Advertisement
E-Paper

এ বার ‘সূর্যের দেশে’ যাচ্ছে ভারত, সামনে দুই বাঙালি

এ বার ‘সূর্যের দেশে’ যাচ্ছে ভারত! এই প্রথম। আর আমাদের সেই আসন্ন সৌর অভিযানে মূল দু’টি গবেষণার নেতৃত্বে রয়েছেন দুই বাঙালি। এক জন বেঙ্গালুরুর। অন্য জন কলকাতার।

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৬ ১১:৩০
সূর্যের দেশে যাওয়ার উপগ্রহ ‘আদিত্য-এল ওয়ান’। ছবি-ইসরো।

সূর্যের দেশে যাওয়ার উপগ্রহ ‘আদিত্য-এল ওয়ান’। ছবি-ইসরো।

এ বার ‘সূর্যের দেশে’ যাচ্ছে ভারত! এই প্রথম।

আর আমাদের সেই আসন্ন সৌর অভিযানে মূল দু’টি গবেষণার নেতৃত্বে রয়েছেন দুই বাঙালি।

এক জন বেঙ্গালুরুর। অন্য জন কলকাতার।

এক জন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য জন কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের সেন্টার অফ এক্সেলেন্স ইন স্পেস সায়েন্সেস ইন্ডিয়ার (সেসি) প্রধান বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী দিব্যেন্দু নন্দী।

আরও পড়ুন- ব্ল্যাক হোল থেকে ঠিকরে বেরচ্ছে দৃশ্যমান আলো

দেখুন গ্যালারি- ছায়াপথের লীলাখেলা

নাসা আর ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ বা ‘এসা’) পর আমরাই যাচ্ছি সূর্যের অত কাছাকাছি। পৃথিবী আর সূর্যের মধ্যে এক অভিনব কক্ষপথে। যার নাম- ‘ল্যাগরাঞ্জিয়ান পয়েন্ট’। পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে। যেখানে এক বছর ধরে শুধু সামনে থেকেই সূর্যের ওপর লক্ষ্য রেখে যাবে একেবারেই দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ভারতীয় উপগ্রহ ‘আদিত্য-এল ওয়ান’।

সূর্যের ‘করোনা’ আর ‘ক্রোমোস্ফিয়ার’। ছবি-নাসা।

আর তা যেন কোনও উপগ্রহ নয়! সূর্যকে পাক মারবে সে একেবারেই পৃথিবীর ঢঙে। পৃথিবীর নিজস্ব নিয়মে, নির্দিষ্ট অঙ্কে। মানে, সূর্যকে পুরোপুরি একটা পাক মারতে যেমন একটা বছর বা ৩৬৫ দিন লাগে পৃথিবীর, তেমনই এক বছর ধরে সূর্যের পিছন দিকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই ‘আদিত্য-এল ওয়ান’-এরও। ফলে, ‘ল্যাগরাঞ্জিয়ান পয়েন্ট’-এ এক বছর ধরে আমাদের পাঠানো উপগ্রহটি যে শুধুই সামনে থেকে সূর্যের ওপর নজর রাখবে, তা-ই নয়, পৃথিবী থেকে তা আমাদেরও চোখে চোখে থাকবে কম করে ৩৬৫ দিন, সূর্য তাকে আড়াল করে দিতে পারবে না বলে।

সূর্যের দেশে ‘আদিত্য-এল ওয়ান’ উপগ্রহে যাচ্ছে যে সব যন্ত্রপাতি। ছবি-আয়ুকা।

‘মঙ্গলায়ন’ বা ‘মার্স অরবিটার মিশন’ (মম)-এর পর এই ‘সূর্যের দেশে’ যাওয়াটাই হতে চলেছে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাকাশ অভিযান। যার খরচ প্রায় চারশো কোটি টাকা। গত ১৬ ডিসেম্বর লোকসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে ভারতের এই সৌর অভিযানের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ। তিনি জানান, আগামী বছর চাঁদের মাটিতে নামবে ভারতের ‘চন্দ্রায়ন-টু’। আর ২০১৯-এর শেষাশেষি ‘সূর্যের দেশে’র উদ্দেশে রওনা হবে ভারতের সর্বাধুনিক উপগ্রহ ‘আদিত্য-এল ওয়ান’। যা সূর্যের অত কাছাকাছি পৌঁছে যেতে সময় নেবে মেরেকেটে এক মাস বা তার সামান্য কিছু বেশি। আগামী বছরে চাঁদের মাটিতে নামতে পৃথিবী থেকে যতটা দূরে যাবে ‘চন্দ্রায়ন-টু’, আজ থেকে তিন বছর পর তার চেয়ে চার গুণ বেশি দুরত্ব পাড়ি দিয়ে আমরা পৌঁছে যাব ‘সূর্যের দেশে’। যেখান থেকে গনগনে সূর্যের একেবারে বাইরের দু’টি আগুন উগরোনো স্তর- ‘করোনা’ আর ‘ক্রোমোস্ফিয়ার’কে খুব ভাল ভাবে, অনেকটা কাছ থেকে দেখা যায়। যাতে তার ‘আগুনের রেখা’গুলোকে চিনতে পারা যায়, পড়তে পারা যায়! ভারতের এই দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাকাশ অভিযানে ইসরোর সহযোগী সংস্থা হিসেবে রয়েছে বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (আইআইএ), পুণের ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (আয়ুকা), আমদাবাদের ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি (পিআরএল), মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ (টিআইএফআর) এবং পুণে ও কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইআইএসইআর বা ‘আইসার’)।

‘আদিত্য-এল ওয়ান’ উপগ্রহের নকশা। ছবি-ইসরো।

জ্বালানি-সহ প্রায় সাতশো কিলোগ্রাম ওজনের ওই সর্বাধুনিক উপগ্রহ ‘আদিত্য-এল ওয়ান’-এ থাকছে মোট সাতটি ‘সায়েন্স পে-লোড’ বা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষার অত্যাধুনিক যন্ত্র। এই প্রথম যার সবক’টিই তৈরি হয়েছে এ দেশে আর একেবারেই ভারতীয় প্রযুক্তিতে।

সেগুলি কী কী?

সূর্যের সবচেয়ে বাইরের স্তর ‘করোনা’ নিয়ে গবেষকদলের প্রধান জ্যোতির্বিজ্ঞানী দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ‘‘করোনার ওপর নজর রাখার জন্য থাকবে একটি শক্তিশালী ‘করোনাগ্রাফ’। পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় যে ভাবে পুরোপুরি মুখ ঢাকা পড়ে যায় সূর্যের, তেমনই কৃত্রিম ভাবে ওই ‘করোনাগ্রাফ’ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে সূর্যের মুখ। এটি বানাচ্ছে বেঙ্গালুরুর আইআইএ। থাকবে সূর্যের দ্বিতীয় বহিস্তর ‘ক্রোমোস্ফিয়ার’-এর ওপর নজর রাখার যন্ত্র ‘নিয়ার আলট্রা-ভায়োলেট ইমেজার’। যেটি বানাচ্ছে পুণের আয়ুকা। থাকবে দু’টি কণাসন্ধানী যন্ত্র বা ‘পার্টিকল ডিটেক্টর’। যার একটি বানাচ্ছে ইসরো। অন্যটি- পিআরএল। থাকবে সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্র মাপার জন্য ইসরোর তৈরি শক্তিশালী ‘ম্যাগনেটোমিটার’। আর থাকছে সৌরঝড়ে বেরিয়ে আসা এক্স-রশ্মি মাপার জন্য দু’টি ‘এক্স-রে স্পেকট্রোগ্রাফ’। ‘হেলিওস’ আর ‘সোলেক্স’। যার একটি বানাচ্ছে ইসরো। অন্যটি-আমদাবাদের ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি।’’

ভারতের এই প্রথম সৌর অভিযানের মূল লক্ষ্যগুলো কী কী?

জ্যোতির্বিজ্ঞানী দিব্যেন্দু নন্দী। জ্যোতির্বিজ্ঞানী দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।

ওই অভিযানে ‘সোলার আলট্রা-ভায়োলেট ইমেজিং টেলিস্কোপ’ (বা ‘সুট’- যে যন্ত্রটি বানানো হচ্ছে ‘আয়ুকা’য়) সংক্রান্ত গবেষকদলের প্রধান জ্যোতির্বিজ্ঞানী দিব্যেন্দু নন্দী জানাচ্ছেন, ‘‘প্রথমত, সৌরঝড়ের কারণ ও তার গতিপথ বোঝার চেষ্টা করা হবে। তা যাতে আগেভাগে জানা-বোঝা যায় আর তার ফলে যাতে এই গ্রহের টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও নিখুঁত ও নির্ঝঞ্ঝাট করে তোলা যায়, তার চেষ্টা হবে। দ্বিতীয়ত, অত গরম, জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া সূর্যের পৃষ্ঠদেশের তাপমাত্রা যেখানে পাঁচ হাজার সাতশো ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেখানে তার একেবারে বাইরের দু’টি স্তর- করোনা ও ক্রোমোস্ফিয়ারের তাপমাত্রা কেন দশ হাজার কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেই ধাঁধার উত্তর খোঁজার চেষ্টা চালানো হবে। তৃতীয়ত, সৌরঝড় কোন পথে পৃথিবীতে আসছে, কেন অন্য পথে না গিয়ে ওই পথ ধরেই সৌরঝড় আসছে আমাদের গ্রহে, তা জানার চেষ্টা হবে। চতুর্থত, সূর্য থেকে আসা যে ‘আল্ট্রা-ভায়োলেট রে’ বা অতি-বেগুনি রশ্মি আমাদের জলবায়ুর পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর, তা সূর্যের ঠিক কোন জায়গা থেকে, কতটা পরিমাণে তৈরি হচ্ছে, তা জানারও চেষ্টা চালানো হবে এই সৌর অভিযানে।’’

বিজ্ঞানীদের আশা, কম করে পাঁচ বছর সক্রিয় থাকবে ভারতের ওই সর্বাধুনিক উপগ্রহ ‘আদিত্য-এল ওয়ান’। তবে সেই আয়ু বেড়ে দশ বছরও হয়ে যেতে পারে। তাঁদের এই আশার কারণ, নাসা ও ইএসএ-র সৌর অভিযানে পাঠানো উপগ্রহ ‘সোহো’র আয়ু। ’৯৫ সালে পাঠানো ওই উপগ্রহটি এখনও সূর্যের অত কাছে ‘ল্যাগরাঞ্জিয়ান পয়েন্ট’-এ একই রকম সক্রিয় রয়েছে। ছবি তুলে নিয়মিত পাঠিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীতে। চালিয়ে যাচ্ছে গবেষণা।

India sun solar mission first
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy