Advertisement
E-Paper

শরীরে ঢুকে ক্যানসার কোষে সরাসরি ‘গোলা’ ছুড়বে এ বার ব্যাকটেরিয়া!

ওষুধ খেতে হবে না। পথ্যও নয়। কোনও রেডিও-থেরাপি বা কেমো-থেরাপি নয়। বিন্দুমাত্র আশঙ্কা নেই পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ারও। এ বার শরীরে ঢুকে টিউমারের ক্যানসার-আক্রান্ত কোষগুলিতে সরাসরি ‘গোলা’ ছুড়বে ব্যাকটেরিয়া! যারা রক্তস্রোতের মধ্যে দিয়েই ছুটবে। আর কোনও ভুলচুক না করে সোজা গিয়ে গোলা ছুড়বে ‘টার্গেটে’, অব্যর্থ।

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৬ ১৪:৩৪

ওষুধ খেতে হবে না। পথ্যও নয়। কোনও রেডিও-থেরাপি বা কেমো-থেরাপি নয়। বিন্দুমাত্র আশঙ্কা নেই পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ারও। এ বার শরীরে ঢুকে টিউমারের ক্যানসার-আক্রান্ত কোষগুলিতে সরাসরি ‘গোলা’ ছুড়বে ব্যাকটেরিয়া! যারা রক্তস্রোতের মধ্যে দিয়েই ছুটবে। আর কোনও ভুলচুক না করে সোজা গিয়ে গোলা ছুড়বে ‘টার্গেটে’, অব্যর্থ।

ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে একেবারে অভিনব এই পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছে যে গবেষকদল, তার নেতৃত্বে রয়েছেন ‘ইউনিভার্সিতে দে মন্ট্রিয়ল’ (মন্ট্রিয়ল বিশ্ববিদ্যালয়)-এর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা অধ্যাপক সিলভেন মার্টেল। গবেষকদলে রয়েছেন দুই অনাবাসী ভারতীয় ব্যাকটেরিয়া বিশেষজ্ঞ মাহমুদ মহম্মদি ও সমীরা তাহেরখানি। জুলাইয়ে বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার-ন্যানোটেকনোলজি’তে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটির শিরোনাম- ‘ম্যাগনেটো-অ্যারোট্যাকটিক ব্যাকটেরিয়া ডেলিভার ড্রাগ-কনটেনিং ন্যানো-লিপোজোমস্‌ টু টিউমার হাইপোক্সিক রিজিওনস্‌’।

মূল গবেষক মার্টেল তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, ‘‘ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি। শীঘ্রই শুরু হবে ‘হিউম্যান ট্রায়াল’ (মানুষের ওপর পরীক্ষা)। ইঁদুরের শরীরে আমরা যে ন্যানো-রোবটিক এজেন্ট ঢুকিয়েছিলাম, তা বানানো হয়েছিল এমন ১০ কোটি ব্যাকটেরিয়া দিয়ে, যাদের ক্ষণপদ রয়েছে। ফলে, রক্তের মধ্যে দিয়ে তারা নিজের মতো করে চলতে পারে। রক্তস্রোতে তাদের ভেসে যেতে বা ভেসে বেড়াতে হয় না।’’

কিন্তু শরীরে ঢোকার পর কী ভাবে ওই ন্যানো-রোবট সেই টিউমারে পৌঁছবে, যে টিউমারের কোষ, কলাগুলির দ্রুত ও অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ক্যানসার হয়?


ক্যানসারের ঘাঁটি ‘হাইপোক্সিক জোন’ (লাল রং)।


ক্যানসারের ঘাঁটি ‘হাইপোক্সিক জোন’ (হলুদ রং) চিনে ফেলেছে ন্যানো-রোবট।

অন্যতম গবেষক মন্ট্রিয়ল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাকটেরিয়া বিশেষজ্ঞ অনাবাসী ভারতীয় সমীরা তাহেরখানি ই-মেলে পাঠানো প্রশ্নের জবাবে আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘এটা বুঝতে হলে টিউমারের ক্যানসার-আক্রান্ত কোষ, কলাগুলির কোন এলাকাটি সবচেয়ে বিপজ্জনক, সেটা জানতে হবে। জানতে হবে, ক্যানসার হওয়ার সময় বা তার কয়েক মুহূর্ত আগে ওই সবচেয়ে বিপজ্জনক এলাকাটিতে কী কী পরিবর্তন হয়। যে কোনও টিউমার কোষের ওই সবচেয়ে বিপজ্জনক এলাকাটির নাম- ‘হাইপোক্সিক জোন’। ওই এলাকাটিতেই ক্যানসারের ‘চাষবাস’ শুরু হয় আর তার বাড়-বৃদ্ধি হয়। রেডিও-থেরাপি তো বটেই, এমনকী, কেমো-থেরাপি দিয়েও সহজে ওই বিপজ্জনক ‘জোন’-এর বন্ধ দরজার ‘তালা’ খোলা যায় না। এখনও পর্যন্ত আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের হাতে ওই ‘তালা’ খোলার কোনও চাবিকাঠি নেই। এ বার বুঝে নেওয়া যাক, ক্যানসার হলে বা তার সামান্য কিছু আগে ওই ‘জোন’-এ কী কী গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়। টিউমারের যে কোষ, কলাগুলি দ্রুত অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে, চার পাশে ফুলে-ফেঁপে উঠতে শুরু করে, তারা রক্ত থেকে ওই সময় প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন টেনে নিতে থাকে। একটা কোষকে বাঁচার জন্য রক্ত থেকে যতটা অক্সিজেন টেনে নেওয়ার দরকার, ‘হাইপোক্সিক জোন’-এর কোষ ও কলাগুলি তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি পরিমাণে অক্সিজেন টানতে থাকে রক্ত থেকে। শরীরে ঢোকানো ন্যানো-রোবটগুলি খুব নিখুঁত ভাবে শুধুই টিউমারগুলিতে পৌঁছয় না, টিউমারের ‘হাইপোক্সিক জোন’-টিকে ঠিকঠাক ভাবে চিনে ফেলে। নিখুঁত ভাবে চিনতে পারে ওই ‘হাইপোক্সিক জোন’-এর সেই কোষ, কলাগুলিকে যারা রক্ত থেকে দ্রুত ও অস্বাভাবিক হারে অক্সিজেন টেনে নিতে থাকে, আর ক্যানসারে আক্রান্ত কোষগুলিকে চার পাশে অস্বাভাবিক ভাবে ফোলাতে-ফাঁপাতে থাকে।’’

কী ভাবে সরাসরি ‘গোলা’ ছুড়বে ন্যানো-রোবট: দেখুন ভিডিও।

ক্যানসারে আক্রান্ত কোষগুলির ওপর গোলা ছোড়ার জন্য কী ভাবে ওষুধটাকে ঢোকানো হবে শরীরে?


‘টার্গেটে’ সরাসরি ওষুধ ঢালছে ন্যানো-রোবট (কালচে বাদামি রডের মতো)।

সমীরার ব্যাখ্যায়, ‘‘ন্যানো-রোবটগুলি অনেকটা যেন মিসাইল। পরমাণু অস্ত্রবাহী মিসাইলের ওপর যেমন পরমাণু অস্ত্র (নিউক্লিয়ার ওয়্যারহেড) বসানো থাকে, তেমনই ওযুধ বসানো থাকে ওই ন্যানো-রোবটগুলির মাথায়। ‘হাইপোক্সিক জোন’-এ পৌঁছে ন্যানো-রোবটগুলি সেটাই ঠিকঠাক ভাবে ঢেলে দেয় ক্যানসারের মূল চক্রী কোষ, কলাগুলির ওপর। তাতেই কেল্লা ফতে হয়ে যায়। কেমো-থেরাপি বা রেডিও-থেরাপি করে ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে শরীরের অন্যান্য অংশ বা ক্যানসার-আক্রান্ত কোষ, কলাগুলি ছাড়া ওই অংশের অন্যান্য কোষ, কলা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেরও প্রচুর ক্ষতি হয়। কিন্তু একেবারে সরাসরি সেই ক্যানসার ছড়ানোর ঘাঁটিতে গিয়েই গোলাটা (ওষুধ) ছুড়ে আসে বলে এই ন্যানো-রোবটের মাধ্যমে চিকিৎসায় পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার কোনও আশঙ্কাই থাকে না। লক্ষ্যটাও হয় একেবারেই অব্যর্থ, অভ্রান্ত।’’


অনাবাসী ভারতীয় ব্যাকটেরিয়া বিশেষজ্ঞ সমীরা তাহেরখানি।

আরও পড়ুন- বাংলার হলুদ দিয়েই অ্যালঝেইমার’স-বিজয়? বিশ্বকে তাক বাঙালির

কিন্তু শরীরের মধ্যে ওই ব্যাকটেরিয়া দিয়ে বানানো ন্যানো-রোবটটিকে চালানো হবে কী ভাবে?


অনাবাসী ভারতীয় ব্যাকটেরিয়া বিশেষজ্ঞ মাহমুদ মহম্মদি

মন্ট্রিয়ল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সহযোগী গবেষক মাহমুদ মহম্মদির কথায়, ‘‘শরীরের বাইরে চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে আমরা দেখেছি, ওই দশ কোটি ব্যাকটেরিয়া দিয়ে বানানো ন্যানো-রোবটটিকে সেই ক্ষেত্রের প্রভাবে চালানো যায়, চিকিৎসক যেমনটি চাইছেন, টিক তেমন ভাবেই। এই ভাবেই শরীরের মধ্যে ‘হাইপোক্সিক জোন’-এর কোষ, কলাগুলির ওপর গোলা ছুড়ে আসতে পারছে ন্যানো-রোবট।’’

ছবি সৌজন্যে: মন্ট্রিয়ল ন্যানো-রোবোটিক্স ল্যাবরেটরি, মন্ট্রিয়ল বিশ্ববিদ্যালয়।

Nanorobots Cancerous Cells Tumors Drugs Sylvain Martel
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy