Advertisement
E-Paper

আরও ব্রহ্মাণ্ড আছে কি? মৃত্যুশয্যার গবেষণাপত্রে প্রশ্ন তুলে গেলেন হকিং

গবেষণা পত্রটি শেষ বারের মতো সংশোধন করেছিলেন আজ থেকে ১৫ দিন আগে। গত ৪ মার্চ, তাঁর মৃত্যুর ঠিক দশ দিন আগে।

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৮ ১২:৫৪
স্টিফেন হকিং। ফাইল চিত্র।

স্টিফেন হকিং। ফাইল চিত্র।

আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ড ধ্বংস হলেও সব কিছু শেষ হয়ে যাবে না। ফুরিয়ে যাবে না। তার পরও অস্তিত্বের সম্ভাবনা আছে। থাকে।

মৃত্যু যখন তাঁর শিয়রে, সেই ফুরিয়ে যাওয়ার সময়েও অঙ্ক কষে তাঁর সেই বিশ্বাসকে কী ভাবে প্রমাণ করা যেতে পারে, তার উপায় বলে গিয়েছেন স্টিফেন হকিং। মৃত্যুশয্যায় লেখা তাঁর শেষ গবেষণাপত্রে।

কিংবদন্তি বিজ্ঞানী হকিংয়ের সেই শেষ গবেষণাপত্রটির শিরোনাম— ‘আ স্মুদ এগজিট ফ্রম ইটার্নাল ইনফ্লেশন?’। বেলজিয়ামে ল্যুভেঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর থিয়োরিটিক্যাল ফিজিক্সের অধ্যাপক টমাস হের্টগকে সঙ্গে নিয়ে লেখা তাঁর এই গবেষণাপত্রটির কাজ হকিং শেষ করেছিলেন গত জুলাইয়ে। কিন্তু, তার পরও সন্তুষ্ট হননি। থেমে থাকেননি। নিজের শেষ গবেষণাপত্রটি নিয়ে কাটাছেঁড়া, সংযোজন, বিয়োজন, সংশোধন, পরিমার্জন করে গিয়েছেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। মৃত্যুশয্যাতেও সৃষ্টি রহস্যের জট খোলায় মগ্ন হকিং এতটাই খুঁতখুঁতে ছিলেন যে, অঙ্ক কষে তাঁর বিশ্বাসের সত্যতা বুঝতে পারার পরও গবেষণা পত্রের শিরোনামে প্রশ্ন চিহ্নও রেখে গিয়েছেন। গবেষণা পত্রটি শেষ বারের মতো সংশোধন করেছিলেন আজ থেকে ১৫ দিন আগে। গত ৪ মার্চ, তাঁর মৃত্যুর ঠিক দশ দিন আগে।

কী বলে গিয়েছেন হকিং তাঁর শেষ গবেষণাপত্রে?

হকিং লিখেছেন, আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ডে যত তারা বা নক্ষত্র রয়েছে, তাদের জ্বালানির সবটুকু শেষ হয়ে গেলে, একদিন এই ব্রহ্মাণ্ড ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু, তার পরও সব শেষ হয়ে যাবে না। কারণ, এই ব্রহ্মাণ্ড শুধুই একটা নয়। এমন ব্রহ্মাণ্ড বা ইউনিভার্স আরও আছে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম মাল্টি-ইউনিভার্স বা ‘মাল্টিভার্স’।

আরও পড়ুন: কৃষ্ণগহ্বরের রহস্যসন্ধানী

হকিং নিজেও তাঁর এই গবেষণাপত্রটিকে বলেছেন ‘কনজেকচার’। যার অর্থ— অনুমান। তাই সম্ভবত তাঁর গবেষণাপত্রের শিরোনামেও একটি ‘?’ চিহ্ন রেখে গিয়েছেন স্টিফেন হকিং।

মৃত্যুশয্যায় হকিংয়ের সেই গবেষণাপত্রটি। সৌজন্যে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কাইভ।

আজ থেকে ৩৫ বছর আগে ১৯৮৩ সালে প্রথম ‘নো বাউন্ডারি’ নামে তত্ত্ব খাঁড়া করেছিলেন হকিং। তাঁর সহযোগি ছিলেন বিজ্ঞানী জেমস হার্টল। সেই গাণিতিক তত্ত্বে বলা হয়েছিল, ১৩শো সত্তর কোটি বছর আগে বিগ ব্যাং বা মহা বিস্ফোরণের পর সব কিছু সুনসান অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। তার পরের তিন লক্ষ সত্তর হাজার বছর ধরে ওই রকম একটা অদ্ভুত অবস্থা ছিল। আলোর কণা ফোটনও সেই সময় বেরিয়ে আসতে পারেনি। ফলে বিগ ব্যাংয়ের পর তিন লক্ষ সত্তর হাজার বছরের মধ্যে কী কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে এখনও কিছুই জানা যায়নি। কিন্তু, তার পরে হঠাৎই একটা বিন্দু থেকে বেলুনের মতো হু হু করে ফুলে ফেঁপে উঠে চার পাশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ড। যা এখনও ফুলে ফেঁপে উঠে চার পাশে প্রসারিত হয়ে চলেছে। আর সেই প্রসারিত হওয়ার গতি আগের চেয়ে অনেকটাই বেশি। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এটাকে বলা হয় ‘ইনফ্লেশন’।

ফুলতে ফুলতে বেলুন যখন এক সময় ফেটে যায়, এই ব্রহ্মাণ্ডেরও দশা এক দিন হবে সে রকমই।

আরও পড়ুন: পৃথিবীর শেষ স্টেশন পেরিয়ে গেলেন হকিং

কিন্তু, সেই তত্ত্ব নিয়ে খুব সমস্যায় প়ড়েছিলেন হকিং। কারণ ওই গাণিতিক তত্ত্ব এ কথাও বলে, বিগ ব্যাং-ও শুধু একটা হয়নি। অনেকগুলো বিগ ব্যাং হয়েছিল। সংখ্যায় যা অসীম। একটা বিগ ব্যাং থেকে যেমন আমাদের একটা ব্রহ্মাণ্ডের জন্ম হয়েছিল, তেমনই সংখ্যায় বিগ ব্যাংও যদিও অসীম হয়ে থাকে, তা হলে আমাদের মতোই অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ডের অস্তিত্বের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

কিন্তু, পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এই গাণিতিক তত্ত্বকে প্রমাণ করে যেতে পারেননি হকিং। বরং তাঁর তত্ত্বের সমালোচকদের বক্তব্য ছিল, অনেক ব্রহ্মাণ্ডের যদি নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ না থাকে, তা হলে আমাদের ব্রহ্মাণ্ডে বসে কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে আরও বহু ব্রহ্মাণ্ডের অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব নয়।

তা যাতে সম্ভব হয় মৃত্যু শয্যায় তার-ই দিশা দেখিয়ে গেলেন হকিং। যেন বলে গেলেন শেষ বলে কিছু হয় না এই অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডে বা ‘ব্রহ্মাণ্ডকুল’-এ।

হকিং কি নিজেই ‘ব্রহ্মাণ্ড’ ছিলেন না?

Stephen Hawking Scientist Passed Away স্টিফেন হকিং
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy