোষ। এ-হেন এক যন্ত্রের সব রহস্য ও কারসাজি পুরোপুরি জেনে উঠতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। বলা যায়, সেই কাজ শুরু হয়েছে মাত্র। কানপুর আইআইটির প্রাক্তনী মৃগাঙ্কবাবু সেই কাজেই ডুবে রয়েছেন বহু বছর ধরে। যার কিছু ঝলক উঠে এল তাঁর বক্তৃতাতেও।

প্রবীণ স্নায়ুবিজ্ঞানী দেখালেন, আসলে মানুষ যা দেখে ও শোনে, তার সবটা সে বোঝে না। সেই দৃশ্য বা শব্দ মস্তিষ্কের কোষগুলি যে ভাবে অনুধাবন করে, শুধু সেটাই প্রকাশ পায়। এক জন মানুষ কোনও দৃশ্য কখন দেখছে, কত সময় ধরে দেখছে, কেমন তার মানসিক গড়ন— এ সবের উপরেও নির্ভর করে তার প্রতিক্রিয়া। চারপাশের ঘটনা, দৃশ্য বা শব্দ নিয়ে মগজে একটা ধারণা তৈরি হয়। আসলে কোনও দৃশ্য বা শব্দ নিয়ে মানুষের মস্তিষ্কে তৈরি হয় একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গ। সেই স্নায়ুতরঙ্গ কত দ্রুত একটি নিউরন (স্নায়ুকোষ) থেকে পাশেরটিতে পৌঁছচ্ছে, তার উপরে নির্ভর করে চারপাশের ঘটনা সম্পর্কে কারও ধারণা কত স্পষ্ট হবে। প্রতিটি স্নায়ুতরঙ্গকে দু’টি নিউরনের মাঝের শূন্যস্থান তথা স্নায়ুসন্ধি টপকে যেতে হয়। এই প্রক্রিয়াটি কতটা সুচারু ভাবে হচ্ছে, সেটাই আসল।

এমনটা অনেক সময়েই হয় যে, কেউ কোনও দৃশ্য দেখছে বা কিছু শুনছে, কিন্তু তা বুঝতে পারছে না। আসলে স্নায়ুসন্ধি দিয়ে তরঙ্গ ঠিক ভাবে এক নিউরন থেকে পরেরটায় যেতে পারেনি। এমন কেন হয়, সেটা জানা জরুরি মানুষের চিকিৎসার জন্যেও। কারণ, মস্তিষ্কের অসুখ দিন দিন বাড়ছে। মার্কিন মুলুকে ৫০ শতাংশ প্রবীণ নাগরিক অ্যালঝাইমার্স রোগে ভুগছেন। বাড়ছে স্নায়ু-মনোরোগের সমস্যা। মৃগাঙ্কবাবু তাই বললেন, ‘‘মস্তিষ্ক কী ভাবে কাজ করে, কোন সময় তার কী অবস্থা হয়, তা বুঝতে পারলে এই সব রোগের চিকিৎসাও সহজ হয়ে উঠবে।’’

Artificial Intelligence Brain Power Mriganka Sur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy