Advertisement
E-Paper

তিনটে পৃথিবীর মাপের গ্রহ, পুরোটাই হিরের!

হিরে। শুধুই হিরে। তাল তাল হিরে। যেন হিরের পাহাড়! হিরের সমুদ্র! শুধুই হিরে ভরা আছে তার অন্তরে-অন্দরে। তার ‘সারফেস’ বা পিঠেও মুঠো মুঠো হিরে। এত বড় হিরের খনির হদিশ এর আগে মেলেনি মহাকাশে! আলো ঠিকরে বেরচ্ছে। যেন কয়েক লক্ষ কোটি মেগাওয়াটের আলো! যার জাঁক-জৌলুস ছিঁড়েফুড়ে দিচ্ছে মহাকাশের অতল অন্ধকার!

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৫ ১৭:৩৯

হিরে। শুধুই হিরে। তাল তাল হিরে। যেন হিরের পাহাড়! হিরের সমুদ্র! শুধুই হিরে ভরা আছে তার অন্তরে-অন্দরে। তার ‘সারফেস’ বা পিঠেও মুঠো মুঠো হিরে। এত বড় হিরের খনির হদিশ এর আগে মেলেনি মহাকাশে!

আলো ঠিকরে বেরচ্ছে। যেন কয়েক লক্ষ কোটি মেগাওয়াটের আলো! যার জাঁক-জৌলুস ছিঁড়েফুড়ে দিচ্ছে মহাকাশের অতল অন্ধকার!

হাত বাড়ালেই সেই হিরের খনি। আমাদের থেকে মাত্র ৪০ আলোকবর্ষ (এক সেকেন্ডে এক লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল গতিবেগে আলো এক বছরে যতটা দূরত্ব যায়, ততটা) দূরে। বলা যায়, আমাদের সৌরমণ্ডলের ‘পাশের বাড়ির বন্ধু’!

সেই হিরের খনি কত বড়, জানেন?

চমকে যাবেন না! তিন-তিনটি পৃথিবীকে পাশাপাশি রাখলে, তা যতটা জায়গা জুড়ে থাকে, ততটা জায়গা জুড়ে রয়েছে ওই হিরের খনি। রাতের আকাশে যাকে আমরা ছাদে উঠে খালি চোখেই দেখতে পারি। ‘ক্যান্সার’ নক্ষত্রপুঞ্জে। যে চক্কর মারছে ‘55Cancri’ নামে একটা অসম্ভব রকমের গরম তারা বা নক্ষত্রের চারপাশে। সেটাই তার ‘সূর্য’। সেই ‘সূর্য’কে চক্কর মারছে পাঁচটি গ্রহ। ‘Cancri-a’ থেকে ‘Cancri-e’। আমরা যে হিরের খনির কথা বলছি, সেই ‘Cancri-e’ গ্রহটি ওই ‘সৌরমণ্ডলে’র বাকি চারটি গ্রহের থেকে একেবারেই আলাদা। একেবারে ঝকঝকে হিরেয় মোড়া, প্রায় আদ্যোপান্তই!


হিরের দ্যুতি! মহাকাশের অতল অন্ধকারে। ছবি-নাসা।

২০১১-য় এই ‘হিরের গ্রহ’টি প্রথম যাঁর নজরে পড়েছিল, তিনি এক জন ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিক্কু মধুসূদন। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-পদার্থবিদ কানানি লি’র সঙ্গে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোনমির অধ্যাপক নিক্কু মধুসূদনের সেই যৌথ গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয় ‘অ্যাস্টোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ।

কতটা হিরে রয়েছে আমাদের সবচেয়ে কাছের ওই বৃহত্তম হিরের খনিতে?

জ্যোতির্বিজ্ঞানী মধুসূদন তাঁর ব্লগে জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের সৌরমণ্ডলের বাইরে থাকা ওই ‘সুপার আর্থ’ গ্রহের এক-তৃতীয়াংশই হিরেয় মোড়া। তার পিঠটাও মোড়া রয়েছে হিরে আর গ্রাফাইটে। সেই গ্রাফাইট, যা দিয়ে বানানো হয় পেন্সিলের শিস। তিনটি পৃথিবীর ওজন যোগ করলে যা হয়, ততটাই। মানে, ১৭.৯১৬-এর পর ২৭টা শূ্ন্য বসালে যে সংখ্যাটা দাঁড়ায়, তত কিলোগ্রাম! এখন আমাদের এই গ্রহে এক ক্যারাট বা ০.২ গ্রাম ওজনের হিরের দাম কয়েক হাজার মার্কিন ডলার। তা হলে বুঝুন, আমাদের প্রায় নাগালেই থাকা ওই গ্রহের দাম কত হতে পারে!’’


পৃথিবী (সিলিকেট প্ল্যানেট) ও হিরের গ্রহের (কার্বন প্ল্যানেট) ভেতরের স্তর।- নাসা।

কী ভাবে জন্মাল ওই ‘হিরের গ্রহ’?

বেঙ্গালুরু থেকে টেলিফোনে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর জোতির্বিজ্ঞানী সুজন সেনগুপ্ত জানাচ্ছেন, ‘‘এই সদ্য আবিষ্কৃত ‘Cancri-e’ গ্রহটি একটি পাথুরে গ্রহ। পৃথিবীর মতো পাথুরে গ্রহগুলিতে অক্সিজেন অণুর পরিমাণ কার্বন অণুর দ্বিগুণ। তাই ভূপৃষ্ঠে অক্সিজেনের যৌগ জল, কার্বন ডাই-অক্সাইড আর সিলিকেট অক্সাইড পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে। মঙ্গলও অনেকটা সে রকমই। আসলে আমাদের সৌরমণ্ডলে যে মেঘ থেকে বিভিন্ন গ্রহের জন্ম হয়েছিল, তাতে কার্বনের চেয়ে অক্সিজেন অণুর পরিমাণ ছিল অনেক বেশি। কিন্তু, পরিস্থিতিটা যদি উল্টো হয়, যদি অন্য কোনও ‘সৌরমণ্ডলে’ কার্বনের পরিমাণ বেশি হয়ে যায় অক্সিজেনের চেয়ে কোনও তারা বা তার গ্রহে, তা হলে সেই ‘সূর্য’কে বলা হয় ‘কার্বন স্টার’। আর তার চার পাশে যে ‘গ্রহ’গুলি চক্কর মারে, তাদের বলা হয় ‘কার্বন প্ল্যানেট’। প্রচণ্ড তাপ আর চাপে ওই কার্বন পরমাণুগুলিই হিরের কেলাস তৈরি করে। সেই ভাবেই গড়ে ওঠে ‘হিরের গ্রহ’ বা ‘ডায়মণ্ড প্ল্যানেট’। তাপ ও চাপ অত্যন্ত বেশি বলে আমাদের পৃথিবীরও পিঠের ১৫০/২০০ কিলোমিটার নীচে হিরে জন্মায়। অগ্ন্যুৎপাতে নীচ থেকে সেই হিরে আমাদের ভূপৃষ্ঠের ওপরে উঠে আসে। এটাই আমাদের প্রাকৃতিক হিরে। কিন্তু তাপ ও চাপ দুই-ই পৃথিবীর চেয়ে অনেক বেশি বলে হিরের গ্রহ ‘Cancri-e’তে হিরের উজ্জ্বলতা অনেক বেশি। কাঠিন্যও বেশি। হিরের গ্রহের পিঠের তাপমাত্রা প্রায় ৩৯০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। সে তার ‘সূর্য’ ‘55Cancri’-র রয়েছে খুব কাছেই। মানে, তার গা জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে।’’

আরও পড়ুন

অন্য ছায়াপথ থেকে ঝাঁক ঝাঁক তারা লুঠ করেছিল আমাদের আকাশগঙ্গা!


আইনস্টাইন কি ঠিক? খোঁজ নিতে যাচ্ছে লিসা

পরমাণু দিয়েই হিরোশিমার ‘বদলা’ নিচ্ছে জাপান


বিশ্বের প্রথম দশ ব্যয়বহুল বিজ্ঞান গবেষণা প্রকল্প

আরও কি ‘হিরের গ্রহ’ থাকতে পারে মহাকাশে?

সুজনবাবু জানাচ্ছেন, ‘‘আরও অনেক হিরের গ্রহ রয়েছে। আর তা হয়তো রয়েছে অন্য কোনও সৌরমণ্ডলের ‘হ্যাবিটেব্‌ল জোন’ বা বাসযোগ্য এলাকায়!’’

তা হলে তো এমন সময়ও আসতে পারে, যে দিন অন্য সৌরমণ্ডলে পাওয়া যাবে দুর্মূল্য হিরের খনির মালিক!

যাকে বলে সোনায় সোহাগা! ভিন গ্রহে প্রাণও হল! উপরি পাওনা হল- হিরে!


সেই দুর্মূল্য গ্রহ মহাকাশে। ছবি- নাসা।

diamond planet carbon stars solar MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy