Advertisement
E-Paper

মরা গাঙে বান ডাকালেন ভারতীয় গবেষক, মঙ্গলে নদীর ফসিল

এ বার মরা গাঙে বান ডাকালেন এক ভারতীয়! দেখালেন, মঙ্গলে এক সময় ছিল বড় বড় নদী। কম করে ১৭ হাজার কিনোমিটার দৈর্ঘ্যের। ‘লাল গ্রহে’র উত্তর গোলার্ধে ‘অ্যারাবিয়া টেরা’র সুবিস্তীর্ণ এলাকায় ওই সব বড় বড় নদীর ‘ফসিল’-এর হদিশ মিলল এই প্রথম। ফলে, ‘লাল গ্রহ’ বরাবরই পাথুরে আর বরফে মোড়া ছিল বলে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একাংশের মধ্যে যে ‘বিশ্বাস’ ছিল, তাকে সজোরে নাড়া দিল হালের এই গবেষণা।

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৬ ১৩:০৬
মঙ্গলের সেই এলাকা, যেখানে মিলেছে নদীর ‘ফসিল’।

মঙ্গলের সেই এলাকা, যেখানে মিলেছে নদীর ‘ফসিল’।

এ বার মরা গাঙে বান ডাকালেন এক ভারতীয়!

দেখালেন, মঙ্গলে এক সময় ছিল বড় বড় নদী। কম করে ১৭ হাজার কিনোমিটার দৈর্ঘ্যের।‘লাল গ্রহে’র উত্তর গোলার্ধে ‘অ্যারাবিয়া টেরা’র সুবিস্তীর্ণ এলাকায় ওই সব বড় বড় নদীর ‘ফসিল’-এর হদিশ মিলল এই প্রথম। ফলে, ‘লাল গ্রহ’ বরাবরই পাথুরে আর বরফে মোড়া ছিল বলে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একাংশের মধ্যে যে ‘বিশ্বাস’ ছিল, তাকে সজোরে নাড়া দিল হালের এই গবেষণা।

বিজ্ঞান-জার্নাল ‘জিওলজি’র অগস্ট সংখ্যায় প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্রটির শিরোনাম- ‘এক্সটেনসিভ নোয়াকিয়ান ফ্লুভিয়াল সিস্টেমস ইন অ্যারাবিয়া টেরা: ইমপ্লিকেশনস ফর আর্লি মার্শিয়ান ক্লাইমেট’।

পাঁচ গবেষকের অন্যতম লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের জিওলজি বিভাগের অধ্যাপক সঞ্জীব গুপ্তা বলছেন, ‘‘প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগে মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধে ‘অ্যারাবিয়া টেরা’য় প্রায় ১৭ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা জুড়ে বইত বড় বড় নদী। আয়তনে এই ‘অ্যারাবিয়া টেরা’ একটা সুবিশাল এলাকা মঙ্গলে। প্রায় একটা ব্রাজিলের মতো। ‘লাল গ্রহে’ পাঠানো মহাকাশযান ‘মার্স রিকনাইস্যান্স অরবিটার’ (এমআরও) যে সব ছবি পাঠিয়েছে, তা আগের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি নিখুঁত ভাবে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, এক সময় প্রচুর বৃষ্টি হত ‘অ্যারাবিয়া টেরা’য়। ফলে, মঙ্গল গ্রহ বরাবরই নিষ্প্রাণ পাথুরে বা আপাদমস্তক বরফ বা গ্লেসিয়ারে মোড়া ছিল, আর তা এমনকী, অণুজীবেরও টিঁকে থাকার যোগ্য ছিল না, এমনটা আর ভাবা সম্ভব হচ্ছে না। বরং তার তাপমাত্রা যে অনেক বেশি ‘বাসযোগ্য’ ছিল, সেখানে গরম কাল আসত, বৃষ্টি পড়ত ঝমঝমিয়ে, আমাদের গবেষণার ফলাফল সেই বিশ্বাসটাকেই জোরালো করে তুলছে। আমরা প্রমাণ পেয়েছি, ‘অ্যারাবিয়ান টেরা’র একটা বিস্তীর্ণ অংশে এক সময় বড় বড় নদী বইত। লম্বায় ১৭ হাজার কিলোমিটার নদীও ছিল ওই এলাকায়। এটাই প্রমাণ করে, প্রাণের জন্য রীতিমতো সহায়ক পরিবেশই ছিল আমাদের প্রতিবেশী মঙ্গল গ্রহে।’’


মনে হচ্ছে না, এক সময় নদী বইত মঙ্গলে?


মনে হচ্ছে না, এক সময় নদী বইত মঙ্গলে?

আরেক মূল গবেষক জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোয়েল এম ডেভিস গবেষণাপত্রে লিখেছেন, ‘‘সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকেই মঙ্গলে অনেক সম্ভাব্য উপত্যকা আর নদীখাত চিহ্নিত করার যজ্ঞে মেতেছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সরাসরি এমন প্রমাণ এত দিন পাওয়া যায়নি, যাতে বলা যায় প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগে ‘লাল গ্রহে’ বড় বড় নদী বইত। এমনকী, যে এলাকায় এ বার নদীখাতের ‘ফসিল’ মিলেছে, সেই ‘অ্যারাবিয়ান টেরা’-তেও এর আগে এমন কিছুর হদিশ মেলেনি। এ বার তা সম্ভব হয়েছে ‘এমআরও’ অনেক গুণ নিখুঁত ছবি পাঠানোয়।’’


‘অ্যারাবিয়া টেরা’র যে এলাকায় মিলেছে হারানো নদীর হদিশ (বাঁ দিকে লাল রং)


‘অ্যারাবিয়া টেরা’র যে এলাকায় মিলেছে হারানো নদীর হদিশ (বাঁ দিকে লাল রং)

মহাকাশযানের পাঠানো ছবি বিশ্লেষণ করে কী দেখেছেন গবেষকরা?


লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের ভূতত্ত্ববিদ সঞ্জীব গুপ্তা

অক্সফোর্ডে পড়াশুনো করা সঞ্জীব বলছেন, ‘‘আমরা দেখেছি বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে উল্টোনো নদীখাত (ইনভার্টেড চ্যানেলস)। এই পৃথিবীতে যেমন অনেক হারিয়ে যাওয়া সুপ্রাচীন নদীখাতের হদিশ মিলেছে। যার আশপাশের মাটি ক্ষয়ে বা বসে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া নদীর বয়ে চলার পথটা (নদীখাত) ওপরে উঠে আসার ফলেই তৈরি হয় ‘ইনভার্টেড চ্যানেল’-এর। ওমান, মিশর, উটার মরুভূমি এলাকায় এমন অনেক হারিয়ে যাওয়া নদীর হয়ে চলার পথটা ওপরে উঠে এসে ‘ইনভার্টেড চ্যানেল’-এর জন্ম দিয়েছে। যেহেতু নদীখাতটাই ওপরে উঠে এসে ওই ‘ইনভার্টেড চ্যানেল’-এর জন্ম দেয়, তাই তাতে প্রচুর পরিমাণে বালি থাকে। থাকে নুড়ি, পাথর। পৃথিবীতেও হারিয়ে যাওয়া অনেক বড় বড় নদীর ক্ষেত্রে বালি আর নুড়ি, পাথর পাওয়া গিয়েছে। আমরা মঙ্গলের ‘অ্যারাবিয়া টেরা’য় যে সুবিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বড় বড় নদীর ‘ইনভার্টেড চ্যানেল’-এর হদিশ পেয়েছি, সেখানেও প্রচুর পরিমাণে বালি আর নুড়ি, পাথর (গ্র্যাভেল) জমে থাকার প্রমাণ পেয়েছি। মঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া বড় বড় নদীর সেই সব ‘ইনভার্টেড চ্যানেল’ কম করে ৩০ মিটার উঁচু আর একেকটা চওড়া এক থেকে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত। সেগুলি বিশ্লেষণ করেই আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি, এক সময় বড় বড় নদী বইত মঙ্গলে। ওই ‘অ্যারাবিয়া টেরা’র এক দিকে ‘হাই ল্যান্ড’ বা উজান এলাকা। অন্য দিকে, রয়েছে ‘লো ল্যান্ড’ বা ভাটি এলাকা। আমাদের অনুমান, ওই বড় বড় নদীগুলি মঙ্গলে বইত আজ থেকে ৩৭০ থেকে ৩৯০ কোটি বছর আগে পর্যন্ত। তার পরেই সেগুলি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। তার পর তার আশপাশের মাটি ক্ষয়ে গিয়ে নদীখাতগুলি ওপরে উঠে এসে ওই ‘ইনভার্টেড চ্যানেল’গুলি বানিয়েছে।’’

মঙ্গলে এমনই একটি উল্টোনো নদীখাত (ইনভার্টেড চ্যানেল) অণুজীবের জীবাশ্ম পাওয়ার জন্য একেবারে ‘আদর্শ জায়গা’ হতে পারে বলে মনে করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। একটি নদীখাত ও তার আশপাশের এলাকা বাছাও হয়েছে আগামী দিনে সেখানে মহাকাশযান (ল্যান্ডার বা রোভার) নামানোর জন্য। সেই ‘ইনভার্টেড চ্যানেল’টার নাম- ‘অ্যারাম ডোরসাম’। ২০২০ সালে ওই উল্টোনো নদীখাতেই প্রাণের সন্ধানে নামছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ) ‘এক্সোমার্স রোভার মিশন’।

আরও পড়ুন- ঘরে ঘরে এ বার কম খরচে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবে ব্যাকটেরিয়া!

Mars Fossilzed Rivers on Mars Arabia Terra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy